হামজা বনাম ছেত্রী, বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথের নতুন আগুন

দীর্ঘ ২৭৩ দিন পর, আবেগঘন এক বিদায়ের রাতে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে চোখের জল ফেলে যিনি বলেছিলেন, ‘এই শেষ!’—ভারতের ফুটবল ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই পুরুষ আবারও ফিরে আসছেন। ২৫ মার্চ যে অপেক্ষায় আছে হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশ। তাঁকে তো ফিরতে হতই।

দীর্ঘ ২৭৩ দিন পর, আবেগঘন এক বিদায়ের রাতে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে চোখের জল ফেলে যিনি বলেছিলেন, ‘এই শেষ!’—ভারতের ফুটবল ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই পুরুষ আবারও ফিরে আসছেন। ২৫ মার্চ যে অপেক্ষায় আছে হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশ। তাঁকে তো ফিরতে হতই।

বাংলাদেশ ফুটবলের চেয়ে অর্জনের মাপকাঠিতে ভারতীয় ফুটবল হয়তো এগিয়েই থাকবে। কিন্তু, দক্ষিণ এশিয়ার মঞ্চে এই দুই দলের দ্বৈরথ আজো আলোচনার রঙ ছড়ায়, উত্তেজনার জন্ম দেয়। সেই মঞ্চে চলে এসেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের হামজা। সেই লড়াইয়ে এবার সামিল হলেন সুনীল ছেত্রীও।

সামনে যখন হামজা, তখন ভারতীয় শিবিরে ছিল একটাই প্রশ্ন, সুনীল ছেত্রীর জায়গা নেবে কে? সেই প্রশ্নে উত্তর আসে একটাই। সুনীল ছেত্রী নিজেই। আজও তিনি হাঁটুর বয়সীদের সাথে পাল্লা দিয়ে খেলেন, তাঁর বিকল্প আর কেই বা হতে পারে।

সুনীলের বিদায়ের পর ভারতীয় ফুটবল যেন পথ হারিয়েছিল। পাঁচ ম্যাচে মাত্র তিন গোল, কোনো জয় নেই (২ হার, ৩ ড্র)। দলে যে একজন যোগ্য স্ট্রাইকারের অভাব চরমভাবে অনুভূত হচ্ছিল, সেটা বুঝতে কোনো ফুটবল বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। অবশেষে, ভারতের প্রধান কোচ মানোলো মার্কেজ ডেকেছেন সেই মানুষটিকে, যার নামে গোলের গল্প লেখা হয়।

২০১৯ থেকে ২০২৪—এই পাঁচ বছরে ভারতের ৪৯% গোল এসেছে শুধু তাঁর পা থেকে! ক্যারিয়ারের ১৯ বছরে এই হার ৩৭%! যে মানুষ আগামী আগস্টে ৪১ ছুঁতে যাচ্ছেন, তাঁর এমন ফিরে আসা অবিশ্বাস্য শোনালেও, সংখ্যা কিন্তু বলছে—এটাই স্বাভাবিক।

এই মৌসুমেই তিনি আইএসএলে সর্বোচ্চ ভারতীয় গোলদাতা — ১২ গোল নিয়ে লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলস্কোরার। তাঁকে আটকানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে অপেক্ষায় আছেন হামজা চৌধুরী, যিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সেরা সব স্ট্রাইকারদের আটকে দিয়ে অভ্যস্ত। লিগ শিরোপাও জিতেছেন। এবার এক ধ্রুপদী লড়াইয়ে দেখার অপেক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল।

গোলসংখ্যা তো আছেই, তার চেয়েও বড় কথা, ছেত্রীর উপস্থিতির প্রভাব। একই সাথে প্রভাব রাখতে প্রস্তুত হামজাও। ভারতীয় ফুটবলে ছেত্রীর ছায়া এতটাই বিস্তৃত যে, এই বয়সেও যখন তিনি মাঠে থাকেন, প্রতিপক্ষ জানে — এখনও তাঁর ছায়ার ভয়ে তাদের রাতের ঘুম উবে যাবে। কিন্তু, সেই ভয়ের পাত্র নন হামজা। তিনি এমন অনেক রণাঙ্গণ সামলে তবেই এসেছেন বাংলাদেশ দলে।

হামজা ফিরছেন, কারণ তিনি দেখছেন, তাঁর দেশ লড়ছে, হোঁচট খাচ্ছে। আর এই হোঁচট সামলানোর দায়িত্ব নিতে তিনি এখনো প্রস্তুত। তাঁর সামনে যখন সুযোগ, তখন কেন বসে থাকবেন? আরেকটা কারণ অবশ্যই খোদ হামজা, কারণ তাঁকে সামলানোর মত আক্রমণ ভাগ কোথায় ভারতের।

এই মুহূর্তে তিনি খেলতে যাচ্ছেন দুটি ম্যাচ—বাংলাদেশের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ এবং মালদ্বীপের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ। এবং ৯৯% নিশ্চিত, তিনি মাঠে নামবেন ভারতের ক্লাসিক নাম্বার নাইন হয়ে। ভারতের এই কৌশল আটকে দিতে প্রস্তুত হামজার বাংলাদেশও।

এই লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসবে কে? উত্তর জানা যাবে ২৫ মার্চ।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link