এগিয়ে ভারত, অন্ধকারে পাকিস্তান

২০২৫ সাল ভারত ও পাকিস্তান—দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের জন্যই ছিল ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতার। বছরজুড়ে তিন ফরম্যাটে অসংখ্য ম্যাচ খেললেও ফলাফলের বিচারে দুই দলের পথচলা ছিল একেবারেই বিপরীত।

২০২৫ সাল ভারত ও পাকিস্তান—দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের জন্যই ছিল ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতার। বছরজুড়ে তিন ফরম্যাটে অসংখ্য ম্যাচ খেললেও ফলাফলের বিচারে দুই দলের পথচলা ছিল একেবারেই বিপরীত। সাদা বলের ক্রিকেটে ভারত যেখানে ধারাবাহিক সাফল্যের ছাপ রেখেছে, সেখানে পাকিস্তান ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে মাঝারি মানের পারফরম্যান্স দেখিয়েছ। আর টেস্ট ক্রিকেটে ছিল একেবারেই দিশেহারা।

ভারতের বছর শুরু হয়েছিল হতাশা দিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির শেষ টেস্টে ৬ উইকেটে হেরে সিরিজ হাতছাড়া করে তারা এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার স্বপ্নও ভেঙে যায়। সেই সফরের পর শুভমান গিলকে নতুন টেস্ট অধিনায়ক করা হয়।

তার নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে দুর্দান্ত লড়াই করে ২-২ সমতা এনে দেয় ভারত, টেস্টে নতুন যুগের সূচনা করে ভারত। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে সেই ছন্দ ধরে রাখলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠেই হোয়াইটওয়াশ হওয়ায় পুরো টেস্ট মৌসুমটাই ম্লান হয়ে যায়। সব মিলিয়ে লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের প্রাপ্তি সীমিতই থেকে যায়।

তবে ওয়ানডেতে একেবারে ভিন্ন ছবি। বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে হারানোর পর ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠে। দুবাইয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জেতা ছিল তাদের বছরের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি।

যদিও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে সিরিজ হার মানতে হয়, তবে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে বছর শেষ করে ভারত। একটি সিরিজ হার ছাড়া পুরো বছরজুড়েই আধিপত্য দেখানোয় ওয়ানডেতে ভারতের পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়।

টি-টোয়েন্টিতে তো ভারত ছিল প্রায় অপ্রতিরোধ্য। ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে বিধ্বস্ত করার পর এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জেতে তারা। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও একের পর এক সিরিজ জয় করে সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বাধীন দলটি। পুরো বছর কোনো টি-টোয়েন্টি সিরিজ না হারানো ভারতকে এই ফরম্যাটে নিখুঁতই বলা যায়।

অন্যদিকে পাকিস্তানের বছরটা ছিল ওঠানামায় ভরা। টেস্ট ক্রিকেটে তারা শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একপেশে সিরিজ হার দিয়ে বছর শুরু করে। এরপর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ধুলোমাখা উইকেটে প্রথম টেস্ট জিতলেও সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে হেরে ১-১ সমতায় শেষ করে।

একই গল্প পুনরাবৃত্তি হয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে—প্রথম টেস্টে স্পিনারদের দাপট, দ্বিতীয় টেস্টে প্রতিপক্ষের ঘুরে দাঁড়ানো। ধারাবাহিকতার অভাবে টেস্টে পাকিস্তান পুরো বছরই পিছিয়ে থাকে।

ওয়ানডেতে পরিস্থিতি আরও হতাশাজনক ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার পর মূল আসরেও গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিতে হয়, যেখানে ভারতের বিপক্ষে হারটা ছিল সবচেয়ে বড় ধাক্কা।

এর পরই অধিনায়কত্ব ছাড়েন মোহাম্মদ রিজওয়ান, দায়িত্ব পান শাহীন শাহ আফ্রিদি। পরিবর্তনের পর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জিতে বছরটা কিছুটা ভালোভাবে শেষ করলেও বড় টুর্নামেন্টে ব্যর্থতা পাকিস্তানের ওয়ানডে বছরটাকে ব্যর্থই করে রাখে।

টি-টোয়েন্টিতে তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল পাকিস্তান। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিপক্ষে হোঁচট খেলেও ধীরে ধীরে ছন্দ ফেরায় তারা। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আফগানিস্তানকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ের পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও সাফল্য পায় দলটি।

এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলেও ভারতকে গ্রুপ পর্ব, সুপার ফোর ও ফাইনাল—তিনবার হার মানতে হয়, যা পাকিস্তানের জন্য ছিল হৃদয়ভাঙা অভিজ্ঞতা। এরপর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয় এবং শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে আরেকটি ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতে টি-টোয়েন্টি বছরটা ইতিবাচকভাবে শেষ করে তারা।

সবশেষে তুলনা করলে দেখা যায়, ২০২৫ সালে ভারতই ছিল নি:সন্দেহে এগিয়ে। তিন ফরম্যাটের মধ্যে দুইটিতে—ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে—তারা আধিপত্য দেখিয়েছে এবং দুটি বড় বহুজাতিক টুর্নামেন্ট জিতেছে।

পাকিস্তান কিছুটা লড়াই দেখালেও বড় মঞ্চে ধারাবাহিক সাফল্যের অভাবে পিছিয়ে পড়ে। লাল বলের ক্রিকেটে দুই দলই ভুগলেও সাদা বলের দাপটে ভারত ২০২৫ সালের সেরা দল হিসেবেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link