‘জোস’ হ্যাজেলউড

১৫ বছর বয়সী জশের বাবা ট্রেভর। ট্রেভরের নাছোড়বান্দা এক বন্ধু একবার অভিনব এক বাজি ধরলেন, বললেন জশের বয়স ৩০ হওয়ার আগেই তাঁর টেস্ট অভিষেক হবে। জশ ২৪ ছোয়ার আগেই সাদা পোশাকে মাঠে নেমে পড়েন, ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয় গ্যাবায়।

বাবার সেই বন্ধুটি ৫০ হাজার ডলার জিতেন বাজিতে, জশ আরো বড় বাজি জিতেন। সবচেয়ে বড় জয় হয় অস্ট্রেলিয়ার। অভিষেকেই পাঁচ উইকেট পাওয়া পেসারের দেখা তো আর রোজ রোজ মেলে না।

অস্ট্রেলিয়ার পেস-বোলিং লাইনআপটা এমনিতেই অনেক সমৃদ্ধ। মিশেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সরা তো ব্যাটসম্যানের আত্মারাম খাঁচাছাড়া করে দেন। একটা সময় তো এমনও ছিল, মিশেল স্টার্কের তুলনা দেওয়ার মত কোন বোলারই খুঁজে পাওয়া দুস্কর হচ্ছিল!

তা যে বোলিং লাইন আপের অতীত ঐতিহ্যে মিশেল জনসন, গিলেস্পির মত তারকারা আছেন সে বোলিং লাইনআপ তো সমৃদ্ধ হবেই। তবে, সেই বোলিং লাইনআপের নতুন ধ্রুবতারা সংযোজন বলতে পারেন জশ হ্যাজেলউডকে!

০১৪২৮৪০৯০৪৪- নাহ, মোবাইল অপারেটরের কোন সেল ফোন নম্বর নয় এটি, ডায়াল করলেও কোন বেলাবোস আপনার ডাকে সাড়া দেবেনা, এটি অস্ট্রেলিয়ার সাথে ভারতের টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের স্কোর – ৩৬ রানে অলআউট!

আর এই লজ্জা দেওয়ার কাজটা সবচাইতে বেশি যিনি করেছেন তিনি জশ হ্যাজেলউড!

জশ হ্যাজেলউডকে নিয়ে কথা হয় তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। তবে, শুরুতেই দলে এতটা নিয়মিত ছিলেন না তিনি। আর নিয়মিত হলেও, বাকি পারফর্মারদের ভিড়ে টিমটিম করে জ্বলতে থাকা জশের পরিচিতি পাওয়া যে দুস্করই!

তবে, হ্যাজেলউডকে নিয়ে প্রথম কথা হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময়টাতে ২০১৭ তে সেই ট্রফিটাতে মিচেল স্টার্ক-জশ হ্যাজেলউড-প্যাট কামিন্সকে নিয়ে সাজানো পেসত্রয়কে নিয়ে বারবার সেরা কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। তা ৩ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে সেই ইঙ্গিতকে কিছুটা ফলপ্রসুও করেন হ্যাজেলউড।

ফলে যা হয়, ডাক পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার জন্যে সবচাইতে স্পর্শকাতর সিরিজটায়- অ্যাশেজে! মিলেছিল পাঁচ টেস্টেই খেলার সুযোগ, নিয়েছিলেন ২১ টা উইকেট, সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক প্যাট কামিন্সের চাইতে মাত্র দু’টা কম!

এরপর আর জশ হ্যাজেলউডকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সত্যি কথা বলতে, জশ হ্যাজেলউড অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের অনেক যত্ন করে গড়ে তোলা প্রতিভা। হ্যাজেলউডকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পরিকল্পনাটাও অনেক দীর্ঘ। হ্যাজেলউডকে যে গড়ে তোলার চেষ্টা তিন ফরম্যাটের বিধ্বংসী পেস বোলার হিসেবে। তাছাড়াও, আগুনে অ্যাশেজ জিততেও তো এমন পেস বোলিংয়ের কোন বিকল্পই নেই।

হ্যাজেলউড এই ২০২০ এ এসে সত্যিই বিধ্বংসী হয়ে উঠেছেন। বিরাট কোহলিকে গত পাঁচ ইনিংসের চারটেতেই ফিরিয়েছেন প্যাভিলিয়নে। পাকিস্তানের সাথে সর্বশেষ সিরিজটাতেও বাবর আজমকে ফিরিয়েছেন হ্যাজেলউড। তবে সেই ফেরানোর চাইতেও কথা বলতে হবে কিভাবে ফিরিয়েছেন সেটা।

অফ সাইডে পিচ করা বল, অফ স্ট্যাম্পের বাইরে সুইং করে যায়, ব্যাটসম্যান তালুবন্দী হন উইকেট কিপার বা স্লিপে দাঁড়ানো ফিল্ডারের হাতে। বাবর আজম কিংবা কোহলি, দুইজনকেই এভাবে ফিরিয়েছেন হ্যাজেলউড। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা টেকনিকের দুই ব্যাটসম্যানকে এভাবে ফেরানো কাউকে সেরা না বলে কি উপায় আছে!

হ্যাজেলউড বরাবরই তাঁর আদর্শ মানেন কিংবদন্তিতুল্য অজি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রাকে। অস্ট্রেলিয়ার ৪৪০ তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে যেদিন অভিষেক হয়, সেদিন এই ম্যাকগ্রাই তাঁকে ব্যাগি গ্রিন পরিয়ে দেন। ম্যাকগ্রাও তাঁর এই উত্তরসুরীর বড় গুনমুগ্ধদের একজন। হ্যাজেলউড এবারে অর্জন ও স্থায়িত্বে ম্যাকগ্রাকে ছুঁতে পারলেই কেল্লাফতে!

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link