১৯৮৭, সংকটাপন্ন ভারতে জমাট বিশ্বকাপ

১৯৮৩ সালে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তোলে ভারত। সে সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দুনিয়া ত্রাস করছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা তখনকার সময়ে এক প্রকার দিবাস্বপ্নের মতোই ছিল।

সেই জয়ের পরই এক বৈঠকে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের অফিসিয়ালসের সাথে বসেছিলেন বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সভাপতি মিস্টার সালভে। সেখানে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট চিফ বলে উঠলো লর্ডসে প্রথমবার ভারতের বিশ্বকাপ জয়টা সত্যি অসাধারণ।

জবাবে সালভে বলেন, ‘আমার ইচ্ছে হয় যদি এই ম্যাচগুলো আমরা ভার‍তে খেলতে পারতাম, কত ভালো লাগতো যদি আমরা বিশ্বকাপটা ভারতের মাটিতে খেলতে পারতাম।’ এই কথার পর পাকিস্তানি চিফ এয়ার মার্শাল নুর খান বললেন, ‘আমরা কেন আমাদের দেশে বিশ্বকাপ খেলতে পারি না?’ সেখানেই যেন সালভে নড়েচড়ে বসলেন। তিনি বললেন, ‘তাই তো! আমরা চাইলেই তো বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারি।’

ব্যাস, সেখানেই কথা ফাইনাল। পাকিস্তানের সাথে যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে ভারত এমন প্রস্তাব জমা দেওয়া হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) কাছে।

১৯৮৭ বিশ্বকাপের আয়োজন হয় ইংল্যান্ডের চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি অর্থ বিড করে বিসিসিআই। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মাধ্যমে রিলায়েন্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ধিরুভাই আম্বানি এই টাকা দিবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর আইসিসি সভায় যখন ভারত ও পাকিস্তানকে যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হলো, এর কিছুদিন পরই হত্যা করা হয় ইন্দিরা গান্ধীকে! নিজ দেহরক্ষীর গুলিতেই মারা যান তিনি! যা ছিল ভারত তথা বিসিসিআইয়ের জন্য বেশ বড় এক ধাক্কা।

ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে রাজিব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেলেন। কিন্তু, ইন্দির গান্ধীর মতো একই পথে হাঁটেননি তিনি। রিলায়েন্সের সাথে যোগাযোগও করেননি এই বিষয়ে। অপরদিকে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে তখন নিযুক্ত করলেন ভিনি সিং’কে। ভিপি সিং এই পদ পাওয়ার পরই করলেন আরেক কাণ্ড! আয়কর বিভাগকে লাগিয়ে দিলেন আম্বানির পেছনে! ভিপি সিং’য়ের এমন নির্দেশে দুই পক্ষের মধ্যে এক প্রকার রক্তপাতহীন যুদ্ধ লেগে গেল। বিশ্বকাপে যে আম্বানি স্পন্সর করবে না, সেটা তখন এক প্রকার নিশ্চিত।

তাই, নতুন স্পনসর খোঁজ করা হচ্ছিল। বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হওয়ায় ‘গ্যারান্টি মানি’ হিসেবে প্রথমে চার কোটি রূপি দিতে হতো বিসিসিআইকে! এছাড়া বাকি দেশগুলোর ভ্রমণ খরচ, হোটেল ভাড়া এবং উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাবদ সব মিলিয়ে খরচ হবে ৩০ কোটি রূপি। এই ৩০ কোটির মাঝে তিনের দুই অংশ হিসেবে ২০ কোটি ভারত ও বাকি ১০ কোটি বহন করবে পাকিস্তান।

কিন্তু, এই অর্থ বিসিসিআই পাবে কোথায়? বিসিসিআই সে সময়ে আর্থিকভাবে খুব বেশি ভালো অবস্থানে ছিল এমনটাও নয়। স্পনসর ছাড়া এই টাকা দেওয়া বিসিসিআইর জন্য ছিল অসম্ভব ব্যাপার। ভাবনা চিন্তার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো স্পনসর এবং ম্যাচ ব্রডকাস্টিং থেকে যে রয়্যালিটি পাবে সেটা দিয়েই খরচ মেটানোর চিন্তা করলো বিসিসিআই।

ব্রডকাস্টিং চ্যানেল সেই অর্থ টিভিতে এবং মাঠের বিজ্ঞাপন থেকেই আয় করবে। কিন্তু, সমস্যা দেখা দিল আরেক জায়গায়! এই আয়ের অংশ বিসিসিআই পাবে বিশ্বকাপের পর! কিন্তু, বিসিসিআইকে ডেডলাইন দেওয়া ছিল ১৯৮৪ এর ডিসেম্বরের মধ্যে ৪ কোটি রূপি ‘গ্যারান্টি মানি’ হিসেবে অগ্রিম দিতে হবে। তাও আবার রুপিতে নয় পাউন্ডে দিতে হবে! যা হিসেব করলে দেখা যায় প্রায় ১.৮ মিলিয়ন পাউন্ডস হয়।

ওই সময় ভারতের বৈদেশিক যে সঞ্চয় খাত ছিল সেটা বেশ সীমিতই ছিল। তাই, এত পাউন্ডস কিভাবে দিবে সেটা নিয়েও দেখা দেয় সংশয়। এক কথায় বলতে গেলে, বিসিসিআই তখন এমন কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারীর খোঁজ করছিল যারা পাউন্ডস দিতে পারবে!

বিনিয়োগকারী পাওয়াটা নেহায়েত কম কিছু নয়। একটা কোম্পানি কিংবা ব্যক্তি তখনই কোথাও বিনিয়োগ করবে যেখানে তার কোম্পানির শেয়ার কিংবা পন্য বিক্রি বৃদ্ধির নিশ্চয়তা থাকবে। কিন্তু তখনকার সময়ে অনুন্নত দেশ হিসেবে ভারতের বৈদেশিক মার্কেটে অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। যার কারণে যিনি বিনিয়োগ করবে, বিনা স্বার্থে কিংবা লাভের আশা না করেই বিনিয়োগ করতে হবে এমন এক অবস্থা ছিল!

বিনা স্বার্থে এতগুলো অর্থ? হাসির ব্যাপার নয়কি? তবুও চেষ্টা চালিয়ে যায় বিসিসিআই। কোকাকোলা, রথম্যান্স, গ্রিন্ডলেস ব্যাংক, কোদাক, জিল্যাট, মিটসুবিশি’র মতো বড় বড় কোম্পানির সাথেও যোগাযোগ করেছিল তাঁরা। তবে, কারো কাছ থেকেই আশানুরূপ সাড়া পায়নি বিসিসিআই। এমনকি ভারতের বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাথেও যোগাযোগ করা হয়। হ্যাঁ, কিছুটা বিনিয়োগ অবশ্য পাওয়া গেছিল। কত জানেন? সব মিলিয়ে মাত্র ৩৮ লাখ রুপি! যেখানে বিসিসিআই’র প্রয়োজন ছিল ৪ কোটি রুপি।

ডিসেম্বর যতই এগিয়ে আসছিল বিসিসিআই আরো হন্তদন্ত হয়ে খোঁজ করছিল বিনিয়োগের ব্যাপারে। এর মাঝে বিসিসিআই সভাপতি সালভে আবারো দেখা করলেন রাজিব গান্ধীর সাথে। মায়ের মৃত্যুর পর রাজিব তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের পার্টি নিয়েই কাজে ব্যস্ত। সালভে রাজীবের কাছে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে ১.৮ মিলিয়ন পাউন্ডস চাইলো!

বিসিসিআইকে এই পরিমাণ অর্থ দিতে হলে ভারতের বৈদেশিক অর্থের যে সঞ্চয় ছিল তার প্রায় পুরোটাই উঠিয়ে নিতে হত! তাও এমন একটা দেশে যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষ রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের শেষ সম্পদটুকুও স্রেফ খেলার জন্য দিয়ে দিতে হত! রাজীভ গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তখনো ৬ মাসও হয়নি। এই সিদ্ধান্ত রাজীব গান্ধীর জন্য রাজনৈতিক দিক থেকে এক প্রকার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারতো। তিনি এও জানতেন এই অর্থ ভারত দিতে না পারলে বিশ্ব দরবারে তখন লজ্জার মুখে পড়তে হবে।

১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ের পর ক্রিকেট তখন ভারতের সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয়। ভারত কোনো স্পনসর পাবে এবং সেই অর্থ সেখান থেকে উঠে আসবে এমন আশায় অনেক চিন্তাভাবনার পর ভারত সরকার ১.৮ মিলিয়ন পাউন্ডস দিলো বিসিসিআইকে। যা দিয়ে ‘গ্যারান্টি মানি’ শোধ করা যাবে। কিন্তু স্পনসর খোঁজার আগেই সামনে আসে আরেক বিপত্তি।

সে সময় ভারতের একমাত্র সরকারি চ্যানেল ‘দূরদর্শন’ ম্যাচ সম্প্রচার করা নিয়ে বিসিসিআইকে কোনো প্রকার রয়্যালিটি দিতে পারবে না বলে না করে দিল। যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ কোটি রুপি! বিসিসিআই’র যখন অর্থের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি ঠিক তখনই মরার উপর খাড়ার ঘা’য়ের মতো দূরদর্শন থেকে এমন বার্তা এল।

অবশ্য দূরদর্শনেরও দোষ ছিল না। বিসিসিআই আইসিসিকে নিশ্চিত করেছিল যে ভারত সর্বাধুনিক ব্রডকাস্টিং ব্যবস্থা করবে বিশ্বকাপের জন্য। যা করতে খরচ হবে প্রায় ৩০ কোটি রূপি! এবং এর পুরোটাই দিতে হবে দূরদর্শনকে। হয়তো দূরদর্শন এই অর্থ খেলা থেকে আয় করতে পারবে, আবার পুরো অর্থ নাও উঠে আসতে পারে! এমন অনিশ্চয়তার কারণেই কিন্তু তাঁরা বিসিসিআইকে অতিরিক্ত রয়্যালিটির ৬ কোটি রূপি দিচ্ছে না এমনটা নিশ্চিত করে দেয়।

দূরদর্শনের সাথে চুক্তি করতে হলে এই শর্তেই রাজী হতে হবে বিসিসিআইকে। এছাড়া অবশ্য উপায়ও ছিল না। বিসিসিআইর অবস্থা তখন এমন যে নিজের দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন করেও ব্রডকাস্টিং নিয়ে বিপাকে আছে! তখনো প্রয়োজন ছিল ২০ কোটি রূপির! কোনো ব্যবস্থাই করতে পারছিল না বিসিসিআই।

এই খবর ইংল্যান্ড জানতে পারলে তাঁরা আইসিসিকে অভিযোগ করে ভারতকে বিশ্বকাপ আয়োজন থেকে বঞ্চিত করবে! তাই অর্থের জোগাড় না হওয়া পর্যন্ত বিসিসিআইর পক্ষ থেকে এই কথাও সবাইকে গোপন রাখতে বলা হলো।

উপায়ন্তর না পেয়ে বিসিসিআই ধরনা দিলো ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কোম্পানি (বিবিসি) ও মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) অভিজ্ঞদের কাছে; যারা বিশ্বকাপ পরিচালনায় ছিলেন বেশ। তাদের সাথে বসে ছক কষা হলো নতুন এক পরিকল্পনার।

অবশ্য বছর খানেকের মাঝেই রাজিব গান্ধী ও ভিপি সিংয়ের সম্পর্ক খারাপ হতে লাগলো! এবং সবশেষে সম্পর্কে ফাটলও ধরে! ভিপি সিং’কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পাঠানো হলো। আর এই ঘটনা যেন বিসিসিআইয়ের জন্য সুযোগ করে দিল! সাথে সাথে সালভে ফোন করলেন ধিরুভাই আম্বানিকে। আর জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি আগ্রহী?’

আম্বানি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি আগ্রহী। কিন্তু এক শর্তে!’

কি শর্ত? – বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যকার ম্যাচের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে খেলা দেখবেন! এমন শর্তে অবশ্য রাজিব গান্ধী রাজিও হলেন। কারণ এই শর্ত মেনে নিলে যে ভারতেরই ফায়দা হচ্ছে!

চুক্তিও সই হলো! আম্বানি শুরুতেই ৪ কোটি রুপি দিলো ভারত সরকারকে। এরপর আরো দেড় কোটি দিলো টাইটেল স্পনসরের জন্য। রিলায়েন্স গ্রুপের পক্ষ থেকে ধিরুভাই আম্বানির ছেলে অনিল আম্বানিকে করা হলো আয়োজক কমিটির প্রধান। অনিল আম্বানিকে প্রথম সাক্ষাৎকারে যখন জিজ্ঞেস করা হলো বিশ্বকাপের জন্য আপনাদের পরিকল্পনা কি? তিনি প্রতিত্তোরে বললেন, ‘কি? বিশ্বকাপ! আমি জানি না, এটা কি?’

প্রশ্নকর্তা অবাক হয়ে আবারো বললেন আপনি জানেন না আপনি যে স্পনসর করছেন? অনিল আম্বানি বললেন, ‘ওহ আচ্ছা সেটা? সেটা তো বিশ্বকাপ না! সেটা রিলায়েন্স কাপ! এখন থেকে শুধু এই নামেই ডাকবেন অন্য কিছু না।’

এটাই ছিল মূলত রিলায়েন্সের পরিকল্পনা। সাধারণত স্পন্সররা টাকা দেয় এই আশায় যে তাদের পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু, আম্বানির শুধু একটাই লক্ষ্য ছিল ব্র‍্যান্ড পরিচিতি। এই ওয়ার্ল্ডকাপ দিয়েই যাতে পুরো ভারত এবং বিশ্ববাসী রিলায়েন্স সম্পর্কে জানতে পারে সেটাই ছিল আম্বানির টার্গেট। এমনকি অর্গানাইজিং কমিটির নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়! ভারত-পাকিস্তান যৌথ সংগঠক কমিটি থেকে নামকরণ করা হয় ‘রিলায়েন্স কাপ অর্গানাইজেশন কমিটি’ হিসেবে।

এরপর সালভে আবারো রাজীব গান্ধীর শরনাপন্ন হন দূরদর্শনের ব্যাপার নিয়ে। এরপর রাজীবের মাধ্যমে দূরদর্শনের সাথে আবারো সমঝোতায় আসে বিসিসিআই। তাঁরা সব ব্রডকাস্টিং খরচ বহন করতে রাজি হলো কিন্তু বিসিসিআইকে এর বিনিময়ে কোনো রয়্যালটি দিবে না এমন শর্তে। তবে, বিজ্ঞাপন থেকে তারা যে আয় করবে সেটার কিছু অংশ বিসিসিআইকে দেবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।

এরপর আম্বানি মাঠের ভেতরের সব বিজ্ঞাপনস্বত্ব কিনে নিলো! এমনকি যত স্টেডিয়ামে খেলা হবে তার প্রত্যেকটিতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মতো পোস্টার কিংবা বিলবোর্ডের জন্য রিলায়েন্স নিজেদের অর্থায়নে স্টেডিয়ামে কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন করবে বলেও জানান আম্বানি। মোট ২.৬ কোটি রুপিতে ভারতের সব স্টেডিয়ামে বিজ্ঞাপনস্বত্ব কিনে নেয় আম্বানি। এর থেকে যে আয় হবে তার কিছু অংশ বিসিসিআই পাবে বলেও চুক্তি হয়।

স্টেডিয়ামে খালি জায়গায় রিলায়েন্স কেমন বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বলে মনে করেন?

রিলায়েন্স এই বিজ্ঞাপনস্বত্ব থেকে শেয়ার বিক্রি শুরু করল! এবং ফুজি ফিল্ম, সেইকো, বাটা, ভিআইপি’র মতো বড় বড় কোম্পানি গুলো জলদি এই শেয়ার কিনে নিল! এমনকি পুরো বিশ্বকাপে ফেব্রিক পোশাক দেওয়ার দায়িত্ব নেয় রিলায়েন্স নিজেই। এতে বিসিসিআইও বেশ অবাক হলো! সালভে তো বলেই বসলেন এই কোম্পানি গুলো এতোদিন কোথায় ছিল? যখন আমাদের অর্থের প্রয়োজন ছিল।

এতকিছুর পরেও অর্থসংকটে ছিল বিসিসিআই। খেলোয়াড়দের থাকার জায়গা, খাবারের ব্যবস্থা করতেও প্রয়োজন ছিল মোটা অংকের অর্থ। সে সময়ে আবারো ত্রাণকর্তা হিসেবে রূপ নেয় রিলায়েন্স। আম্বানি প্রতিটি দেশের খেলোয়াড়দের জন্য টপ ক্লাস হোটেলের ব্যবস্থা করলো। কিন্তু আম্বানি এই খাতে কেনো টাকা বিনিয়োগ করলেন? তাঁর লাভ আছে কি এখানে?!

আম্বানি দূরদর্শন টিভিতে ছয় এপিসোডের একটি অনুষ্ঠান তৈরি করলো যার নাম ‘রিলায়েন্স ওয়ার্ল্ডকাপ ১৯৮৭’। আর এই শোয়ে খেলোয়াড়দের হোটেল ব্যবস্থা সহ সাক্ষাৎকারও দেখানো হলো। এবং পরবর্তীতে এই ফাইভ স্টার হোটেল গুলো বিদেশি পর্যটকদের কাছেও বেশ পরিচিতি পায়। হোটেলগুলোর সুনাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনও জানা যায় যে, আম্বানির কাছ থেকে কোনো অর্থই তারা নেননি! এর মাঝে রিলায়েন্সের মার্কেটিংটাও বিশ্বকাপের আগে বিশ্বব্যাপী জানান দিলো!

অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে (ইংল্যান্ডের বাইরে প্রথম) বিশ্বকাপের পর্দা উঠলো। গ্রুপ পর্বে দুই আয়োজক দল ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের গ্রুপে শীর্ষে থেকে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায়। কিন্তু সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয় টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় ভারত! সেবার এত কিছুর পরেও ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ভারত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link