ফেরারি গতি, সেডানের স্থায়ীত্ব

স্পিন, পেস, থ্রোডাউন—সবকিছুকে সমান তালে সামলে ব্যাটের মাঝখান থেকে বের করলেন দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোকের ফোয়ারা। এরপর বোলিং তো আছে। নেটে এটাই তার প্রতিদিনের রুটিন। এমনি এমনি তিনি হার্দিক পান্ডিয়া নন!

কোনো দলই হার্দিক পান্ডিয়ার মতো একজন ক্রিকেটারকে হাতছাড়া করতে চাইবে না। ব্যাটিংয়ে বিধ্বংসী, বোলিংয়ে আক্রমণাত্মক, ফিল্ডিংয়ে দুরন্ত—একাই যেন তিনজনের কাজ করতে পারেন! কিন্তু একটা বড় অংশের চোখে তিনি শুধু ‘ইনজুরি প্রবণ’ এক খেলোয়াড়। যাকে দিয়ে লম্বা সময়ের পরিকল্পনা করা কঠিন। কিন্তু হার্দিক বারবার প্রমাণ করেছেন, তার শরীর যতবার ভেঙেছে, তিনি ততবারই আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন।

২০২৩ বিশ্বকাপে চোট পাওয়া সেই গোড়ালিই তার পথ বদলে দিয়েছিল। বিসিসিআই তখন বুঝতে পারে, এমন এক সম্পদকে স্রেফ ক্ষয় হতে দেওয়া যাবে না। তাই তাকে পাঠানো হয় ১৮ সপ্তাহের বিশেষ হাই-পারফরম্যান্স ক্যাম্পে, যেখানে প্রতিটি দিন ছিল তার সুস্থতা আর দক্ষতার একেকটি ধাপ পেরোনোর পরিকল্পনা।

দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মোহ ত্যাগ করে বিসিসিআই তখন চোখ রাখে ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের সাদা বলের ক্রিকেটে—যেখানে পান্ডিয়া হয়ে উঠতে পারেন ভারতের ফিনিশিং টাচ। এই থিওরি কাজে লেগেছে তিনি ফিরে এসেছেন আরও ধারালো হয়ে। শরীরে লীন মাসলের ছাপ, আগের চেয়েও বেশি এনার্জি, এবং ব্যাট হাতে পুরনো সেই বিধ্বংসী রূপ।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলের পুরো মৌসুম, বরোদার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ—প্রতিটি মঞ্চেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু তার আসল পরীক্ষা ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। রোদ্রদগ্ধ পাকিস্তান ম্যাচ হোক কিংবা বাংলাদেশকে রুদ্ধ করে দেওয়া বোলিং স্পেল, তার দৌড়ঝাঁপ আর এনার্জিতে একফোঁটাও কমতি ছিল না।

একজন খেলোয়াড় যখন নিজের শরীরকে চিনতে শেখে, তখনই সে নিজেকে আরও উন্নত করতে পারে। হার্দিকের জীবনধারায় এখন বাড়তি যত্নের ছাপ স্পষ্ট—ডায়েট, পানীয়, বিশ্রাম—সবকিছুতেই শৃঙ্খলা। এমনকি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়েও তার জলপানের অভ্যাস একচুল বদলায় না। মাঠের বাইরেও তিনি নিজেকে প্রস্তুত রাখেন, যেন যেকোনো মুহূর্তে মাঠে নেমে ঝড় তুলতে পারেন।

হার্দিক পান্ডিয়া আসলে এক ফেরারি—গতি তার অস্তিত্বের অংশ, আর প্রতিটি ম্যাচ তার জন্য একেকটি রেস ট্র্যাক। চ্যালেঞ্জ একটাই—এই ফেরারির জ্বালানি যেন একটি সাধারণ সেডানের মতো দীর্ঘস্থায়ী হয়!

স্পিন, পেস, থ্রোডাউন—সবকিছুকে সমান তালে সামলে ব্যাটের মাঝখান থেকে বের করলেন দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোকের ফোয়ারা। এরপর বোলিং তো আছে। নেটে এটাই তার প্রতিদিনের রুটিন। এমনি এমনি তিনি হার্দিক পান্ডিয়া নন!

Share via
Copy link