মাঠ ছেড়ে বের হওয়ার সময় তার হাতে একটা বল।
একটু যেনো লজ্জা, একটু যেনো নতুন রোমাঞ্চ মেশানো তার মুখে। নতুন হওয়ারই কথা। সেঞ্চুরির পর কিভাবে ব্যাট তুলে ধরতে হয়, সেটা ভালোই জানেন রবিউল ইসলাম রবি। কিন্তু ৫ উইকেট পাওয়ার পর বল দেখানোর অভিজ্ঞতা তো এই প্রথম।
নিজেই হেসে বললেন, ‘পাচ উইকেট পেয়ে যাবো, এটা কল্পনা করিনি। তাও আবার এই টুর্নামেন্টের প্রথম ৫ উইকেট।’
ব্যাপারটা অনেকটা আফতাব আহমেদের মতো।
বাংলাদেশের হয়ে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে প্রথম ৫ উইকেট কার? উত্তরটা জানা না থাকলে আফতাবের নাম অনুমান করা খুব কঠিন। তেমনই এই টুর্নামেন্টে রবি যে প্রথম ৫ উইকেট শিকারী হয়ে যাবেন, এটা অনুমান করা খুব কষ্ট ছিলো।
যারা ঢাকার ক্রিকেট নিয়মিত অনুসরণ করেন, তারা জানেন রবি মূলত এবং প্রায়শ ব্যাটসম্যান। মাঝেমধ্যে বল করে থাকেন। সেই রবি এবার ৫ উইকেট পেয়ে নিজের বিষ্ময়টা লুকালেন না। বলছিলেন, ‘ওই ম্যাচের কথাই ধরুন। দুই দলে কত সব নিয়মিত বোলার। এ ছাড়া সব দলেই তো নিয়মিত বোলাররা আছে। এর মধ্যে আমি প্রথম বোলার হিসেবে ৫ উইকেট পেয়ে যাবো, এটা ভাবা কঠিন ছিলো।’
রবির কাছে এই ৫ উইকেটের আরও একটু গুরুত্ব আছে। এই ৫ শিকারের জন্য সাকিব আল হাসানের মতো উইকেটও আছে।
অবশ্য ৫ উইকেট এই প্রথম পেলেও টুর্নামেন্টে রবির বোলিং কীর্তি এই এই টুর্নামেন্টে প্রথম নয়। বরিশালের বিপক্ষে ২০ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। এখন পর্যন্ত ১২ উইকেট নিয়ে রীতিমতো সেরা উইকেটশিকারীদের তালিকায় আছেন।
তা রবি হঠাৎ এমন বোলার হয়ে উঠলেন কেমন করে?
রবি অবশ্য বলছেন, তিনি হঠাৎ বোলার হননি। বোলিং তিনি সবসমই টুকটাক করে আসছেন। সমস্যা হলো, সাফল্যটা এভাবে আগে কখনো ধরা দেয়নি, ‘আমি কিন্তু ঢাকা লিগেও বেশ বল করি। পাওয়ার প্লেতেই বল করি। উইকেট আগে বেশী পাইনি বলে খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু বোলিং আগে থেকেই করি। লিস্ট-এ খেলায় আমার ৩৪টা উইকেটও আছে। কিন্তু সেভাবে আলোচনা হয় না।’
এটাকে রবির ক্যারিয়ারেরই সংকট বলা চলে। লম্বা সময় ধরে, সেই ২০০৮ সাল থেকে শীর্ষ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলছেন। কিন্তু সেভাবে আলোচনায় চলে আসতে পারেননি। এই টি-টোয়েন্টির কথাই ধরুন না কেনো। তাকে তো টি-টোয়েন্টি দলগুলোতেই সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বলা হয়, তিনি লংগার ভার্শন খেলোয়াড়।
রবি বলছিলেন, খেলার সুযোগ না পেলে তিনি প্রমাণ করবেন কি করে যে, তিনিও টি-টোয়েন্টি পারেন, ‘আমি তো সব ফরম্যাটের জন্যই প্রস্তুত থাকি। কিন্তু সমস্যা হলো, খেলার সুযোগ পাই না। আমি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। বিপিএলে সব দলের টপ অর্ডারে দেশের তারকারা, নইলে বিদেশীরা থাকে। ফলে ম্যাচ পাই না। আমাদের তো আর টি-টোয়েন্টি হয় না। গত বছর একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয়েছিলো। সেখানে প্রথম ম্যাচেই ৭০ রান করেছিলাম। আমাকে তো খেলার সুযোগ দিতে হবে।’
এই ব্যাপারটা শুধু টি-টোয়েন্টির জন্য নয়, লংগার ভার্শনের জন্যও সত্যি। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র ৩৩টি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচ খেলেছেন। তিনি যে খেলার সুযোগ কম পান, সেটার একটা ব্যাখ্যাও জানা আছে রবির, ‘আমি খুলনা দলের খেলোয়াড়। খুলনা শহরেই বাড়ি। আর এ কারণেই সমস্যাটা হয়। খুলনা দলে তো তারকার ছড়াছড়ি। এখানে একাদশে সুযোগ পাওয়া খুব কঠিন। এমন হয় যে, ১১ জন টেস্ট ক্রিকেটার খেলছে। আমি আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করেও পরের ম্যাচে বসে থেকেছি। অন্য কোনো বিভাগের খেলোয়াড় হলে আমার ম্যাচ আরও বেশী থাকতো।’
তারপরও রবি স্বপ্ন বোনেন। স্বপ্ন দেখেন একদিন এই সব প্রতিকূলতা জয় করে তিনি নিয়মিত খেলবেন এবং জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে জড়াবেন, ‘এই স্বপ্নেই তো খেলা চালিয়ে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যাই হোক, আমি লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। আমার স্বপ্ন, একবার হলেও জাতীয় দলে খেলা।’