টি-টোয়েন্টির বিপ্লবের পেছনের অন্যতম কারিগর ভারতকেই বলা যায়। আরেকটু সরল করে বললে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) পাবে এমন বিপ্লবের কৃতিত্ব। খেলার মান থেকে শুরু করে খেলার ধরণ সবকিছুতেই এনেছে পরিবর্তন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার কর্ণধার।
তবে এতকিছুর বাইরেই আইপিএল যে কাজটা করেছে তা হচ্ছে ভারতের ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছে। এখন ভারতের ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের অভাব হয়না। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের বিশ্রামেও খুব বেশি বিপাকে পড়ে না দল। কেউ না কেউ ধরে ফেলেন দলের হাল। আর ভিড়িয়ে দেন তরী জয়ের বন্দরে। অন্তত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভারত রয়েছে দারুণ ফর্মে।
২০২১ সালের বিশ্বকাপে এক কথায় বলা যায় ভরাডুবি হয়েছিল ভারতের। প্রথম পর্ব থেকেই বাদ পড়ে গেছে প্রথমবারের চ্যাম্পিয়নরা। তবে সে সময়টা কাটিয়ে উঠেছে তাঁরা। দলে থাকা প্রত্যেকটা খেলোয়াড় যেন চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল খারাপ সময় পার করে যাওয়ার। সে খারাপ সময়টা ঠিকই কাটিয়ে উঠেছে টিম ইন্ডিয়া। তার থেকেও বড় বিষয় নেতৃত্বগুণে বলিষ্ঠ এখন ভারত।
এমনটা হওয়ার পেছনেও সেই আইপিএলকেই বাহবা দিতে পারে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। কেননা আইপিএল এখন দশ দলের, আর সে দশ দলের দশ অধিনায়ক। দুই একজন বাদে মোটামুটি অধিকাংশই ভারতীয়। এমন অবস্থায় ভারত অন্তত আগামী দিনগুলোতে নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগবে না সে কথা এখনই বলের দেওয়া যায়।
এই যে যেমন হার্দিক পান্ডিয়ার কথাই ধরা যাক। ধারণা করা হচ্ছিল তিনি হয়ত ইনজুরির পর হারিয়েই যাবেন। তবে না, তিনি ফিরলেন স্বগৌরবে। আইপিএলের নবাগত দল গুজরাট টাইটান্সকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি জিতেছেন শিরোপা। এরপর জাতীয় দলের দায়িত্বটাও পেয়েছেন তিনি। সেখানেও শতভাগ সাফল্য এসে ধরা দেয় হাতে। একটা চাপা গুঞ্জন আগামী দিনে তিনিই হতে পারেন ভারতের পথিকৃত।
এমন একটা চ্যালেঞ্জের জন্যে রীতিমত মুখিয়ে রয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, কেন নয়? ভবিষ্যতে আমি সুযোগ পেলে আমি সে দায়িত্ব পালন করতে পেরে আমি খুশিই হব।’ তাঁর নেতৃত্বে ভারত আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে জয় দেখেছে। তাছাড়া রোহিতের অবর্তমানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ৮৮ রানের বিশাল জয় পেয়েছেন পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন ভারত দল। সেটা আবার ভারতের যৌথ চতুর্থ সর্বোচ্চ রান ব্যবধানে জয়।
তবে হার্দিকের কথা একটু সাইডে রেখে যদি গোটা ভারত দলের কথা বলা দরকার। ভারত নিজেদের খেলা শেষ সাত টি-টোয়েন্টি সিরিজের ছয়টিতে জয়ের দেখা পেয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজটা ফলাফল ছিল অমিমাংসিত। অর্থাৎ পুরো ভারত দলটাই রয়েছে দূর্দান্ত একটা ফর্মে। এর পেছনের কারণ নতুন এক সংস্কৃতি। খেলোয়াড়দের একটা নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে বলেই তাঁরা নিজেদের মতন করে খেলতে পারছেন।
ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় দলের সাথে যুক্ত হওয়া দীনেশ কার্তিক অন্তত সেই বার্তাই দেওয়ার প্রচেষ্টা করতে চাইছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি (এমন সাফল্যের কারণ) খেলোয়াড়দের প্রতিভা আর স্বাধীনতা যেটা এখন আমরা নতুন করে পাচ্ছি। খেলোয়াড়দের খেলা দেখে মনে হচ্ছে এটা নতুন ভারত। আমি এখন খেলোয়াড়দের আরও বেশি স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে দেখছি।’
খেলোয়াড়দের সাবলীল পারফরমেন্স নিয়ে কার্তিক আরও বলেন, ‘আমি দেখছি খেলোয়াড়রা নিজেদেরকে মেলে ধরছে, তাঁরা ফলাফল নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না। সেটাই আমাদেরকে একটা গ্রুপ হিসেবে আরও বেশি ভয়ংকর করে তুলছে।’
ভারত দলের ম্যানেজমেন্টে এসেছে পরিবর্তন। অধিনায়ক বদলেছে, সেই সাথে বদলেছে কোচ। সব মিলিয়ে ভারত একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সেটা প্রচণ্ডরকম ইতিবাচক। অন্তত দল নিজেদের পরিকল্পনামাফিক এগুলো হয়ত ভারত আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা নিজেদের করে নেবে।