কি একটা অবিশ্বাস্য বিশ্বকাপ! ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের প্রতিটা পরতে পরতে ছিল রোমাঞ্চ। বিশ্বকাপ শুরুর আগে নানান ধরণের সমালোচনায় জর্জরিত ছিল এবারের আয়োজন। তবে দিন শেষে সবাই যেন সমস্বরে বলে উঠলো, এবারের আয়োজন ইতিহাস সেরা।
হ্যাঁ, রীতিমত এবারের আয়োজনটা অন্য সব আয়োজনকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। দারুণ সব ম্যাচের উপহার যেমন দিয়েছে এবারের বিশ্বকাপ, তেমনি সার্বিক আয়োজনেও পেছনে ফেলেছে অন্য সব বারের আয়োজনকে।
প্রায় ২৮ দিনের জমকালো আয়োজন। ফুটবলীয় লড়াইয়ের দৃষ্টিনন্দন এক মঞ্চ। কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ যদি হয় একটি বই, তবে তার প্রতিটি পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে রোমাঞ্চ, অদম্য সাহস, হার না মানার দৃঢ়তা এবং সেই সাথে বেদনাতুর প্রস্থানের গল্প। তবে দিনশেষে, আয়োজন শতভাগ সফল। কেননা গোলের খেলা ফুটবলে এই আসরেই হয়েছে সর্বাধিক গোল।
১৯৩০ সাল থেকে বিশ্বকাপ ফুটবলের যাত্রা শুরু। এরপর থেকে ধারাবাহিকতা মেনে চার বছর পর আয়োজিত হয়ে আসছে ‘দ্য গ্রেস্টেস্ট শো অন আর্থ’। সময়ের পরিক্রমায় দলের সংখ্যা বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে ম্যাচের সংখ্যাও।
তাছাড়া দলগুলোর খেলার মানও বেড়েছে বহুগুণে। সেই ধারাবাহিকতায় গোটা ফুটবল বিশ্বকাপে দলগুলোর করা গোলের সংখ্যাও সমানুপাতিক হারেই বেড়েছে। তাইতো প্রথম ও সর্বশেষ বিশ্বকাপের মাঝে ১০২ গোলের ফারাক।
এবারের বিশ্বকাপ শুরু হয় স্বাগতিক কাতার ও ইকুয়েডরের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে। সে ম্যাচের প্রথম গোলটি করেছিলেন ইকুয়েডরের অধিনায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়া। তিনিই এবারের বিশ্বকাপে গোলের খাতার সূচনা করেন। এরপর দুর্দান্ত সব ম্যাচ মঞ্চায়িত হতে শুরু করে।
প্রতিটা দলই মুহুর্মুহু আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল প্রতিপক্ষের রক্ষণ থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক-সমর্থকদের। চোখ ধাঁধানো গোলের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। সবকিছু মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে গোল হয়েছে মোট ১৭২টি।
এর আগে সর্বাধিক ১৭১টি গোল দেখেছিল গোটা ফুটবল বিশ্ব। সেটাও আবার একাধিকবার। প্রথমবার ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে ১৭১টি গোলের পসরা বসেছিল। এরপর ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে। ২০১৮ সালে রাশিয়াতে হওয়া বিশ্বকাপে অবশ্য দুই গোলের জন্য তৃতীয় দফা একই সংখ্যক গোলের রেকর্ডটি গড়া হয়ে ওঠেনি। তবে এবারের কাতার বিশ্বকাপ ছাপিয়ে গেছে সব কিছুকে।
এত এত উন্নত মানের প্রযুক্তি থাকার পরও সর্বাধিক সংখ্যক গোল হয়েছে এবারের বিশ্বকাপে। সর্বাধিক আটটি গোল হয়েছে ইংল্যান্ড ও ইরানের মধ্যকার গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ে। এছাড়া স্পেন ও কোস্টারিকা এবং পর্তুগাল ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচে গোল হয়েছে সাতটি করে।
তাছাড়া বেশকিছু ম্যাচে ছয়টি করে গোলের দেখা পেয়েছেন দর্শকরা। সাতটা ম্যাচ গোল শূন্য ড্র হবার পরও ১৭২বার বল জালে জড়িয়েছে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে। অবশ্যই এখানে টাইব্রেকারের গোলগুলো অন্তর্ভুক্ত নয়।
অথচ প্রথম বিশ্বকাপে গোল হয়েছিল কেবলমাত্র ৭০টি। উরুগুয়েতে হওয়া সে বিশ্বকাপের পর ইতালিতে হওয়া ১৯৩৪ বিশ্বকাপেও একই সংখ্যক গোল হয়েছিল বিশ্বকাপে। সেই দুই বিশ্বকাপই এখন অবধি সর্বনিম্ন গোলের রেকর্ডের অধিকারী।
সুইজারল্যান্ডে হওয়া ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে প্রথম বারের মত ১০০ গোলের গণ্ডি ছাড়ায়। সেবারের আসরে গোল হয়েছিল ১৪০টি। এরপর মাঝে ১৯৬২ সালের চিলি বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ১৯৭৪ সালের জার্মানি বিশ্বকাপ অবধি আর একশ গোলের গণ্ডি পার করতে পারেনি দলগুলো। ৯৭ বার বল জালে জড়িয়েছিল জার্মানি বিশ্বকাপে।
এরপর থেকে আর কখনোই গোলের সংখ্যা একশোর নিচে নামেনি। বরং ক্রমাগত বেড়েছে সময়ের সাথে সাথে। আর সে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারের বিশ্বকাপ ছাপিয়ে গেছে পূর্বের সব রেকর্ড।
অদূর ভবিষ্যতে যে এই রেকর্ডও বহাল তবিয়তে থেকে যাবে তেমনটা প্রত্যাশা করা বোকামি। গোলের খেলা ফুটবলে গোল হবে, দর্শক-সমর্থক ও খেলোয়াড়রা আনন্দে ভেসে যাবে। সেটাই তো চাওয়া।