৫৩ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংস। পাকিস্তানের বিপক্ষে কোহলির সেই ইনিংসের বয়স প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল। কিন্তু রেশটা যেন এখনো রয়ে গেছে। সমর্থক থেকে শুরু করে ক্রিকেট গ্রেট, প্রায় সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিরাটের সেই ইনিংসে।
সাবেক কোচ, রবি শাস্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, হারিস রউফের করা ইনিংসের ১৯ তম ওভারের শেষ দুই বলে কোহলির দুই ছক্কা তাঁর দেখা এখন পর্যন্ত সেরা ছক্কার মুহূর্ত। রবি শাস্ত্রের পর আরো বহু ক্রিকেট গ্রেট বিরাটের এমন ইনিংসকে রেখেছেন সেরার কাতারে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন অজি কিংবদন্তি ক্রিকেটার গ্রেগ চ্যাপেল। তাঁর মতে, বিরাট কোহলি ইতিহাসেরই সেরা ব্যাটার।
সিডনির মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকায় কোহলির ইনিংসটি নিয়ে একটি কলাম লিখেছেন গ্রেগ চ্যাপেল। সেখানে তিনি কোহলির ইনিংসটিকে ভগবত গীতার সাথে তুলনা করেছেন। ভগবত গীতা হল একটি পবিত্র বই। যা হিন্দুধর্মের মূল ভিত্তি। আক্ষরিক অর্থে ভগবত গীতার অর্থ হল ভগবানের গান। আর গ্রেগ সেটিকে বুঝিয়েই লিখেছেন, কোহলি এমন একটি ইনিংস খেলেছেন যা ভগবানের গানের সবথেকে কাছে যেতে পারেন।
তিনি সেই কলামে আরো যুক্ত করে লিখেছেন, ‘আমার দেখা সর্বকালের সেরা ভারতীয় ব্যাটার কোহলি। কারণ চ্যাম্পিয়নরাই নিজেদের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে পারফর্ম করে। কোহলি সেটাই করেছে। হয়তো ওর কাছাকাছি আসতে পারে একমাত্র টাইগার পতৌদি। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটাই হয়তো সর্বকালের সেরা ইনিংস হতে পারে। কোহলি যেভাবে এই ইনিংসটি খেললো তাতে মনে হলো, একটা বিড়াল যেমন উলের বল নিয়ে খেলা করে, ঠিক সেভাবেই মেলবোর্নের মাটিতে পাকিস্তানের বোলিংকে নিয়ে খেলা করল কোহলি।’
কোহলির ব্যাটিং এ ছাড়া গ্রেগ চ্যাপেল আরো লিখেছেন, ‘গত রোববার রাতে কোহলির ব্যাটিং নিয়ে শুধু একটা কথাই বলা যায়। অনবদ্য, অবিশ্বাস্য। কোনোরকম ছাড় না দিয়ে প্রতিপক্ষকে যেভাবে সে বিধ্বস্ত করে ফেললো, তা আগের যুগের গ্রেটরাও করতে পারত না। আমি জীবনে যত ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছি, তার মধ্যে আর কেউ এই ইনিংসের মতো এতটা নিখুঁত ব্যাটিং করতে পারেনি। পুরো ইনিংসেই ছিল শিল্পের ছোঁয়া। আরো নির্দিষ্ট করে এভাবেও বলা যায়, এই ইনিংসটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে ইতিবাচকভাবে সবার দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে। ব্যাটিংয়ের শৈল্পিকতার দিক থেকে যদি বলি, গত ১৫ বছরে যত ইনিংস দেখেছি তার মধ্যে সেরা। আমি নিজে এই ইনিংসটি খুব উপভোগ করেছি। কোহলি এর মধ্যেই ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার হয়ে গেছে। এটা তাঁর কট্টর সমালোচকরাও স্বীকার করতে বাধ্য হবে।’
ব্যাটিংয়ে বিরাটের স্ট্রোক-প্লের সঙ্গে একজনেরই তুলনা টেনেছেন চ্যাপেল। তিনি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘মডার্ন ক্রিকেটে আমি আরো ব্যাটার দেখেছি যারা একাই ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিতে পারতো। কিন্তু নিখাদ ব্যাটিং দক্ষতা দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোহলি যেভাবে খেলেছে, তা সম্ভবত আর কেউ করেনি। যতদূর মনে করতে পারি, আগের খেলোয়াড়দের মধ্যে শুধু অ্যাডাম গিলক্রিস্টই তার কাছাকাছি থাকতে পারে।’
৭৪ বছর বয়সী গ্রেগ চ্যাপেল ছিলেন সত্তর দশকের অন্যতম সেরা ব্যাটার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন ৮৭ টি টেস্ট ও ৭৪ ওয়ানডে। সব মিলিয়ে প্রায় দশ হাজার রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ১১৯ টি উইকেট। ক্রিকেট নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ বিশ্ব ক্রিকেটে বেশ সমাদৃতই। বিরাট কোহলিকে নিয়ে তাই তাঁর অভিমত উড়ো কোনো বাণী নয়৷ নিখুঁত পর্যবেক্ষণে অকপটে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি। সত্যিকার অর্থেই তো, ৭১ টি সেঞ্চুরি করে ফেলা কোনো ব্যাটারকে গ্রেট তকমা বসাতে সমস্যাটা কোথায়?
আর এই বিরাট কোহলি যে শচীনকে ছাপিয়ে যাবেন না, তারও তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। যেভাবে রানের ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন তাতে তো শচীনকে ছাপিয়ে যাওয়া খুব সম্ভবই। অন্তত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বিবেচনাতে তিনি তো প্রায় শীর্ষেই উঠে গেছেন।
আর কয়েকটা রান করলেই মাহেলা জয়াবর্ধানের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি তিনি নিজের করে নিবেন। তাই গ্রেগ চ্যাপেলের অভিমত একদম নির্জলা সত্য, স্বচ্ছ, সুন্দর। আর এই বিশেষণগুলোর মতোই বিরাট কোহলিও তাঁর অনিন্দ্য সুন্দর ব্যাটিং শৈলী দিয়ে এগিয়ে যাক।