একটা শঙ্কা কিন্তু ছিল।
সে অর্থে দিবা-রাত্রির খেলার সাথে ভারত খুব পরিচিত নয। সেই কোন আমলে ঘরোয়া ক্রিকেটে কিছু ম্যাচ হয়েছে। তারপর বাংলাদেশের বিপক্ষে একটা টেস্ট। এরপর সরাসরি অ্যাডিলেডের মতো উইকেটে পিংক বল টেস্ট খেলতে যাওয়ায় একটা শঙ্কা ছিল।
আলোর নিচে খেলা, গোলাপী বল, হ্যাজেলউড-কামিন্স-স্টার্কের বোলিং; সবমিলিয়ে একটা ভয় ছিলো।
তাই বলে ভারতও একেবারে নিরস্ত্র ছিল না। দলে আধুনিক ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি; তিনিই নেতা। এরপর চেতেশ্বর পুজারা, আজিঙ্কা রাহানের মতো ব্যাটসম্যান এবং পৃথ্বী শ’র মতো হাইপ তোলা ওপেনার। ভারত তাই গুড়িয়েই যাবে, এটা কল্পনা করা কঠিন ছিল।
সেই কল্পনাতীত ব্যাপারটাই ঘটলো।
অ্যাডিলেডে একেবারে তুলকালাম এক কেলেঙ্কারি হয়ে গেলো। পিংক টেস্টের তৃতীয় দিন ভারতবাসী ঘুম থেকে উঠে দেখলো, তাঁদের দল টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে নিজেদের লজ্জার রেকর্ড নতুন করে লিখেছে। ভারতের ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোরে অলআউট হয়ে গেলো ভারত। করতে পারলো তারা ৩৬ টি মাত্র রান। এর ফলে ১৯৭৪ সালে লর্ডসে ৪২ রানে অলআউট হওয়ার ভারতীয় রেকর্ডটা দুই নম্বরে চলে গেলো।
এই টেস্ট প্রথম ইনিংস থেকেই বোলারদের দাপট দেখছিলো। ভারত ২৪৪ রানে অলআউট হয়েছিলো। জবাবে ভারতীয় বোলার, বিশেষ করে অপ্রত্যাশিতভাবে রবিচন্দ্রন অশ্বিন জ্বলে ওঠেন। ফলে অস্ট্রেলিয়া ১৯১ রানে অলআউট হয়। কিন্তু আজ সকালে যেটা ঘটলো, সেটা এক্কেবারে কেলেঙ্কারি।
আগের দিন পৃথ্বি শকে আউট করে শুরু করেছিলেন প্যাট কামিন্স। গতকাল দিনের শুরুতে নাইটওয়াচম্যান বুমরাহকে ফেরান কামিন্সই। এরপর স্রেফ কামিন্স আর হ্যাজেলউডের গোলাতে দূর্গপতনের গল্প। টপ অর্ডার ধ্বসিয়েছেন কামিন্স। আর লেজ ছেটে দিয়েছেন হ্যাজেলউড। কামিন্স চারটা এবং হ্যাজেলউড পাঁচটা উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ৩৬ রানে ৯ উইকেট পড়ার পর দশম উইকেটটা আর বোলাররা কেউ পাননি। মোহাম্মদ শামি আহত হয়ে অবসর নিয়েছেন।
এই কেলেঙ্কারিতে ভারতের সর্বনিম্ন স্কোরের রেকর্ডটা নতুন করে লেখা হলো। এটা ছিলো যে কোনো দলের টেস্ট ক্রিকেটে চতুর্থ সর্বনিম্ন স্কোর। টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোর-২৬। ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অকল্যান্ডে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড ২৬ রানে অলআউট হয়েছিলো।
ভারতের স্বান্তনা-২৬ অন্তত পার করা গেছে। কিন্তু নিজেদের আগের সর্বনিম্ন ৪২ পার হতে পারেনি তারা।
এর আগে ভারত একবারই ৫০ রানের নিচে অলআউট হয়েছিলো। সেটা ছিলো ১৯৭৪ সালের ঘটনা। লর্ডসে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড ৬২৯ রান করেছিলো। জবাবে ফারুক ইঞ্জিনিয়ার, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথরা ৩০২ রান করেন; ফলো অনে পড়ে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে হয় সেই কেলেঙ্কারি।
অজি ওয়াড়েকারের নেতৃত্বাধীন দলটা ৪২ রানে অলআউট হয়। জিওফ আরনল্ড ৪টি, ক্রিস ওল্ড ৫টি উইকেট নেন। মজার ব্যাপার হলো, সেদিনও ভারতের দশ জন ব্যাটসম্যানের উইকেট পাননি বোলাররা। ভগবত চন্দ্রশেখর ব্যাট করতে পারেননি।
এই দুটো ঘটনা ছাড়া ভারতীয় ব্যাটিং হাজারবার বিশ্বসেরা সব বোলিং সামলেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস কোয়াড্রট, পাকিস্তানের টু ডব্লু থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার ত্রাস বোলিং; সবই খেলেছে তারা। খেলেছে ভজা উইকেট, কাভার না দেওয়া উইকেটে। কিন্তু ৫০ রানের নিচে আউট হয়ে এমন লজ্জা তাদের আগে পেতে হয়নি।