ক্রিকেট কেবলই পুরুষদের খেলা নয়। বরং, মেয়েদের ক্রিকেট কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগিয়েও আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা মেয়েদের ক্রিকেট দিয়েই শুরু হয়েছিল। এখন নারী ক্রিকেট ও পুরুষদের ক্রিকেট প্রায় সমান তালেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও সবার প্রতি সমান ‘সিরিয়াস’।
তবে, আজকে নারী ও পুরুষ ক্রিকেটের তুলনা নয় – তাঁদের জুটির বাঁধার গল্প বলবো। ব্যক্তিজীবনে ক্রিকেটার অনেকেই বিয়ে করেছেন অন্য কোনো ক্রিকেটারকে। সেসব স্বামী স্ত্রীর জুটিগুলোকে নিয়ে দিব্যি একটা একাদশ বানিয়ে ফেলা যায়।
- মিশেল স্টার্ক ও এলিসা হিলি (অস্ট্রেলিয়া)
কিংবদন্তি চাচা ইয়ান হিলির মত এলিসা হিলিও উইকেটরক্ষক। তাঁর স্বামী হলেন মিশেল স্টার্ক – যাকে সময়ের অন্যতম সেরা পেসার বললে বাড়িয়ে বলা হয় না একদম। ২০১৫ সালে তাঁদের বাগদান হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল বিয়ে করেন। স্টার্ক ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ জেতেন, সেবার আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন। অন্যদিকে, এলিসা হিলি মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতেন পাঁচবার। এর মধ্যে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ রান করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন। এরপর ২০২০ সালে তিনি ছিলেন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়।
- রজার প্রিডক্স ও রুথ ওয়েস্টব্রুক (ইংল্যান্ড)
ষাটের দশকে ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ছিলেন রজার প্রিডক্স। মাত্র তিন টেস্ট খেললেও ৪৪৬ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে করেন ২৫ হাজারের ওপর রান। বিয়ে করেন নারী দলের রুথ ওয়েস্টব্রুককে। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান রুথ ১৯৮৮ সালে ইংল্যান্ড দলের কোচ হন। তিনি ইংলিশ মেয়েদের প্রথম স্থায়ী কোচ। ১৯৯৩ সালে ৬৩ বছর বয়সে কোচ হিসেবে ইংলিশ মেয়েদের বিশ্বকাপ জেতান রুথ।
- গাই ডি অ্যালিস ও রাসাঞ্জালি ডি সিলভা (শ্রীলঙ্কা)
১৯৮৩ থেকে ১৯৮৮ – এই সময়ে শ্রীলঙ্কা দলের হয়ে ১১ টি টেস্ট ও ৩১ টি ওয়ানডে খেলেন গাই ডি অ্যালিস। তিনি মূলত উইকেটরক্ষক বিয়ে করেন রাসাঞ্জালি সিলভা, যার ঝুলিতে আছে ২২ টি ওয়ানডে ও একটি টেস্ট। রাসাঞ্জালি শ্রীলঙ্কার হয়ে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যথাক্রম ১৯৯৭ ও ২০০০ সালের বিশ্বকাপ খেলেন।
- রিচার্ড হ্যাডলি ও ক্যারেন মার্শ (নিউজিল্যান্ড)
রিচার্ড হ্যাডলি হলেন নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনি অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। হ্যাডলি রিচার্ডের বিয়ে হয়েছিল ক্যারেন মার্শের সাথে। ক্যারেন ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত নারী বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটা ওয়ানডে খেলেছিলেন। ক্যারেনও ছিলেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার। যদিও, এখন তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।
- কেদার যাদব ও স্নেহাল প্রমোদ (ভারত)
ভারতের হয়ে ৭৩ টি ওয়ানডে ও নয়টি টি-টোয়েন্টি খেলা অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার কেদার যাদব এখনও দিব্যি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন। খেলেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগও (আইপিএল)। ভারতের হয়ে ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ খেলেন। তাঁর স্ত্রী স্নেহাল প্রমোদ। কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেললেও তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ। খেলেছেন মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমাঞ্চলের হয়ে। ঝুলিতে আছে ৩৭ টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ ও ৩১ টি টি-টোয়েন্টি। স্বামীর মত তিনিও ডানহাতি ব্যাটার। তবে বড় পরিচয় হল তিনি উইকেটরক্ষক।
- সানজিদা ইসলাম ও মীম মোসাদ্দেক (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটার সানজিদা ইসলাম। টপ অর্ডারের এই ব্যাটার খেলেছেন ১৬ টি ওয়ানডে ও ৫৪ টি টি-টোয়েন্টি। ২০২০ সালে তিনি বিয়ে করেন ক্রিকেটার মীম মোসাদ্দেককে। মীম তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন রংপুরের হয়ে। দু’জনই টপ অর্ডারে খেলেন।
- আসাদ ভালা ও পাউক সিয়াকা (পাপুয়া নিউগিনি)
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিল পাপুয়া নিউ গিনি। সেখানে দলের অধিনায়ক ছিলেন আসাদ ভালা। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন নিজেদের দেশের হয়ে – এমন নজীর খুব বেশি নেই। এই তালিকাতে ভালা ও তাঁর স্ত্রী পাউক সিয়াকাও আছেন। সিয়াকা চারটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন পাপুয়া নিউগিনির হয়ে। স্বামী বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান হলেও তিনি ডান হাতি।
- যেমন হবে একাদশ
টপ অর্ডার: রজার প্রিডক্স ও আসাদ ভালা ওপেনার। এলিসা হিলি (উইকেটরক্ষক) নামবেন তিনি।
মিডল অর্ডার: চার, পাঁচ ও ছয়ে নামবেন যথাক্রমে – কেদার যাদব, রুথ ওয়েস্টব্রুক ও স্নেহাল প্রমোদ। এর মধ্যে কেদার স্পিনিং অলরাউন্ডার।
লোয়ার মিডল অর্ডার: রিচার্ড হ্যাডলি সাতে নামবেন। তিনি পেস বোলিং অলরাউন্ডার, দলের অধিনায়ক। আরেক পেস বোলিং অলরাউন্ডার রাসাঞ্জালি ডি সিলভা নামবেন আট নম্বরে। এরপরের জন হলেন – গাই ডি অ্যালিস। তিনি ব্যাক আপ উইকেটরক্ষক।
লোয়ার অর্ডার: মিশেল স্টার্ক, মূল স্ট্রাইক বোলার। এরপর থাকছেন ক্যারেন মার্শ। তিনিও মূলত পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
দ্বাদশ ব্যক্তি: সানজিদা ইসলাম।