লিওনেল স্ক্যালোনি যে মেক্সিকোকে শেষবার নিজে খেলেছিল, সেই মেক্সিকো আর কালকের মেক্সিকোর মধ্যে অ্যাটাকিং সাইডে অনেক পার্থক্য। রাফায়েল মার্কোয়েজ, জাভিয়ের হার্নান্ডেজের সেই মেক্সিকো ম্যাচে ২০০৬ সালে স্ক্যালোনিদের পাবলো আইমার টিমে ছিল। হুয়ান রিকুয়েলমের কর্নার থেকে গোল শোধ করে।
আর্জেন্টিনা ফুটবলের একটা বৈশিষ্ট্য, বিশ্বকাপ এলে টগবগে থাকা দলটাকে কেমন ঝিমুনিতে ধরে। স্কালোনি অ্যাস এ ফুটবলার থাকার সময় কোয়ার্টার ম্যাচে কিপার আবানদাঞ্জিয়ারি চোট পেয়ে ছিটকে গেল। রিকুয়েলমেকে তুলে নেওয়া হল। বরাবর কিছু না কিছু ভুল ডিসিশন, ভাগ্য, ট্যাকটিক্স আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গেছে। আর যখনই গেছে, তখন ছন্দে থাকা গোটা টিম (২০১০ এক্সপেক্টেড ছিল) ছন্নছাড়া হয়ে গেছে।
সৌদি আরব ম্যাচটাই ধরা যাক। লাস্ট ৩৫ টা ম্যাচ অপরাজিত দলটা, শুধু একটা ম্যাচ লেগেছে ট্যাকটিক্যালি নতি স্বীকার করতে। তাও সেই সৌদি, যারা শেষ তিনটে ম্যাচের একটাও জেতেনি। আপাতদৃষ্টিতে ১-০ হয়ে যাওয়া সিচুয়েশনে সেদিনের প্লেয়ার আর আজকের কোচ স্ক্যালোনি সৌদিকে হালকাভাবে নিয়েছিল ঠিকই কিন্তু এছাড়াও পেছনে অনেক যুক্তি-তক্ক রয়ে যাচ্ছে যে!
আনফিট রোমেরোকে নামানো। যার কোমর ঘুরতে ঘুরতেই প্রথম গোল করে হাত ছড়িয়ে সেলিব্রেশনে মত্ত আরবরা। ১০০% ফিট রোমেরো আনপ্লেয়বল, নিজের সেরা দিয়ে দেবে মাঠে। অসাধারণ সেন্টার ব্যাক। কিন্তু সদ্য হ্যামস্ট্রিং অপারেশন থেকে ফেরা রোমেরো? নৈব নৈব চঃ। বদলে কাল লিসান্দ্রো নামল এবং তুখোড় খেলল। একটা সেন্টার ব্যাক হিসেবে ও ডেস্ট্রয়ার রীতিমত। দুই, এতদিন ধরে এই আর্জেন্টিনা ডিফেন্সিভ থার্ডের সামনে খুবই ভাল হোল্ডার এবং পাসার হিসেবে খেলা রড্রিগো ডি পলের সুইচ অফ হয়ে যাওয়া।
আর তাই ও মাঝে মাঝে অনেক ওয়াইড হয়ে যায়, ফাঁকে অপোনেন্ট ঢুকে পড়লে দখল করতে বেমক্কা ফাউল করে বসছে। কালকেই ৪-৪-২ যে অন পেপারে শুরু করে ৪-৩-৩ হয়ে গেছিল মেসিকে ফলস নাইন করে – দুটো সিডিএম নিজেদের পজিশনই ভুলে যাচ্ছে অফ দ্য বল। ডিপ্লয়মেন্ট বলে কোনও বস্তু চোখে পড়ছে না, আদতে ভীষণ রকম ছন্নছাড়া ফুটবল। যেটা সদ্য কোপা চ্যাম্পিয়ন কোচের কাছ থেকে এক্সপেক্টেড নয়। তাই, বদলে এনজো ফার্নান্দেজ। যার এক-দুটো টাচে মেসি নিজের স্পেসে ঢুকে বক্সের কাছাকাছি চলে যাবে। নিজের জোনটা ফিরে পাবে।
কালকের প্রথম গোলটার ক্ষেত্রে ডি পলের কিছুটা ভূমিকা যদিও আছে। সামনে থাকা তিনটে ম্যানের মধ্যে একটাকে নিজের দিকে টেনে খুলে যাওয়াসম স্পেসে মেসিকে পাস করল। গোলটা নিয়ে কথা বলা উচিতই না। কোনও উচ্চ পর্যায়ের অ্যানালিসিসও ওটা মাপতে পারবে না। তিনটে ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে বলটাকে মাটি ঘেঁষিয়ে গোলটা করে এল। আর যেই গুয়েদো উঠে এনজো নামল, লাউতারো উঠে জুলিয়ান নামল, খেলা ঘুরে গেল আর্জেন্টিনার। ঘুরতই।
এই মৌসুমে চোটের কবলে থাকা পারেদেস জুভেন্টাসের হয়ে হাতে গোনা কয়েকটা ম্যাচ পেয়েছে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে আর ফার্স্ট ইলেভেনে নিয়মিত নয় দে পল। বদলে ম্যাচ প্র্যাকটিসেই থাকা প্লেয়ার তিনটে নামল আর ধ্বংসাত্মক পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচ নিয়ে বেরিয়ে গেল। আমার নিজের কাছে কাল দু’জন ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। এক, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকগণ আস্তে আস্তে বুঝছে লিচা কি জিনিস।
ঐ হাইট নিয়ে মোশনে বডি এনে এরিয়াল বলে ওয়ান ইস্টু ওয়ান ডুয়েল জিতছে অহরহ। সেন্টার ব্যাক হিসেবেও লাইন ব্রেকিং পাসটা দারুণ খেলে লিচা। আর্জেন্টিনাকে নক আউট কোয়ালিফাই করতে গেলে লিচাকে প্রথম ইলেভেনে রাখতেই হবে। মেক্সিকো ৫-৩-২ তে শুরু করে ৩-৪-৩ এ ওয়াইড দিয়ে ভাল রকম প্রেস করছিল, যার জন্য মিডল থার্ডে বহু সংখ্যক মিসপাস করছিল আর্জেন্টিনা। এটা কাটল এঞ্জো নামতেই। এঞ্জোকে অ্যাট এনি কস্ট পারেদেসের জায়গায় খেলাক স্ক্যালোনি। আর ভবিষ্যতে রোমেরো-লিসান্দ্রো আর্জেন্টিনা ডিপ ডিফেন্সের রক্ষাকর্তা।
সামনে পোল্যান্ড ম্যাচ। উতরে যাবে ভাল মত। তারপর নকআউট। ব্রাজিলের সাথে দেখা হবে? হোক, হোক। ওয়েট করছি রাইভ্যালস! দেখো, সেদিন আবার কালকের মত ফার্স্ট হাফে ডি পলকে দিয়ে ষাঁড়ের লড়াই করিও না।