হযরত শাহ পরাণের নগরীতে আজ যেন এক নতুন গল্প লেখা হলো। যে গল্প এতদিন কল্পনার মলাটে বন্দী ছিল, আজ তা বাস্তবের রঙ পেল। বাংলাদেশ ফুটবলের এক চিরচাওয়া, দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা— হামজা চৌধুরী অবশেষে নিজ মাটিতে পা রাখলেন।
সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দুপুরের রোদে কাচের ঘরগুলোয় প্রতিফলিত জনতার উন্মাদনা। হাজারো হৃদয়ের স্পন্দনে একটাই নাম— হামজা! বিমানবন্দরের গেট খুলতেই জনসমুদ্র গর্জে উঠল, যেন এক বিস্মৃত নায়ক ফিরে এল মহাকাব্যের পাতায়। এলোমেলো কোকড়া চুল, পরনে ট্র্যাকসুট, চিরকালীন হাসিমুখে অভিবাদনের জবাব দিচ্ছেন হামজা।
বাফুফের কর্মকর্তারা এগিয়ে এলেন, আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা জানালেন। কিন্তু সে তো নিয়মের খাতিরে, আসল সংবর্ধনা অপেক্ষা করছিল বাইরে— পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো স্বপ্নবাজ তরুণের হাততালিতে, উল্লাসে, এক টুকরো স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার আশায়।
বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসতেই জনতার উচ্ছ্বাস নতুন মাত্রা পেল। কেউ স্লোগান ধরল— “বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!” কেউ বা চিৎকার করল— ‘হামজা ভাই, হামজা ভাই!’ এই হামজা শুধুই বাংলাদেশের, আমাদের একান্ত আপনজন। হুড খুলে দাঁড়ালেন তিনি, হাত নেড়ে অভিবাদনের জবাব দিলেন। যেন ফুটবলের এক নবজাগরণ পুরোহিত দর্শকদের আশীর্বাদ বিলিয়ে দিচ্ছেন।
হামজা পৌছেছেন হবিগঞ্জের মাটিতে। হয়তো অনুভব করছিলেন পূর্বপুরুষদের পদচিহ্ন। হয়তো শুনছিলেন সেই মাটির ভাষা, যা তার শিরায়-শিরায় বইছে, রক্তের গভীরে শেকড় ছড়িয়ে রেখেছে।
কাল তিনি ঢাকা ফিরবেন। সেখানে অপেক্ষা করছে আরেক অধ্যায়। জাতীয় দলের জার্সিতে নামার অপেক্ষায় এক জাতি, এক স্বপ্ন— হয়তো এবার, হয়তো এবারই জাগবে বাংলাদেশ ফুটবল!