কিভাবে এত পেটান দীনেশ কার্তিক!

বয়স ৩৭। তারপরও তিনি ভারতের ফিনিশার হিসেবে প্রথম পছন্দ। ২০০৭ বিশ্বকাপেও ছিলেন, আছেন এবারও। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছোট হয়ে আসা ম্যাচ ২ বলে খেললেন ১০ রানের ইনিংস। মানে ইনিংসে একটা চার ও একটা ছক্কা। আসলে এর রহস্যটা কি? কিভাবে এত পেটান দীনেশ কার্তিক?

বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সব দলই সেরে নিচ্ছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। ওপনিং জুটি, টিম কম্বিনেশন, ডেথ ওভারে কারা বল করবেন জয়-পরাজয় ছাপিয়ে মূখ্য হয়ে উঠছে এই বিষয়গুলোই। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়, বিশ্বকাপের আগে সবকিছু গুছিয়ে নিতে অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে সিরিজ খেলছেন রোহিত শর্মারা। অবশ্য নাগপুরে আট ওভারে নেমে আসা ম্যাচে শেষ হাসিটা হেসেছে স্বাগতিকরাই।

ভারতকে বোধহয় সবচেয়ে বেশি স্বস্তি দেবে অধিনায়ক রোহিত শর্মার স্বরূপে ফেরা। গত কয়েক মাস ধরেই আগের মতো ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারছিলেন না। আগের ম্যাচে ভালো শুরুর আশা জাগিয়েও অল্পতে ফিরে গিয়েছিলেন। তবে আজ অপরাজিত ছিলেন ২০ বলে ৪৬ রানের বিধ্ংসী এক ইনিংস খেলে। লোকেশ রাহুলকে রয়েসয়ে খেলবার সুযোগ দিয়েছে শুরু থেকেই মারমুখী ছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক।

জশ হ্যাজলউডের করা প্রথম ওভারের বল গ্যালারিতে পাঠান দুবার। ইনজুরি কাটিয়ে এদিন মাঠে ফিরেন জাসপ্রিত বুমরাহ এবং যথারীতি দুর্দান্ত বল করেছেন। অসাধারণ এক ইয়র্কারে ফেরত পাঠিয়েছেন ক্রমশই ভয়ংকর হয়ে উঠা প্রতিপক্ষ অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে। 

গত কয়েক মাসে ভারতের সবচেয়ে বড় পাওয়া বোধহয় অক্ষর প্যাটেল। রবীন্দ্র জাদেজার ইনজুরিতে দলে সুযোগ পাওয়া এই ক্রিকেটারের যেন পুর্নজাগরণ হয়েছে। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী বল করেছেন, উইকেট পাচ্ছেন। কালকের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় তারকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং টিম ডেভিডকে ফিরিয়েছেন প্রথম বলেই। আট ওভারের খেলায় দুই ওভার বল করে দুই উইকেটের রান দিয়েছেন মাত্র ১৩। অস্ট্রেলিয়া তো ম্যাচটা হেরে গেছে এক অক্ষর প্যাটেলের কাছেই।

এছাড়া তার ব্যাটিং নিয়েও দলের রয়েছে আলাদা পরিকল্পনা। ভারতের টপ অর্ডারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বলতে কেবলই ঋষাভ পান্ত, যিনি রান করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে তার দলে জায়গা পাওয়াই দাঁড়িয়েছে হুমকির মুখে। এত ডানহাতি ব্যাটারের আধিক্য থাকায় প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা সাজানো সহজ হয়ে যাচ্ছে বিধায় তার ব্যাটিংটা এক্সফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিত শর্মার দলের জন্য।

স্পিনের বিপক্ষে স্বাছন্দ্য অক্ষরকে কখনো মিডল অর্ডারে নামিয়ে রানরেটটা বাড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। কখনো দীনেশ কার্তিক, হার্দিক পান্ডিয়াদের আগে নেমে ইনিংস মেরামত করছেন, আবার কখনো শেষে নেমে খেলা শেষ করে ফিরছেন। সবমিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে ভারতের ভবিষ্যত অনেকাংশে নির্ভর করবে বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের উপর। 

ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় উপেক্ষিত থাকার পর পড়ন্ত বেলায় বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখাচ্ছেন দীনেশ কার্তিক। অবশেষে নিজের পরিশ্রমের ফলাফল পেতে শুরু করেছেন। এবারের বিশ্বকাপের ফিনিশারের ভূমিকার হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গী হবেন তিনি। পাশাপাশি রিশাভ পান্ত বাদ পড়লে উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে দাঁড়াতে হতে পারে তাকেই। এদিনও ম্যাচের শেষদিকে টানা উইকেট নিয়ে যখন মরণকামড় দিচ্ছে অজিরা। ঠিক তখনি নেমে টানা দুই বলে ছয়-চার হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করে দিয়েছেন কার্তিক।

আইপিএলে ব্যাঙ্গালুরুর ফর্মটা জাতীয় দলেও টেনে এনেছেন তিনি। আসিফ আলীর মতো অনুশীলনে দেড়শ ছয় কিংবা টিম ডেভিডের মতো আলোচনা না ছড়ালেও ঠিকই সবার আড়ালে নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন কার্তিক। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও উঠে এল সে কথাই। কার্তিকের ভাষায়,‘আমি খুব বেশি অনুশীলন করি না। নির্দিষ্ট কিছু জিনিসে মনোযোগ রাখার চেষ্টা করি এবং ম্যাচে পরিস্থিতি অনুযায়ী অনুশীলনেরই প্রতিফলন ঘটাই।’ 

তবে ভারতের জন্য দুশ্চিন্তার জায়গা হয়ে থাকবে ডেথ ওভারে বুমরাহর সঙ্গী খুঁজে না পাওয়া। হার্শাল প্যাটেলকে যোগ্য ভাবা হলেও তিনি নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না। গত ম্যাচেও শেষ ওভারে হজম করেছেন তিনটি ছক্কার মার। আর্শদ্বীপ সিং ভরসা জোগালেও তার অনভিজ্ঞতা আর ধারাবাহিকতার অভাব বড় মঞ্চে বিপদে ফেলতে পারে ভারতকে। সবমিলিয়ে রিশাভ পান্তের ফর্ম আর ডেথ বোলিং এর সমস্যার সমাধান করতে পারলে বিশ্বকাপে ফেবারিট হয়েই শুরু করবে রোহিত শর্মার দল। 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link