বাজপাখিদের আদিপুরুষ

আশির দশকে দুর্দান্ত ফিল্ডিং দিয়েই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সেসময়ের সেরা ফিল্ডার হিসেবে। এমনকি তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফিল্ডারও তিনি। শৈল্পিক ফিল্ডিং দিয়েই বহু ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন এই ক্যারিবিয়ান দীর্ঘদেহী তারকা।

সর্বকালের সেরা ফিল্ডারের কথা আসলে আপনার মনে সবার প্রথমে যে নামটি আসবে সেটি নিঃসন্দেহে জন্টি রোডস। নব্বইয়ের দশকে স্রেফ ফিল্ডিং দিয়েই বনে গেছেন ক্রিকেট ইতিহাসের এক কিংবদন্তি তারকা। তবে জন্টি রোডস ছাড়া সর্বকালের অন্যতম সেরা ফিল্ডার নিয়ে আলোচনা করলে আসবে ক্যারিবিয়ান তারকা রজার হার্পারের নাম।

আশির দশকে দুর্দান্ত ফিল্ডিং দিয়েই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সেসময়ের সেরা ফিল্ডার হিসেবে। এমনকি তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফিল্ডারও তিনি। শৈল্পিক ফিল্ডিং দিয়েই বহু ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন এই ক্যারিবিয়ান দীর্ঘদেহী তারকা।

১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি গায়ে অভিষেক। ব্যাটার কিংবা বোলার হিসেবে খুব বেশি প্রতিভাবান ছিলেন এমন নয়। কিন্তু চোখ জুড়ানো ফিল্ডিং দিয়েই পেয়েছিলেন তারকাখ্যাতি। তবে বোলার হিসেবেও আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরাদের তালিকায়।

মাত্র ২৫ টেস্ট খেললেও সাদা পোশাকে গড়ের হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা বোলার তিনি। আল ভ্যালেন্টাইন, সনি রামদিন, ল্যান্স গিবসদের চেয়েও গড়ের দিক থেকে এগিয়ে হার্পার। যদিও ব্যাটিং কিংবা বোলিং দিয়ে তিনি কখনোই সেভাবে আলোচনায় ছিলেন না। ফিল্ডার হিসেবে নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন সফলতার শীর্ষে।

  • রান আউট

এমসিসির দুইশো বছর উপলক্ষ্যে লর্ডসে এক ম্যাচে খেলেন হার্পার। সেখানে শুরুতেই দুর্দান্ত এক ক্যাচে নিজ দেশের সতীর্থ ক্রিকেটার গর্ডন গ্রিজকে ফেরান তিনি। হার্পার তখন গ্রাহাম গুচকে বল করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গুচকে স্টাম্প বরাবর বল ডেলিভারি করলেন হার্পার। স্টেপ আউট করে সজোরে ব্যাট চালান গুচ। কিন্তু বল গড়িয়ে নন স্ট্রাইক প্রান্তে দ্রুতগতিতে আসতেই স্টাম্প ভাঙার আগে সেটিকে বাজ পাখির মতো ঝাপিয়ে পড়ে লুফে নিয়ে আবার স্ট্রাইক প্রান্তে থ্রো করে স্টাম্প ভেঙে দেন হার্পার!

গুচ নিজেও যেনো বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। হার্পারের বুলেট গতির থ্রোয়ে অবিশ্বাস্য রান আউটে ফিরেন গুচ! ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি পান সুনিল গাভাস্কার। এটি ছিলো লর্ডসে গাভাস্কারের একমাত্র সেঞ্চুরি।

  • দ্য ক্যাচ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন অস্ট্রেলিয়া সফরে। এক টেস্টের শেষ দিনে ৪০০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৫৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে অজিরা তখন বিপাকে। ওই ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ফিল্ডিং করছিলেন হার্পার।

কার্টলি আম্ব্রোস বোলিংয়ে এসে লেগ স্টাম্পের উপর বল করলেন। ডিন জোন্স লেগ সাইডে ফ্লিক করলেন, হার্পার তখন অপ্রস্তুত! দেরীতে হলেও রঙ সাইডে (বাম) ঝাপিয়ে পড়ে লুফে নেন দুর্দান্ত এক ক্যাচ! সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ও জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার বিল লরি এই ক্যাচকে টেস্ট ইতিহাসে তার দেখা অন্যতম সেরা ক্যাচ হিসেবে আখ্যা দেন!

  • বোলিং

১৯৯৬ বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে কেনিয়ার বিপক্ষে ১০ ওভারে ৪ মেইডেনসহ মাত্র ১৫ রানের বিনিময়ে শিকার করেন ৩ উইকেট! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ১০ ওভারে ৪৭ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন তিনি। হার্পারের এই পারফরম্যান্সকে তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স হিসেবেও ধরা হয়। হার্পারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকে দেয় ক্যারিবীয়রা। তবে পরবর্তীতে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিদায় নেয় ক্যারিবীয়রা।

২৫ টেস্টে মাত্র ৪৬ উইকেট নিলেও টেস্টে তার ইকোনমি রেট মাত্র ২.১৪। এছাড়া তাঁর বোলিং গড় মাত্র ২৮.০৯ যেখানে সনি রামদিনের ২৮.৯৮, ল্যান্স গিবসের ২৯.০৯, আলফ ভ্যালেন্টাইন উইকেট পেয়েছেন ৩০.৩২ গড়ে। ২৫ তার বেশি উইকেট নেওয়া ক্যারিবীয় বোলারদের মধ্যে তিনি সেরা গড়ধারী।

ব্রিলিয়ান্ট ফিল্ডিং, ইকোনমিক বোলিং আর লোয়ার অর্ডারে কিছুটা আগ্রাসী ব্যাটিং – সব মিলিয়ে হার্পার ছিলেন অসাধারণ! যদিও টেস্টে ছিলেন অনিয়মিত এক মুখ। তবে ওয়ানডেতে খেলেছেন একশোর বেশি ম্যাচ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...