দরজায় কড়া নাড়ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ভারতের মাটিতে ক্রিকেটীয় এ মহাযজ্ঞের আর মাস চারেকও বাকি নেই। এই মুহূর্তে তাই বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করা দলগুলো স্কোয়াড নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আছে। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও।
ভারতের বিমানগামী দলটায় কারা থাকবেন, তা নিয়ে যেন জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দুই একটা জায়গায় বাদে বাংলাদেশ দলটা এখন প্রায় চূড়ান্তই বলা যায়। সেই দুই একটা জায়গা নিয়েই আগামী আফগানিস্তান সিরিজে কয়েকজনকে নিয়ে চলবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। নির্বাচক প্যানেল থেকে টিম ম্যানেজমেন্ট সেই আভাস আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিল।
তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ দলটা বেশ সম্ভাবনাময়ই হতে যাচ্ছে। একদিনের ক্রিকেটে সুখস্মৃতির সাথে বাংলাদেশের সখ্যতা অনেক আগে থেকেই। তার উপর উপমহাদেশীয় কন্ডিশন। সব মিলিয়ে বড় কিছু অর্জনের লক্ষ্যেই ভারতে পা রাখবে বাংলাদেশ। এখন দেখার পালা, ১৫ জনের স্কোয়াড থেকে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ একাদশ ঠিক কেমন হয়। খেলা ৭১ অবশ্য একটা সম্ভাব্য একাদশ দাঁড় করেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক।
অতি নাটকীয় কিছু না হলে ইনিংস শুরুর দায়িত্বটা পেতে যাচ্ছেন তামিম ইকবালই। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে সামলাবেনও এই বাঁহাতি ওপেনার। তামিমের সাথে ওপেনিংয়ে কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই থাকছেন লিটন দাস। যদিও ২০২২ এর মতো এ বছরে ঠিক ততটা ছন্দে নেই লিটন। তবে নিজের দিনে লিটন প্রতিপক্ষের জন্য কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন, তার প্রমাণ মিলেছে আগেই। তাই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ একাদশে তামিম-লিটনকে দেখার সম্ভাবনাই বেশি।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের নিউক্লিয়াস হয়ে উঠছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টেস্ট থেকে ওয়ানডে, ওয়ানডে থেকে টি-টোয়েন্টি, তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০২৩ সালে বলতে গেলেই সব ফরম্যাটেই রীতিমত রানবন্যা বইয়ে দিয়েছেন এ বাঁহাতি ব্যাটার। তিন নম্বরে তাই জায়গাটা এক প্রকার থিতুই হয়ে গিয়েছে শান্তর জন্য। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের একাদশেও এর ব্যত্যয় ঘটার সুযোগ খুবই কম।
২০১৯ বিশ্বকাপে নাম্বার তিনে ব্যাট হাতে দারুণ সফল ছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে এবার চার নাম্বারেই ব্যাট করতে দেখা যেতে পারে বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারকে।
পাঁচ নম্বরে শেষ কয়েকটা সিরিজে দুর্দান্তই খেলেছেন এ বছরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা তাওহীদ হৃদয়। এখন পর্যন্ত যেভাবে সক্ষমতার প্রতিদান দিয়েছেন এ ব্যাটার, তাতে সামনের সিরিজে ঢালাওভাবে ব্যাটে ছন্দচ্যূতি না ঘটলে হৃদয়ের জন্য বিশ্বকাপ একাদশেও পাঁচ নম্বর জায়গাটা একেবারে পাঁকাই বলা যায়।
হৃদয়ের পরে ছয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে মুশফিককে। ঘরের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে ক্যারিয়ারে নতুন এক মোড় দিয়েছেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। নতুন ব্যাটিং রোলে সফল হওয়ায় তাই বিশ্বকাপেও ছয় নম্বরে দেখা যেতে পারে মুশফিককে।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় একটি জায়গাতেই একটু বেগ পেতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। সেটি, ৭ নম্বর। কারণ এই একটি জায়গাতেই ঠাই পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বেশ কিছু ক্রিকেটার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে ফিরেছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। এখন আসন্ন এ সিরিজে আফিফ দারুণ কিছু করলে ম্যানেজমেন্টকে আর বিকল্প খোঁজার দৌড়ে ক্লান্ত হতে হবে না। তবে আফিফের মতো এই পজিশনে বিবেচনায় রয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক, নুরুল হাসান সোহান, ইয়াসির রাব্বিরাও। আবার কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে এই জায়গায় সৌম্য সরকার কিংবা শেখ মেহেদী হাসানকেও বাজিয়ে দেখছেন।
৮ নম্বরের জন্য মেহেদি হাসান মিরাজ এক প্রকার অটোমেটিক চয়েসই বলা যায়। সর্বশেষ সিরিজে যদিও সাত নম্বরে খেলেছিলেন। খুব একটা খারাপ করেননি যদিও। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে মিরাজকে হয়তো আটেই খেলাবে টিম ম্যানেজমেন্ট। সেটা কখনও সাতেও হতে পারে।
একাদশে বাকি তিনটি জায়গার জন্য লড়াইয়ে থাকবে ৫ পেসার ও ১ জন স্পিনার। এটা অবশ্য কন্ডিশন বিবেচনাতেই টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে নির্ধারিত হবে। তবে একাদশে সাকিব আর মিরাজ স্পিনার থাকায় বাড়তি আরেকজন স্পিনার নিয়ে বাংলাদেশের খেলার সম্ভাবনা কমই বলা চলে।
তাই তাসকিনের পাশাপাশি মুস্তাফিজ, হাসান মাহমুদকে দেখা যেতে পারে একাদশে। অবশ্য ওয়ানডে ফরম্যাটে এবাদতও রয়েছেন দারুণ ছন্দে। তাই তিনিও একাদশে থাকার যোগ্য দাবিদার। তবে তিন পেসার নিয়ে দল সাজালে হাসান কিংবা এবাদতের মধ্যে একজনের কপাল পোড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
অবশ্য চার পেসার নিয়ে দল সাজালে কোনো শঙ্কাই থাকছে না। এই চারজনকেই একসাথে দেখা যাবে। সে ক্ষেত্রে মেহেদি অথবা আফিফের মধ্যে একজনকে থাকতে হবে একাদশের বাইরে।