আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে ক্রিকেটারদের মেজাজ হারানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর যে অসংযত আচরণ করেছেন, তা নিয়ে রীতিমত শোরগোল পুরো ক্রিকেটাঙ্গন। এমনকি তাঁর এই আচরণের কড়া সমালোচনা করেছেন সাবেক অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকর আনজুম চোপড়াও।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক এই অধিনায়ক কোনো রকম রাখঢাক না রেখেই বলেছেন, ‘ক্রিকেট মাঠে মেজাজ হারানো অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তবে এ সব ক্ষেত্রে আরো সংযত হওয়া উচিৎ। আমি নিশ্চিত, ও এখন এটা অনুভব করছে। অসন্তুষ্টি প্রকাশে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু কীভাবে আর কখন করবে, সেটা দেখতে হবে। একই সাথে কথা বলার সময়ে শরীরী ভাষা ও শব্দচয়নে তাঁকে আরও যত্নশীল হওয়া উচিত।’
আনজুম চোপড়া এ ব্যাপারে আরো যোগ করে বলেন, ‘আমার মনে হয় বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাশা মতো খেলতে না পারার হতাশা থেকেই হারমানপ্রীত এমন আচরণ করেছে। কিছু সিদ্ধান্ত যদি তাদের পক্ষেও না যায়, সেটা কি অন্য উপায়ে আরো সংযত আচরণে সামাল দেওয়া যেত না? পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেই তাঁকে ক্ষোভ ঝাড়তে হবে? এটা অপ্রত্যাশিত। সব সময় প্রত্যাশা অনুযায়ী সিরিজ যাবে না। তবে সেই হতাশা এভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করা ঠিক হয়নি। কিছু ব্যাপার ড্রেসিংরুমে বা নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ ছিল।’
হারমানপ্রীতের এমন আচরণের সূত্রপাত মূলত বাংলাদেশ-ভারত নারী ক্রিকেট দল মধ্যকার তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচের সময়ে। এমনিতে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টানটান উত্তেজনায় ম্যাচটি হয়ে উঠেছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
কিন্তু, ভারতের ইনিংসের সময়ে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ করে বসেন হারমানপ্রীত কৌর। আম্পায়ার তানভীর আহমেদ তাঁকে আউটের সংকেত দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাট দিয়ে স্টাম্প ভাঙেন তিনি। ফিরে যাওয়ার সময় শরীরী ভাষাতেও দেখিয়েছেন ক্ষুব্ধতার ছাপ।
এতটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পুরস্কার বিতরণীতে সরাসরি আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ভারতীয় এ অধিনায়ক। শুধু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। সিরিজের ফলাফল ১-১ এ ড্র হওয়ায় ট্রফি নেওয়ার সময় বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কটাক্ষও করেন হারমানপ্রীত। এ সময়ে অনেকটা তাচ্ছিল্যের সুরেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আম্পায়াররা কষ্ট করে টাই করিয়েছে। তাদেরও এখানে আনা হোক।’
মূলত এরপরেই বাংলাদেশের অধিনায়ক নিগার সুলতানা তাঁর দলকে নিয়ে ফটোসেশন শেষে বেরিয়ে আসেন। যেটি তিনি ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও বলেছিলেন।
হারমানপ্রীত কৌরের আচরণ নিয়ে এরপর থেকেই শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। যদিও আইসিসির শাস্তিবিধিতে অল্পতেই পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। মাত্র ১ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞাতেই শেষ হচ্ছে তাঁর শাস্তি। তবে ভারতীয় অধিনায়কের এমন আচরণে বিব্রত হয়েছেন ভারতের অনেক সাবেক ক্রিকেটাররাই।
আনজুম চোপড়ার সাথে যেমন সুর মিলিয়ে ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী সদস্য মদন লাল বলেছেন, ‘এটা বিব্রতকর। ওর আচরণ ভারতীয় ক্রিকেট একটা দুর্নাম বয়ে আনলো। বিসিসিআইয়েরও উচিৎ, তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া।’