ইমরুলের গলাটা নিশ্চয়ই জড়িয়ে এসেছিল – আক্ষেপে না লজ্জায়?

একটা ফরম্যাট থেকে বিদায় নেওয়া মানেই তার ঘন্টা বেজে গেছে। একদিন ছুটি তাকে নিতেই হবে সবকিছু থেকে। 

বেশ আবেগঘন একটা আবহাওয়া সৃষ্টি করে টেস্ট থেকে বিদায় নিয়েছেন ইমরুল কায়েস। হুট করেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ছিলেন টেস্টের বাইরে। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে জাতীয় দলেরই বাইরে তিনি বহুদিন ধরে। তবুও একটা আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা করতে চাইলেন তিনি।

কিন্তু যতটা আবেগের আবহাওয়া সৃষ্টি করতে চাইলেন তিনি, ততটুকু কার্যকারিতা কি ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন সাদা পোশাকে? এমন একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হলে, খোদ ইমরুল কায়েসও সম্ভবত ইতস্তত বোধ করবেন। ৭৬টি টেস্ট ইনিংস খেলেছেন ইমরুল কায়েস। এই সময়ে তার ব্যাটিং গড় মাত্র ২৪.২৮।

তিনি কিন্তু বরাবরই টপঅর্ডার ব্যাটার। অধিকাংশ সময়েই খেলেছেন ওপেনিংয়ে। পুরো ক্রিকেট বিশ্বে ২৫ এর কম গড়ের টপ অর্ডার ব্যাটার রয়েছেন মাত্র একজন। নিদেনপক্ষে ৭৫ ইনিংস খেলা টপ অর্ডার ব্যাটারদের মধ্যে স্বদেশী জাভেদ ওমর বেলিম ইমরুলের পেছনে রয়েছেন।

সর্বনিম্ন গড়ের একটা তালিকা করা হলে সেখানে নিচ থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে জায়গা হবে তার। এমন পরিসংখ্যান ইমরুলের জন্যে খানিক দৃষ্টিকটু বটে। তার ক্যারিয়ারের প্রায় অর্ধেক সময় তিনি কাটিয়েছেন অপেক্ষা করে। জাতীয় দলের দুয়ার খুলবে সে আশায় কেটেছে তার সময়। তিনি বরাবরই উপেক্ষিত এমন একটা চিত্র আঁকা হয়েছে তাকে ঘিরে।

কিন্তু আদোতে নিজের পাওয়া সুযোগগুলো খুব একটা কাজে কি কখনো লাগাতে পেরেছিলেন ইমরুল? হয়ত তিনি পেরেছিলেন। ২০১৪ থেকে ১৫, এই সময়ে চার ম্যাচের মধ্যে তিনটি ম্যাচেই শতক এসেছিল তার ব্যাট থেকে। ওই সময়টায় টানা টেস্ট খেলে গেছেন তিনি। ২০১৪-তে শুরু হওয়া ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল ২০১৬ অবধি। কিন্তু বড় রান ছিল অনুপস্থিত।

২০১৭ সালের দিকে পারফরমেন্সের গ্রাফটা এতটাই নিম্নমুখী হয়েছিল যে, ইমরুলের সামগ্রিক পরিসংখ্যানকে বাজেভাবে প্রভাবিত করেছে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল অবধি ২০ ইনিংসে ৭৬৭ রান করেছিলেন। তখন তার গড় ছিল ৪০.৩৭।

কিন্তু পরবর্তী তিন বছরে প্রায় অর্ধেক রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। ২৬টি ইনিংস খেলে সর্বসাকুল্যে ৪০২ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন ইমরুল কায়েস। সে সময়কালে তার গড় গিয়ে দাঁড়ায় ১৬.০৮। এরপর আর যাই হোক তাকে টেস্ট দলের জন্যে বিবেচনা করা বড্ড অন্যায় হয়ে যেত।

তাছাড়া ২০১৯ সালের পর থেকেই বাংলাদেশ তরুণ কোন একজন ওপেনারকে থিতু করতে চেয়েছে টেস্ট দলে। সেই যাত্রা এখনও অব্যাহত আছে। নিজের বাজে পারফরমেন্স আর বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনার যাতাকলে পিষ্ঠ হয়েছেন এতদিন ইমরুল। তাইতো সকল আশার পালে খুলে ফেলে, ৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটালেন। টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন।

ক্রিকেট ময়দান ছাড়া আর যাই হোক চাট্টিখানি কথা নয়। যার ধ্যান-জ্ঞান কেবল ক্রিকেট তার কাছে বাইশ গজ পরম মমতার আপন শিশু। একটা ফরম্যাট থেকে বিদায় নেওয়া মানেই তার ঘন্টা বেজে গেছে। একদিন ছুটি তাকে নিতেই হবে সবকিছু থেকে।

Share via
Copy link