ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়েছিলেন, হাঁটুর ওপর ঝুঁকে পড়েছিলেন, চোখেমুখে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট। ফিজিও ছুটে এসেছিলেন, কিন্তু ব্যথার তীব্রতায় শরীর ছুঁতেই দিচ্ছিলেন না তিনি। ক্র্যাম্পে পা যেন অবশ হয়ে এসেছিল, যেন শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে! কিন্তু তার চোখের ভাষা বলে দিচ্ছিল, লড়াই এখানেই শেষ নয়, হতে পারে না।
শরীর যখন আর চলছে না, তখনো মানসিক শক্তির অদৃশ্য স্রোত তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। ব্যথা ভুলে আবার উঠে দাঁড়ালেন। দাঁড়িয়েই থাকলেন না — ব্যাট চালালেন, চার মারলেন! রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে দৌড়ে গেলেন, এমনকি দৌড়ানোর চেয়েও বড় কিছু করলেন — প্রাণপণ ডাইভ দিলেন, রান আউটের ছোবল এড়িয়ে বাঁচলেন! প্রতিটি মুহূর্তে যেন তিনি বলে যাচ্ছিলেন—তাওহীদ হৃদয় এত সহজে হারার জন্য আসেননি।
বাংলাদেশের ইনিংস যখন ধ্বংসস্তূপের মতো পড়ে ছিল, যখন ৩৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল দল, তখন এই তরুণ একাই দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়লেন। একে একে গড়ে তুললেন দলের ইনিংস, স্বপ্নের মৃত্যু যেখানে প্রায় নিশ্চিত, সেখানে বুনলেন নতুন জীবনের গল্প।
তার প্রতিটি শটে ছিল সাহস, প্রতিটি রান ছিল এক অদম্য লড়াইয়ের সাক্ষর। অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ — স্টারবয়ের ব্যাট থেকে শতরানের গল্প! ১১৪ বলে ১০০ রান, এক মহাকাব্যিক ইনিংস। ব্যাট তুলে ধরলেন, হেলমেট খুলে দুই হাত তুলে স্মরণ করলেন স্রষ্টাকে। সেই মুহূর্তে যেন দুবাইয়ের আকাশও আলো ছড়াল, যেন ক্রিকেট দেবতারা মাথায় হাত রাখলেন এক যোদ্ধার ওপর।
কিছু ইনিংস থাকে, যা ম্যাচের গণ্ডির ভেতর সীমাবদ্ধ থাকে না, যা পরিসংখ্যানের পাতায় আটকে থাকে না। কিছু ইনিংস থাকে, যা বেঁচে থাকে অনন্তকাল, যা মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গে মিশে যায়, যা খেলা নামের শিল্পকে তুলে দেয় এক নতুন উচ্চতায়।
তাওহীদ হৃদয়ের এই ইনিংস ছিল তেমনই এক অমর সৃষ্টি—একটি ম্যাচ জেতার জন্য নয়, বরং ক্রিকেটের সৌন্দর্যকে উদযাপন করার জন্য। অনেকেই ম্যাচ জেতে, কিন্তু হৃদয় জয় করতে পারে ক’জন? তাওহীদ হৃদয় সেই বিরল এক নাম, যে আজ হাজারো মানুষের হৃদয় জিতে নিলেন।
বাংলাদেশ ২২৮ অবধি গেল। শেষ ওভারে গিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন হার্দিক পান্ডিয়াকে। অর্থহীন এক ক্যাচ। ইনিংস শেষে বল হাতে পাঁচ উইকেট নেওয়া শামিকে ঘিরে মাঠ ছাড়ল ভারত। হৃদয় মাঠ ছাড়লেন আর কোথায়, তিনি আছেন হৃদয়ের মণিকোঠায়।