যুগে যুগে সেরাদের সেরা ব্যাটার বিশ্বক্রিকেটকে উপহার দিয়ে আসছে ভারত। সুনীল গাভাস্কার থেকে শচীন টেন্ডুলকার কিংবা বিরাট কোহলি, বিশ্ব কাঁপানো ব্যাটার সবসময়ই তৈরি করেছে ব্যাটারদের পূন্যভূমি খ্যাত ভারত। শুভমান গিল আর যশস্বী জয়সওয়াল আগাচ্ছেন সেই পথেই। দারুণ প্রতিশ্রুতিশীল এই দুই তরুণ তুর্কির মধ্যেই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ দেখে টিম ইন্ডিয়া।
দ্বৈরথ কিন্তু একটা শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই তাদের মধ্যে। দুইজনই ওপেনার, চার-ছক্কার ডামাডোলের উৎসব ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেরও (আইপিএল) ভবিষ্যৎ কান্ডারী তারা। তবে দুইজনের মধ্যে কে বেশি এগিয়ে নেক্সট জেনারেশনের ওপেনার বস হওয়ার দৌড়ে! চলুন আইপিএলের পারফরম্যান্স থেকে পরিসংখ্যান আর বিশ্লেষণের আলোকে যাচাই করা যাক।
উল্লেখ্য এই বিশ্লেষণে প্রেশার সিচুয়েশনকে সর্বনিন্ম (২০-৪০) অর্থাৎ কম্ফোর্ট জোন থেকে ‘ডু অর ডাই’ (৯০-১০০) অবধি মোট ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ১০০ শতাংশের মধ্যেই স্ট্রাইকরেট, বাউন্ডারি পার্সেন্টেজ এমনকি হরহামেশাই এড়িয়ে যাওউয়া স্ট্রাইক রোটেশন পার্সেন্টেজও যুক্ত করা হয়েছে।
স্টার্ন্ডাড পারফরম্যান্স ইন্ডেক্সে এগিয়ে আছেন জয়সওয়াল। গিলের ৬১.৪২ শতাংশের বিপরীতে তার স্কোর ৬৩.৪২। এমনকি প্রেশারের মুহুর্তেও এগিয়ে জয়সওয়াল। চাপের মুখে জয়সওয়ালের ইনডেক্স যেখানে ৬৮.২৪, সেখানে গিল বেশ খানিকটা পিছিয়ে, ৬৪.৮৬ শতাংশ মাত্র। সুতরাং বলা চলে, চাপের মুখে জয়সওয়ালই বেশি ভালো।
খেলার ধরনের তুলনা করলে দুইজনের ভিন্নধর্মী আপ্রোচের ব্যাপরটা ফুটে উঠে। গিল যেখানে ধরে খেলে ইনিংস বিল্ড আপে সহায়তা করতে পছন্দ করেন, যশস্বী যেন তার ঠিক উল্টো। মারকাটারি, বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দিতেই যেন সিদ্ধহস্ত তিনি। গিলের ১৩৫ স্ট্রাইকরেটের বিপরীতে জয়সওয়ালের স্ট্রাইকরেটটাও অনেক এগিয়ে, ১৫০ এরও উপরে। তবে বাউন্ডারিতে এগিয়ে থাকা যশস্বী আবার ডট বল খেলে ফেলেন বেশি।
গিল যেখানে মাত্র ৩৩.৪ শতাংশ ডট খেলেন, সেখানে জয়সওয়ালের ডটের শতাংশ ৪০.৪ শতাংশ। স্ট্রাইক রোটেশনেও তাই পিছিয়ে জয়সওয়াল। সুতরাং বাউন্ডারি পার্সেন্টেজে এগিয়ে থাকলেও রান তোলার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে মক্ষম অস্ত্র স্ট্রাইক রোটেশনে পিছিয়ে পড়া জয়সওয়াল এখানে একটু ব্যাকফুটে থাকবেন। গিল প্রায় ৫০ শতাংশ বলই স্ট্রাইক রোটেশনে কাজে লাগাতে পেরে ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের দিক থেকে এগিয়ে যান এখানে।
যদি ইনিংস আর পাওয়ারপ্লের হিসেব আসে তবে গিল থেকে বেশ এগিয়ে জয়সওয়াল। পাওয়ার প্লেতে গিলের স্ট্রাইকরেট যেখানে মাত্র ১২৮.৭, সেখানে জয়সওয়ালের ১৫২.৬। দুই ইনিংসেই সমান তালে দেড়শোর উপরে স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেন তিনি। অপরদিকে গিলের স্ট্রাইকরেট তুলনামূলক বেশ কম। সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট প্রথম ইনিংসে ১৪৪.৮২। পাওয়ার হিটিংয়ে বেশ এগিয়েই থাকছেন তাই যশস্বী। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আর্দশ ওপেনার যাকে বলে।
কম্ফোর্ট জোন বা এক্সট্রিম চাপের মুহূর্ত সবখানেই এগিয়ে জয়সওয়াল। প্রেশারের সময়ে দ্রুত বাউন্ডারি তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে কাবু করায় দিক থেকে গিল থেকে বেশ এগিয়ে জয়সওয়াল। কিন্তু স্ট্রাইক রোটেশনে আবার এগিয়ে থাকা গিল, ডট বলের চাপটা কমিয়ে নিতে পারেন।
গিলের ধারাবাহিকতা বলে ব্যাটার হিসেবে তিনিই বেশি স্ট্যাবল। অপরদিকে শুরুতেই আগ্রাসী সূচনা এনে দিতে পারা যশস্বী আবার ওভারঅল বিবেচনায় টি-টোয়েন্টিতে বেশি মানানসই। চাপের মুখে ভালো করা, দুর্দান্ত স্ট্রাইকরেট, ম্যাচের উত্তাপ অনুসারে পারফর্ম করার দিক থেকে এগিয়ে থাকায় তাই আগামীর মিস্টার আইপিএল ওপেনার হিসেবে আপাতত এগিয়ে আছেন জয়সওয়াল। তবে ধারাবাহিকতা ও স্ট্রাইক রোটেশনে আরও দক্ষ হতে হবে তাকে। কিন্তু প্রেশার নেওয়ার ক্ষমতা আর আগ্রাসনটাই তাকে এখন অবধি বেশ এগিয়ে রেখেছে। বাকিটা তোলা রইলো ভবিষ্যতের খাতায়।