আমি তোমার মাথায় মারবো

ফিল হিউজের কথা মনে আছে? মাথায় হেলমেট থাকা সত্ত্বেও একটি বাউন্সার তাঁর জীবনটা কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু চিন্তা করুন তো নব্বই দশকের আগের কথা। তখন তো এত নামীদামী হেলমেট কম্পানি ছিল না। তখন ছিল না ভাল মানের টেকসই হেলমেট কিংবা এতসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ছিল না। তবে তখন যে বিধ্বংসী সব বোলাররা ছিলেন না, তাও কিন্তু নয়।

সেই সময়ের একজন বোলার যদি খেলার মাঠেই খানিকটা হুমকি দিয়ে বসে যে সে আপনার মাথা বরাবর বল করবে তাহলে আপনি কি করতেন? ঠিক এমন একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করছিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার।

সুনীল গাভাস্কার সত্তর থেকে আশির দশকে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম সেরাদের একজন ছিলেন। ইনিংস শুরু করার দায়িত্বও তাঁর কাঁধেই ন্যস্ত থাকতো। তিনি যে সময় ক্রিকেটটা খেলতেন তখন পুরো বিশ্বে পেস বোলারদের ছিল জয়জয়কার। হবেই বা না কেন। কি অসাধারণ রকমের বিধ্বংসী, ভয়ানক একেকটি স্পেল করতেন সে সময়কার পেস বোলাররা। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের কথা না বললেই নয়। ক্যারিবিয়ানদের পেস আক্রমণে ছিলেন, ম্যালকম মার্শাল, জোয়েল গার্নার, অ্যান্ডি রবার্টস এবং মাইকেল হোল্ডিং-দের মতো বোলাররা। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার ছিল পেস জুঁটি জেফ থমসন ও ডেনিস লিলি।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাভাস্কার এমন ভয়ংকর সব বোলারদের মোকাবেলা করেছেন তাঁদের ঘরের মাটিতে। সবচেয়ে আতংকের বিষয়ে সে সময়ের হেলমেটের মান কিংবা তার ব্যবহার। তবে বেশ ভালভাবেই ক্যারিবিয়ান ও অজি বোলারদের মোকাবেলা করা গাভাস্কারের মতে জেফ থমসন ছিলেন দুর্দান্ত এবং সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোলার। গল্পের ছলে তিনি রোমন্থন করলেন সেই জেফ থমসনের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার একটি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যেখানে থমসন এবং গাভাস্কার দুইজনই খেলেছিলেন। সেই ম্যাচের কথা টেনে নিয়ে এসে গাভাস্কার বলেন, ‘জেফ থমসন সবচেয়ে দ্রুত গতির বোলার ছিলেন। সিডনিতে ম্যাচ ছিল আমাদের। অস্ট্রেলিয়া টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে। আমরা তাঁদেরকে ১৪০ কিংবা এর আশেপাশে অল আউট করে ফেলেছিলাম। থমসনকে চা-বিরতির আগেই বোলিং করতে নেমে যেতে হয়। ঠিক তখনই আবার গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। থমসনকে দেখেই তখন আন্দাজ করা যাচ্ছিল যে সে মোটেও অত জলদি বল করতে প্রস্তুত ছিল না।’

 

গতি দানব জেফ থমসনের মেজাজ তখন তাঁর কন্ট্রোলে ছিল না এমনটাই অভিমত গাভাস্কারের। এমনকি নিজের রাগ যে আয়ত্বে রাখতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন জেফ থমসন সেই কথাও বললেন সুনীল গাভাস্কার। ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য হয়েছিল ভুল বোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে। সে বিষয়ে গাভাস্কার বলেন, ‘আমার ওপেনিং পার্টনার চেতান চৌহান স্ল্যাশ শট খেলতে পারতেন খুব ভালো। তো স্বাভাবিকভাবেই আমার দলের অন্যান্য সতীর্থরা তাঁকে খোঁচাচ্ছিল সেই শটটা খেলার জন্য। অবশেষে সে থমসনের বলে সেই শটটি খেললেন এবং তা ব্যাটের উপরি পার্শ্বে লেগে থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে চার হয়ে যায়। আমার সতীর্থরা তাঁকে উৎসাহিত করতে দাঁড়িয়ে ‘মাস্টার’ বলে সম্বোধন করে এবং তালি দিতে থাকে। কিন্তু চেতান ভেবেছিল তাঁরা মজা করছিল। তাই সে মাথা নাড়িয়ে হাসতে থাকে।’

এরপরই মূলত ঘটে জেফ থমসনের চটে যাওয়ার ঘটনা। চেতান যখন হাসছিলেন তখন তাঁর সাথে থমসনের চোখাচোখি হয়। তাতে থমসন ভেবে বসেন তাঁকে উদ্দেশ্য করেই হাসছিলেন চেতান। যেহেতু তাঁর বলে চেতান একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছে। ‘এরপর সে (জেফ থমসন) চেতানের কাছে যায় এবং তাঁর হেলমেটে একটি ক্রস মার্ক করে। এবং তারপর সে বলে যে আমি তোমার মাথার এইখানটায় আঘাত করবো তারপর দেখবো তুমি হাসো কিনা। প্রতিউত্তরে চেতান বলে যে তোমার যা ইচ্ছে হয় তুমি করো। তাঁদের মধ্যে এই কথোপকথন আমি শুনতে পাচ্ছিলাম আর আমি চেতানকে বলছিলাম বাদ দাও।’- গাভাস্কার বলেন।

চেতান পিছু হটার মানুষ ছিলেন না। তিনি গাভাস্কারকে বললেন, ‘আমি রাজপুত, রাজপুতরা পিছু হটতে জানে না।’ তারপর ক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া থমসন একের পর এক বল করে যেতে লাগলেন ঝড়ের গতিতে। গাভাস্কার বলেন, ‘রীতিমত ঝড়ের গতিতে বল করতে থাকলো থমসন। আশেপাশে সবকিছু মনে হয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাবে এমন এক অবস্থা। থমসনের সেই স্পেলটাই আমার ক্যারিয়ারে ফেস করা দুর্ধর্ষ গতিশীল স্পেল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link