ফিটনেস, নেতৃত্ব কিংবা ফর্ম— একটা সময় পর্যন্ত কোনো কিছুতেই কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না রোহিত শর্মা। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে পাঁচ বার আইপিএল শিরোপা জেতানো রোহিত শর্মা ভারতকেও এনে দিবেন আইসিসি’র শিরোপা। এমন আশাতেই বুক বেঁধেছিল ভারতীয় সমর্থকরা। তবে সে আশায় গুঁড়েবালি।
প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেলেও ভারতে আসেনি কোনো আইসিসি শিরোপা। বিরাট কোহলির পর রোহিত শর্মার হাত দিয়েও ঘটেনি সেই অপেক্ষার অবসান। এর মধ্যে আবার নেতৃত্ব পাওয়ার পর ব্যাট হাতে নিজের চেনা ছন্দটাই হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন রোহিত শর্মা। একে তো ভারতীয় দল সামলানোর চাপ, তার উপর আবার ব্যাট হাতে অফফর্ম। সব মিলিয়ে রোহিত শর্মাকে নিয়ে ভারতের ক্রিকেট পাড়ায় সমালোচনার স্রোত বইতে সময় লাগেনি।
সমর্থক থেকে বিশ্লেষক, এমনকি সাবেক ক্রিকেটারদেরও চক্ষুশূল হতে শুরু করেন রোহিত। ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব একবার রোহিতের ফিটনেস ইস্যুতে তাঁকে ‘মোটা’ বলেই আখ্যায়িত করেছিলেন। ব্যাটিং নিয়েও কম সমালোচনা হয়নি। ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটার সুনীল গাভাস্কারের তীক্ষ্ণ সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হয়েছিলেন রোহিত শর্মা।
সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর আগেও রোহিত শর্মার উপরে ছিল পাহাড়সম চাপ। তবে সেই চাপ আস্তে আস্তে সরিয়ে ফেলছেন ভারতীয় এ ব্যাটার। রান ফোয়ারায় নিজেকে ভাসাচ্ছেন গোটা বিশ্বকাপ জুড়েই। আর সেই সাথে দলও এগিয়ে যাচ্ছে দুর্দান্ত গতিতেই। সেমির পথে এক পা দিয়েই রেখেছে টিম ইন্ডিয়া।
এবারের বিশ্বকাপে রোহিতের শুরুটা হয়েছিল শূন্য দিয়ে। তবে শূন্যর তিক্ততা মুছে গিয়েছিল ভারতের জয়ে। রোহিত শর্মা এরপর শূন্য থেকেই নিজেকে শীর্ষে নেওয়ার পথে ছুটেছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করলেন। ঐ এক সেঞ্চুরিতেই একাধিক রেকর্ডে পৌঁছে গেলেন রোহিত। ক্রিস গেইলকে হটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডে নাম লেখান ভারতীয় এ ব্যাটার।
এরপর থেকে রোহিতের ব্যাটেই উড়ন্ত শুরু পেয়েছে ভারত। আফগানদের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর আরো দুটি ম্যাচে পঞ্চাশ পেরিয়েছেন রোহিত। রোহিতের ব্যাটে রান উৎসবে ভারতও প্রতি ম্যাচেই জয়ের মুখ দেখেছে। সব মিলিয়ে রোহিতের রাজসিক ফর্ম আর ভারতের অপরাজেয় হয়ে ওঠা যেন একই সেতুতে মিলেছে।
চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৬ ইনিংসে ৬৬.৩৩ গড়ে ৩৯৮ রান করেছেন রোহিত। যেখানে তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট ছিল ১১৯.১৬। এই সংখ্যাগুলোই বলে দেয় কতটা দুর্দান্ত সময় পার করছেন রোহিত। তবে রোহিতের তৃপ্ততা এখানে নয়। অধিনায়ক হিসেবে ভারতের বিশ্বকাপ খরার ১ যুগের অবসান ঘটনার দিকেই চোখ তাঁর।
একবার তো বলেই ছিলেন, ‘২০১৯ বিশ্বকাপে আমি ৫ টা সেঞ্চুরি করেছিলাম। তবে ভারত বিশ্বকাপ জেতেনি। এবার যদি একটা সেঞ্চুরি না করি আর বিশ্বকাপ জেতে, তাতেই আমি খুশি হবো।’ রোহিতের এমন ভাবনায় বলে দেয়, সেঞ্চুরিক্ষুধা নয়, বরং বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষুধায় তাঁকে এত দুর্দান্ত ব্যাটিং করার অনুপ্রেরণা দেয়। রোহিত এই যাত্রায় সফল হবেন কিনা তা সময়ই বলে দিবে, তবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে রোহিত এখন স্মরণীয় একটা নামই বটে। কারণ বৈশ্বিক এ আসরের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান যে তিনিই। বিশ্বকাপের মঞ্চে ৭ সেঞ্চুরির সঙ্গী শুধুই রোহিত।