যেকোনো ফরম্যাটের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল। প্রথম ডেলিভারির সামনে। এমন একটা সময় যখন, অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ সাত বলে পাঁচ রান করেই ফিরে গেছেন সাজঘরে। সামনে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার – অ্যাডাম মিলনে।
ঘণ্টায় ১৪৪ কিলোমিটার গতির ডেলিভারি ধেয়ে আসল। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে গ্লেন ফিলিপস অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলটাকে ওভার বাউন্ডারি হতে দেখলেন।
পরের ডেলিভারিটা আরও শর্ট, আরও দ্রুত গতির। ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার। ব্যাক ফুটে গিয়ে ফাইনে চালালেন, ডিপ থার্ডম্যানের ভদ্রলোক আসার আগেই বল সীমানার ওপারে।
তৃতীয় ডেলিভারি, আবারও ‘ব্যাঙ, ব্যাঙ’। ঘণ্টায় ১৪১ কিলোমিটার গতির ডেলিভারিটা সাজোরে পুল করলেন, ডিপ স্কয়ার লেগের ফিলিপস এবার সামান্য লড়াইয়ের সুুুযোগ পেলেন, কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। বিরাট ব্যবধানে জয়ী হলেন ব্যাটসম্যান মিশেল মার্শ।
প্রথম তিন বলে আসল ১৪ রান। এক ছক্কা, দুই চার। নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার সূচনাও সেটাই।
এক মিশেল ঠিক বড় কোনো তারকা নন। স্টিভেন স্মিথ কিংবা ডেভিড ওয়ার্নারের মত বিরাট কোনো ভাবমূর্তিও তাঁর নেই। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের নিলামে তাঁকে নিয়ে তেমন কোনো কাড়াকাড়ি হয় না। প্রতিপক্ষও তাঁকে নিয়ে আলাদা কোনো ছক কাঁটে না। বরং, নিন্দুকেরা তো ভাই শন মার্শকেই কখনো কখনো তাঁর চেয়ে এগিয়ে রাখেন।
তবে, মিশেল মার্শ এবার সব রকম ছায়া ভেঙে বের হলেন। প্রথম তিন বলে তাঁর ব্যাটিং স্টেটমেন্ট একটা কথাই বললো – আমি এসেছি, আমি এসেছি বিশ্বজয় করতে!
৮০ মিনিট, ৫০ টি ডেলিভারি, ৭৭ টি রান – এবার আর মিশেল মার্শকে আড়ালের তারা বলার আর সুযোগ থাকলো না। ব্ল্যাক ক্যাপ পেসারদের যেমন সামলেছেন, চড়াও হয়েছেন স্পিনারদের ওপরও। অস্ট্রেলিয়ান এই দলটায় সবচেয়ে ভাল স্পিন খেলতে সম্ভবত তিনিই জানেন।
সর্বশেষ বাংলাদেশে সফরের পাঁচ ইনিংসে ১৫৮ বলে ১৫৬ রান করেছিলেন মার্শ। সেটা অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ ছিল, অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী থেকে ৯৯ রানে এগিয়ে ছিলেন তিনি। সেই মন্থর আর নিচু উইকেটের সংগ্রাম তাঁকে যেন আরও শক্ত করে তুলেছে। উইকেটে মানিয়ে নিতে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটে সময় দিতেন অস্ট্রেলিয়ান স্পিনারদের বিপক্ষে। তাঁর ফলটাই এবার তিনি পেলেন বিশ্বকাপের মঞ্চে।
টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে মার্শের পরিচয়টা ক’দিন আগেও ছিল স্রেফ একজন অলরাউন্ডারের যিনি পঞ্চম বোলারের ভূমিকায় চলনসই। তবে, সর্বশেষ কয়েকটা সিরিজ ও এরপর বিশ্বকাপে তিন নম্বরে তাঁকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭ বলে ১১ রান করে তিনি গুবলেট পাকান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট হাতে নেওয়ারই সুযোগ পেলেন না।
কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার সাফ বলে দিলেন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জায়গা হারাবেন। সামনে হাসিমুখেই সিদ্ধান্তটা মেনে নিলেও, হোটেল রুমে ফিরে নাকি রীতিমত বালিশ মুখে চেপে কেঁদেছিলেন। মাত্র ছয়জন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কাঁপল অস্ট্রেলিয়া।
ফলে, দিন পাঁচেক বাদেই ফেরানো হল মার্শকে। এবার তাঁকে সাথে আক্রমণের লাইসেন্সও দেওয়া হল। আর সুযোগ পেয়েই পরের চারটা ম্যাচে কোনো না কোনো ভাবে ভূমিকা রেখেছেন মার্শ। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাসকিনের বলে পরপর চার আর ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২ বলে ৫৩ রান করে দলকে নিয়ে গেছেন সেমিফাইনালে।
সেমিফাইনালে শাহীন আফ্রিদির প্রথম ডেলিভারিটাতেই আউট হতে পারতেন। নেহায়েৎ আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান। কাঁপাকাপির সেই শুরুর পর সেই আফ্রিদিকেই এক্সট্রা কাভারে চার মেরেছেন, হারিস রউফকে পরপর ছক্কা আর চার হাঁকিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে রানের সাথে পাল্লা দিতে ভূমিকা রেখেছেন।