২০০৭ সালে মাত্র ২০বছর বয়সে ভারতের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল রোহিত শর্মার। ক্যারিয়ারের প্রথম ছয় বছর মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। এরপর মহেন্দ্র সিং ধোনির পরামর্শে ২০১৩ সালে ওপেনিং করেন। ওপেনার হিসেবে ব্যাট করার পর থেকে অন্য এক রোহিত শর্মাকে দেখে ক্রিকেট বিশ্ব। তার বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা এবং ধারাবাহিকতা তাকে অন্যান্য ওপেনারদের থেকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
তবে রঙিন পোশাকের তুলনায় সাদা পোশাকের ক্রিকেটে কিছুটা নিষ্প্রভ ছিলেন রোহিত। অথচ সাদা পোশাকের ক্রিক্রটে তার শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। রোহিতের জন্য রানপ্রসবা ইডেন গার্ডেনসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক ইনিংসেই খেলেছিলেন ১৭৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস।
সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন পরের টেস্টেও। কিন্তু এরপরই যেন পা হড়কানো শুরু। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের রেকর্ডের বরপুত্র রোহিত ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকেন ভারতের টেস্ট দল থেকে। কিছু সময় পরপর দলে জায়গা পেলেও ফর্মহীনতার কারণে দলে স্থায়ী হতে পারছিলেন না।
অবশেষে ২০১৮ সালে পুনরায় টেস্ট দলে সুযোগ পান রোহিত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন ১৭৬ এবং ২১২ রানের অনবদ্য ইনিংস। কিন্তু এরপরই আঘাত হানে ইনজুরির। ফলশ্রুতিতে ছিটকে পড়েন দল থেকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ তাই রোহিতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, নিজেকে চেনানোর।
রোহিতের ব্যাটিং স্টাইল অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এবং স্কোরিং শট বেশি খেলতেই পছন্দ করেন তিনি। কিন্তু রোহিতের ফুটওয়ার্কে কিছুটা সমস্যা রয়েছে বিশেষ করে পেছনের পা’টা তিনি নড়াতেই চান না। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সমস্যা না হলেও পাঁচদিনের ক্রিকেটে এটা রীতিমতো অপরাধ।
কিন্তু আপনি কি তাকে এজন্য দোষ দিতে পারেন? সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রান করার পূর্বশর্ত হচ্ছে বলের লাইন থেকে সরে যাওয়া এবং ব্যাট সাবলীলভাবে ব্যাট সুইং করানো। পা নাড়ানো আপনাকে ধীরগতির করে দেবে এবং ধীরগতির কেউ কখনো ওডিয়াইতে ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারবে না।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তার রানের বন্যা বইয়ে দেবার মানসিকতার ফলে সবাই তাকে ধরে নিয়েছে শর্টার ফরম্যাট স্পেশালিস্ট হিসেবেই। তার আক্রমণাত্নক মানসিকতা, দ্রুত রান করতে চাওয়া, আউটের ধরণ সবমিলিয়ে সবাই ধরেই নিয়েছিল রোহিতের টেস্ট টেম্পারমেন্ট নেই। তবে হ্যাঁ, সত্যি বলতে রোহিতের শুরুর দিকের কথা বিবেচনায় আনলে সে সিদ্ধান্তটা অমূলক নয়।
ওডিয়াইতে নিয়মিত বড় সব ইনিংস খেলতে পারলেও টেস্ট কেন রোহিত বড় স্কোর করতে পারছে না সে নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। এক্ষেত্রে কেবল যে রোহিতে একার দোষ সেটাও না, কারণ রোহিত নিজেকে উন্নতি করার জন্য পর্যাপ্ত টেস্ট ম্যাচও খেলতে পারেনি কখনো।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের টানা ফিক্সচারের জন্য রোহিত সর্বশেষ কবে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলতে পেরেছে সেটা বোধহয় কেউই স্মরণ করতে পারবে না। তবে গত দুই-তিন বছরে নিজেকে অনেকটাই বদলে নিয়েছে রোহিত, নিয়মিত জায়গা পাচ্ছে ভারতীয় টেস্ট দলে। রোহিতের ব্যাটিং স্টাইলে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে আদৌ?
শুরুর দিকের তুলনায় ব্যাটিং স্টান্টে ক্ষুদ্র পরিবর্তন এসেছে রোহিতের ব্যাটিংয়ে। সামনের পা অনেকটাই বাড়িয়ে খেলছেন এবং হাত ও শরীরের মধ্যকার দূরত্বও কমিয়ে এনেছেন আগের তুলনায়। যদিও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তবুও তার ব্যাটিংয়ে উন্নতির ছাপ স্পষ্ট।
কেবল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল নয়, এই বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইতে সেঞ্চুরি এবং আহমেদাবাদে তাঁর ফিফটি জানান দেয় তার সামর্থ্যের কথা। বিশেষ করে চেন্নাইয়ের পিচ ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য মৃত্যুকূপ। প্রথম দিন থেকেই বল ঘুরেছে সাপের মতো, বিশাল সব টার্ন পেয়েছেন স্পিনাররা। সেখানে শুরুতেই ব্যাট করা রোহিতের ব্যাটিংয়ের ধরণ ছিল চমৎকার, সেদিন অসাধারণ ব্যাট করেছিলেন তিনি।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আপনি মাঝেমধ্যে বাজে শট খেলেও রান পেতে পারেন। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট বড় নিষ্ঠুর, বাজে শটের কোনো জায়গা নেই এখানে। টেস্টে আপনাকে ধৈর্য্য এবং টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে হবে, স্কোরিং শটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে রোহিত শর্মা বোধহয় ধীরে ধীরে টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছেন।
রোহিতের বিপক্ষে আরেকটি বড় অভিযোগ হল তিনি ভারতের মাটিতে যতটা সফল, বাইরের মাঠে ততটা নন। এবারের ইংল্যান্ড সফর তাই রোহিতের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। তিনি কি পারবেন সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিতে নাকি থাকবেন ‘হোমট্র্যাক বুলি’ হয়েই।
_______________
লেখাটি Has Rohit Sharma cracked the Test match opening code? ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে প্রকাশিত হয়েছে। লিখেছেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া।