যেভাবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

ওভার রেট পেনাল্টিতে পয়েন্ট হারানোর কারণে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার সুযোগ হারায় অস্ট্রেলিয়া। এবারে অবশ্য আর সুযোগ হারায়নি, শুরু থেকেই দাপুটে ক্রিকেট খেলে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থানে থেকে নিশ্চিত করেছে ফাইনালের স্থান। আসুন দেখে নেয়া যাক এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অস্ট্রেলিয়ার যাত্রা। 

  • বিপক্ষ ইংল্যান্ড, গ্যাবা: নয় উইকেটের জয়

প্রথম বলেই রোরি বার্নসকে আউট করে ম্যাচের চিত্রনাট্য যেন লিখে দিয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক। প্যাট কামিন্সের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক টেস্টে ইংল্যান্ড অবশ্য বল হাতে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু ট্রাভিস হেডের অনবদ্য ১৫২ এবং নাথান লিওনের ৪০০তম টেস্ট উইকেটের সুবাদে ইংল্যান্ডের আর ম্যাচে ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। 

  • বিপক্ষ ইংল্যান্ড, অ্যাডিলেড: ২৭৫ রানের জয়

করোনার কারণে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স এবং ইনজুরির সুবাদে জশ হ্যাজলউড ছিলেন না এই টেস্টের একাদশে। কিন্তু তাতে অবশ্য ম্যাচ জিততে অসুবিধা হয়নি, মারনাস লাবুশেইনের সেঞ্চুরি আর ডেভিড ওয়ার্নার-স্টিভেন স্মিথের প্রায় সেঞ্চুরি ছোঁয়া ইনিংসে রান পাহাড়ে চড়ে স্বাগতিকরা। ইংল্যান্ডের শুরুটা ভালো হলেও ঝাই রিচার্ডসনের পাঁচ উইকেট শিকারের সুবাদে সহজ জয় পায় স্বাগতিকরা। 

  • বিপক্ষ ইংল্যান্ড, মেলবোর্ন: ইনিংস এবং ১৪ রানের জয়

তৃতীয় দিন সকালেই স্কট বোল্যান্ডের অনবদ্য বোলিংয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় সফরকারীরা। মাত্র সাত রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট শিকার করেই এই পেসার। ইংল্যান্ড যে এতটা অসহায় আত্নসমর্পন করবে সেটা অবশ্য কেউই ভাবেননি। কঠিন এক পিচে মার্কাস হ্যারিস ৭৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন। 

  • বিপক্ষ ইংল্যান্ড, সিডনি: ড্র

এই ম্যাচ দিয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম পয়েন্ট হারায় অজিরা। সিডনীর প্রায় অন্ধকার সন্ধ্যায় ফ্ল্যাডলাইটের আলোয় স্টিভেন স্মিথের লেগস্পিন সামলে ইংল্যান্ডকে জয়ের সমান ড্র এনে দেন জেমস অ্যান্ডারসন। এই ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে মনে রাখার প্রত্যাবর্তন ঘটান উসমান খাজা। 

  • বিপক্ষ ইংল্যান্ড, হোবার্ট: ১৪৬ রানের জয়

ট্রাভিস হেডের আরেকটি আক্রমণাত্নক সেঞ্চুরিতে আরো একবার ব্যাকফুটে সফরকারী ইংল্যান্ড। পেসারদের স্বর্গরাজ্যে চতুর্থ ইনিংসে ২৭১ রান তাড়া করতে নেমে ভালো শুরু করলেও মাত্র ১২৪ রানেই গুটিয়ে যায় জো রুটের দল। জয় দিয়েই অ্যাশেজ শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। 

  • বিপক্ষ পাকিস্তান, রাওয়ালপিন্ডি: ড্র

১৯৯৮ সালের পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তান সফরে যায় অস্ট্রেলিয়া। পিচে বোলারদের জন্য তেমন কিছু ছিল না, পুরো পাঁচদিন রাজত্ব করেছেন ব্যাটসম্যানরা। যদিও অজি ওপেনাররা সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েও ফিরেছেন আক্ষেপ নিয়েই। 

  • বিপক্ষ পাকিস্তান, করাচি: ড্র

এই টেস্টে প্রথম ইনিংসে বড় লিড নিলেও জয়ের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে অস্ট্রেলিয়া। খাজার দারুণ এক সেঞ্চুরি আর পেস বোলারদের দারুণ নৈপুণ্যে শুরুতে এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে প্রবলভাবে ফিরে আসে পাকিস্তান। চতুর্থ ইনিংসে টানা দুই দিন ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচিয়ে নেয় স্বাগতিকরা। বাবর আজমের অনবদ্য ১৯৬ রানের ইনিংসের পাশাপাশি সেঞ্চুরি করেন মোহাম্মদ রিজওয়ানও। 

  • বিপক্ষ পাকিস্তান, লাহোর: ১১৫ রানের জয়

শুরুতে আট রানে দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়লেও অ্যালেক্স ক্যারি এবং ক্যামেরুন গ্রিনের ব্যাটিং প্রতিরোধের পর কামিন্স এবং স্টার্কের রিভার্স সুইংয়ে ম্যাচে ফিরে অস্ট্রেলিয়া। ৩৫১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকরা নাথান লিওনের পাঁচ উইকেটের সুবাদে গুটিয়ে যায় ১১৫ রান বাকি থাকতেই। 

  • বিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, গল: দশ উইকেটের জয়

গলের উইকেট বরাবরের মতোই সহায়তা করেছে স্পিনারদের, ব্যাটসম্যানদের জন্য হয়ে উঠেছিল বধ্যভূমি। কিন্তু খাজা, গ্রিন আর ক্যারির নৈপুণ্যে ভালো সংগ্রহ দাঁড় করায় সফরকারীরা। শ্রীলংকা যেন দ্রুত ম্যাচ শেষের তাড়ায় মাঠে নেমেছিল, গুটিয়ে যায় মাত্র ২৩ ওভারের মাঝেই। ট্রাভিস হেড শিকার করেন চার উইকেট, অন্যদিকে, ম্যাচে নাথান লিওনের শিকার নয় উইকেট। 

  • বিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, গল: ইনিংস এবং ৩৯ রানে হার

সরকার বিরোধী আন্দোলনের দু:সময়ে শ্রীলঙ্কার এই জয় সুবাতাস বইয়ে দিয়েছিল পুরো দেশে। সেঞ্চুরির পরই লাবুশেইনের ফেরা আর ক্যারির রিভার্স সুইপ পাগলামিতে বিপাকে পড়ে অজিরা। পরবর্তীতে দীনেশ চান্দিমালের অনবদ্য ডাবল সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসেই ম্যাচ পকেটে পুরে নেয় স্বাগতিকরা। প্রবোথ জয়াসুরিয়া ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে কেবল বড় জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। 

  • বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পার্থ: ১৬৪ রানের জয়

প্রত্যাশিত সহজ এক জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। লাবুশেইন এবং স্মিথ ডাবল সেঞ্চুরি করলেও ৯৯ রানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হন হেড। দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবীয় কাপ্তান ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট দারুণ এক সেঞ্চুরি করলেও ম্যাচ বাঁচানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

  • বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অ্যাডিলেড: ৪১৯ রানের জয়

আরো একবার ক্যারিবিয়দের অসহায় আত্নসমর্পন। লাবুশেইন এবং হেড সেঞ্চুরি করে বোলারদের জন্য মঞ্চটা প্রস্তুত করেই রেখেছিলেন। বোল্যান্ডের এক ওভারে তিন উইকেটের সুবাদে চতুর্থ ইনিংসে মাত্র ৭৭ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। 

  • বিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিসবেন: ছয় উইকেটের জয়

এই টেস্টের পুরোটা জুড়েই ছিল ফাস্ট বোলারদের আধিপত্য। ট্রাভিস হেড অবশ্য ৯৬ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলে দুই দলের মাঝে ব্যবধান গড়ে দেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ৯৯ রানে। ৩৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুর্ঘটনার আশংকা জাগলেও শেষপর্যন্ত সহজ জয় পায় অজিরা। 

  • বিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, মেলবোর্ন: ইনিংস এবং ১৮২ রানে জয়

ব্যাট এবং বলে দুই ডিপার্ট্মেন্টেই চূড়ান্ত আধিপত্য দেখিয়েছে স্বাগতিকরা। ক্যামেরুন গ্রিন প্রথমবার পাঁচ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে তুলে নেন দারুণ এক ফিফটি। নিজের শততম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করে রাঙিয়ে তোলেন ডেভিড ওয়ার্নার। অন্যদিকে, অ্যালেক্স ক্যারি তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। ম্যাচে ফেরার কোনো সুযোগই পায়নি প্রোটিয়ারা। 

  • বিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, সিডনি: ড্র

বৃষ্টি বাঁধা হয়ে না দাঁড়ালে হয়তো এই টেস্ট দিয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করে ফেলতো অস্ট্রেলিয়ানরা। বিতর্ক ছড়ায় যখন খাজাকে ১৯৫ রানে রেখে ইনিংস ঘোষণা দেন অধিনায়ক কামিন্স। শেষদিনে ফলো অন করালেও টেলএন্ডারদের দৃঢ়তায় ম্যাচ বাঁচিয়ে তোলে প্রোটিয়ারা। 

  • বিপক্ষ ভারত, নাগপুরঃ ইনিংস এবং ১৩২ রানে হার

রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি এবং ভারতের লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তায় অস্ট্রেলিয়ার ১৭৭ রানের জবাবে বড় সংগ্রহ পায় ভারত। তৃতীয় দিনে মাত্র ৯১ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং ছয় মাস পর টেস্টে ফেরা রবীন্দ্র জাদেজা দুজনে মিলে শিকার করেন ১৫ উইকেট। 

  • বিপক্ষ ভারত, দিল্লী: ছয় উইকেটে হার

টেস্টের তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে অজিরা ২৮ রানে আট উইকেট হারিয়ে ফেললে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে অজি বোলাররা আশা জাগালেও আক্সার প্যাটেলের ৭৪ রানের ইনিংসে চালকের আসনে বসে স্বাগতিকরা। পরে রবীন্দ্র জাদেজা সাত উইকেট নিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন। 

  • বিপক্ষ ভারত, ইন্দোর: নয় উইকেটের জয়

এই টেস্ট দিয়েই যেন ঘুরে দাঁড়ানোর অবিস্মরণীয় গল্প লিখে ভারত। নিয়মিত অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের অনুপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন স্টিভেন স্মিথ। শুরুতে দলে না থাকা ম্যাট কুহনেম্যানের স্পিনে নাকাল হয়ে ভারত গুটিয়ে যায় ১০৯ রানেই। খাজা আরো একবার ম্যাচে এগিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়াকে কিন্তু শেষ ১১ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে বড় লিডের সুযোগ হারায় সফরকারীরা। কিন্তু নাথান লিওনের আট উইকেটের সুবাদে বড় জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link