শুভমান গিল যেন সময়ের ধারাকে নিজের ব্যাটে বন্দি করে ফেলেছেন। চার-ছয়ের ঝংকারে তিনি যেন ঘোষণা দিচ্ছেন—এটা তার সময়, তার রাজত্ব। ২০২৫ সালের শুরুটা তার জন্য স্বপ্নের মতো কাটছে। দুবাইয়ের উজ্জ্বল আলোয় বাংলাদেশ বোলিং লাইনআপকে বিধ্বস্ত এক শতরান করলেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মঞ্চে। গিলের প্রতাপের শুরুটা অবশ্য আরও আগেই।
এই ফেব্রুয়ারি মাসেই চার ম্যাচে ৩৬০ রান, ব্যাটিং গড় ১২০! বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যানের মর্যাদা, ম্যাচসেরার পুরস্কার—সবই যেন তার অবধারিত প্রাপ্তি। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়—এগিয়ে যেতে পারলে তিনি কি হতে পারবেন বিরাট কোহলি কিংবা শচীন টেন্ডুলকারের উত্তরসূরি?
ভারতীয় ক্রিকেটে মহান ব্যাটসম্যানদের উত্তরাধিকার এক বিশাল বোঝা। শচীন টেনেছেন দুই যুগ ধরে, কোহলি তার ছায়ায় নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আর এখন গিলের ব্যাটে যেন বাজছে সেই একই রাগ, সেই একই ধারাবাহিকতা।
কিন্তু, পরিসংখ্যান কখনোই কিংবদন্তি বানায় না, কিংবদন্তি তৈরি হয় মুহূর্তের মহিমায়। শচীনের ছিল বিশ্বকাপ ২০১১, কোহলির ছিল ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোহালির সেই রাত। কিংবা, ২০২২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ইনিংস? শুভমানের কাছে কী সেই ডিফাইনিং মোমেন্ট আছে?
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির রঙ্গমঞ্চেই কি আসবে গিলের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ? দুবাইয়ের উইকেটে তিনি এখন পর্যন্ত যা দেখিয়েছেন, তাতে প্রতিপক্ষরা ভয় পেতেই পারে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, টুর্নামেন্ট জেতানো ইনিংস না খেললে ব্যাটসম্যানদের গল্প অপূর্ণই থেকে যায়। শচীন বা কোহলির মতো নামের পাশে ‘গ্রেটেস্ট’ তকমাটা জুড়ে দেওয়ার জন্য শুভমানকে পেরোতে হবে আরও কিছু কঠিন পরীক্ষার পাহাড়।
কোহলি একসময় নিজেকে বলতেন ‘চেজ মাস্টার’, ম্যাচ জেতানোর তার অদম্য খিদে তাঁকে সর্বকালের সেরাদের কাতারে বসিয়েছে। শুভমানের মধ্যেও সেই খিদে কি আছে? ব্যাটিং সৌন্দর্যে, টাইমিংয়ে, শটমেকিংয়ে তিনি অবিশ্বাস্য রকমের শুদ্ধ, কিন্তু শচীন-কোহলির জায়গায় পৌঁছাতে হলে তাঁকে হতে হবে ভারতের ‘ম্যাচ উইনার’, শুধুমাত্র ‘রান মেশিন’ নয়।
তবে ২৫ বছর বয়সী শুভমানের হাতে এখনো সময় আছে। তার ব্যাট কথা বলছে, রান পাহাড় গড়ছে, নতুন মহাকাব্যের সূচনা হয়ে গেছে। এবার দেখার পালা, তিনি কি পারবেন কোহলির মতো শতকের পর শতক হাঁকিয়ে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নতুন দেবতা হয়ে উঠতে? নাকি তিনিও থেকে যাবেন আরও এক ‘প্রতিভাবান’ ব্যাটসম্যানের গল্প হয়ে?