দ্য বিগ শো

সম্প্রতি রিভার্স সুইপ আর সুইচ হিটে বিশেষভাবে নজর কেঁড়েছেন সবার। রিভার্স স্যুইপে অনায়াসেই হাঁকাতে পারেন ছক্কা! আর পেসারদের বিপক্ষে সুইচ হিটে বাউন্ডারি আদায় করতেও যে পারদর্শী তিনি। সামনে বোলার কে সেটি তিনি কখনোই তোয়াক্কা করেন না! বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করাটাই তাঁর মূল লক্ষ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আন্ডাররেটেড ৩৬০ ডিগ্রি ক্রিকেটার তিনি সে দ্বিধা ছাড়াই বলা যায়।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আগ্রাসী ব্যাটসম্যান বলেন কিংবা ফিনিশার যে কয়েক নাম আপনার মাথায় আসবে তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে একজন হলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মাইকেল বেভান, মাইক হাসিদের পর অজিদের ফিনিশিংয়ে গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন তিনি। সেই দায়িত্বটা রঙিন জার্সিতে বেশ ভালোভাবেই পালন করছেন তিনি।

সম্প্রতি রিভার্স সুইপ আর সুইচ হিটে বিশেষভাবে নজর কেঁড়েছেন সবার। রিভার্স স্যুইপে অনায়াসেই হাঁকাতে পারেন ছক্কা! আর পেসারদের বিপক্ষে স্যুইচ হিটে বাউন্ডারি আদায় করতেও যে পারদর্শী তিনি। সামনে বোলার কে সেটি তিনি কখনোই তোয়াক্কা করেন না! বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করাটাই তাঁর মূল লক্ষ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আন্ডাররেটেড ৩৬০ ডিগ্রি ক্রিকেটার তিনি সে দ্বিধা ছাড়াই বলা যায়।

অক্টোবর ২০১৪, পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে আবুধাবিতে মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া। ২৩১ রানের টার্গেটে ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার মাত্র ২ রান, হাতেও ২ উইকেট। বল হাতে পার্ট টাইমার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। পাকিস্তান সহজ জয় পাবে এমনটাই ছিলো ম্যাচের অবস্থা! কিন্তু সবার প্রত্যাশা ছাপিয়ে ডাবল উইকেট মেইডেন দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ১ রানের জয় এনে দেন ম্যাক্সওয়েল! ক্রিকেট ইতিহাসে ক্রিস প্রিঙ্গলের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে শেষ ওভারে ২ রান ডিফেন্ড করেন ম্যাক্সি!

আগ্রাসী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ম্যাক্সি ওই ম্যাচে বল হাতে বনে গিয়েছিলেন হিরো! অবশ্য ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিলো বোলার হিসেবেই! হ্যাঁ, একজন পেসার হিসেবেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে শুরু। এরপর কোচের পরামর্শে বনে যান স্পিনার। সাথে ব্যাট হাতে ছক্কা হাঁকানোর জন্য ছিলেন পারদর্শী। তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণেই অজি মিডিয়ার কাছে আখ্যা পেয়েছিলেন ‘বিগ শো’ হিসেবে।

অবশ্য এই নামটা মোটেও পছন্দ নয় ম্যাক্সির। বরং ম্যাক্সি হিসেবে ডাকলেই তিনি বেশি খুশি হন। অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুতে বল হাতে ছিলেন একজন পার্ট টাইমার। সেখান থেকে এখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে!

২০০৯ সালে ভিক্টোরিয়ার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে পদচারণা। এরপর ২০১০ সালে হংকং সুপার সিক্সে খেলতে গিয়ে জেতেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার। এই টুর্নামেন্টের পরই তিনি লাইমলাইটে আসেন! এরপর টানা ২ মৌসুম ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ দুর্দান্ত পারফর্ম করেন। সবচেয়ে নজর কাঁড়া ছিলো ম্যাক্সির পাওয়ার হিটিং অ্যাবিলিটি। যার কারণে নির্বাচকদের চোখে ধরা পড়েন সহজেই।

২০১২ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক। ওই বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সুযোগ পান তিনি। অভিষিক্ত হন টি-টোয়েন্টিতে! পরের বছর ২০১৩ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় ম্যাক্সির। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের মত টেস্টে সেভাবে নিজেকে মেলে ধর‍তে পারেননি তিনি। তাই সাদা পোশাকে এখন পর্যন্ত একদমই অনিয়মিত মুখ। এরপর ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সুযোগ পান তিনি। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২১০ স্ট্রাইক রেটে ১৪৭ রান করে জায়গা পান ‘টিম অব দ্যা টুর্নামেন্টে’!

২০১৫ বিশ্বকাপেও দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। সেবার ১৮২ স্ট্রাইক রেটে ৬৫ গড়ে ৩২৪ রান করেন ম্যাক্সওয়েল! সেবার বিশ্বকাপও ঘরে তোলে অজিরা। ওই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্রুততম এবং বিশ্বে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডে নাম লেখান তিনি। এরপর ২০১৬ সালে প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে নেমে গড়েন আরেক সেঞ্চুরির রেকর্ড! প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে অভিষেকে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচে মাত্র ৬৫ বলে অপরাজিত ১৪৫ রানের তাণ্ডবময় এক ইনিংস খেলেন তিনি!

পরবর্তীতে ২০১৭ সালে শেন ওয়াটসনের পর দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি। তিনি একমাত্র অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে একাধিক সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১৯ বিশ্বকাপেও ছিলেন দলের নিয়মিত এক মুখ!

ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের শুরুতে ভিক্টোরিয়ার হয়ে তাসমানিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১৯ বলে ফিফটির রেকর্ড গড়েন! অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে (ওয়ানডে) এখন পর্যন্ত এটি দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটই নয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এই রেকর্ডে নাম আছে ম্যাক্সির। ২০১৩ সালে ভারতের বিপক্ষে ব্যাঙ্গালুরুতে ওয়ানডেতে ১৮ বলে ফিফটি করে যৌথভাবে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন তিনি! টি-টোয়েন্টিতেও এই রেকর্ড করেছেন নিজের নামে! ২০১৪ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৮ বলে ফিফটি করে যৌথভাবে ডেভিড ওয়ার্নারের পাশে নাম লেখান তিনি।

লম্বা সময় ধরে খেলছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। ক্যারিয়ার শুরুতে আইপিএলে সেভাবে ভিত গড়তে পারেননি। দিল্লি, মুম্বাইর হয়ে চড়া দামে বিক্রি হলেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। তবে, ২০১৪ সালে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। ওই মৌসুমে ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্টও নির্বাচিত হন তিনি।

১১৬ ওয়ানডেতে ৩৪ গড় আর ১২৫ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩২৩০ রান! আছে ২ সেঞ্চুরি ও ২২টি ফিফটি। ৭ টেস্টে ১ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৩৩৯ রান! এছাড়া ৭২ টি-টোয়েন্টিতে ৩২ গড়ে করেছেন প্রায় ১৮০০ রান! স্ট্রাইক রেটটা যে ধরাছোঁয়ার বাইরে! ১৫৯ স্ট্রাইক রেটে এই ফরম্যাটে খেলছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বর্তমান সময়ের সেরা ক্রিকেটারদের একজনও বটে! আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বল হাতেও শিকার করেছেন ৯০ উইকেট।

ম্যাক্সওয়েলের ক্যারিয়ারের খুঁত বের করতে যদি বলেন তাহলে বলবো তিনি অধারাবাহিক। অবশ্য পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। গড় যেমন ভালো, স্ট্রাইক রেট তেমনি আকাশছোঁয়া! তবে প্রায়সই তিনি অফ ফর্মে থাকেন। অবশ্য তাঁর দিনে বোলারদের জন্য ২২ গজে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন তিনি। ক্যারিয়ারে এখনো চলতে হবে আরো বেশ খানিকটা সময়। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে হয়তো করে যাবেন আরো কিছু রেকর্ড! আপাতত ‘দ্য ম্যাক্সি শো’ চলতে থাকুক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...