ময়দান থেকে রাজনীতির ময়দানে

ভারতে ক্রিকেট হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ভারতের ক্রিকেটে এসেছে একের পর এক কিংবদন্তি। ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয় খেলা হবার কারণে ক্রিকেটাররা বেশ পরিচিত ভারতে। ভারতের প্রত্যেক তরুণেরই স্বপ্ন থাকে তাঁরা ক্রিকেটে মাঠ কাপাবেন। তাঁরা হবেন ভারতীয় ক্রিকেটের উত্তরসূরি। ক্রিকেটের এই বিশাল জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে চায় ভারতের সকল রাজনৈতিক দল।

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা ভারতের রাজনীতিতে জড়িয়েছেন। অনেক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের মত রাজনীতিতেও সফল হয়েছে আর অনেক সফলতার মুখ দেখেনি। এই তালিকায় শুধু কিংবদন্তিরাই নয়, অন্য অনেক ক্রিকেটারও আছে।

ভারতীয় ক্রিকেটারের মধ্যে সর্বপ্রথম রাজনীতিতে জড়িয়েছেন পালওয়ানকার বালো। তিনি মূলত ছিলেন ভারতের দলিত সম্প্রদায়ের নেতা। তিনি ১৯৩৩-৩৪ সালে মুম্বাই মিউনিসিপালিটির মেয়র পদে নির্বাচিত লড়েছিলেন কিন্তু বি আর আম্বেদকারের কাছে হেরে যান তিনি। পালওয়ানকার বালোর পরেও আরো অনেক ক্রিকেটার রাজনীতিতে এসেছেন। তাঁদেরকে নিয়েই খেলা ৭১-এর আজকের এই আয়োজন।

  • মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন

 

ভারতের সাবেক অধিনায়ক ছিলেন মোহাম্মদ আজহরউদ্দীন। ভারতের অধিনায়ক থাকাকালীন সময়ে ফিক্সিংয়ের দায়ে নিষিদ্ধ হন তিনি। ভারতের হয়ে ৯৯ টেস্ট খেলেছিলেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। আজহারউদ্দিন ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৪৭ টেস্ট।

ভারতের এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার রাজনীতিতে যোগ দেন ২০০৯ সালে। তাঁর রাজনৈতিক দল হলো ভারতীয় ন্যাশন্যাল কংগ্রেস। ২০০৯ সালে উত্তর প্রদেশের মোরাবাদ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপরে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে হেরে যান। এখনো রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন তিনি।

  • গৌতম গম্ভীর

ভারতের সাবেক ওপেনার ব্যাটসম্যান ছিলেন গৌতম গম্ভীর। তিনি ভারতের হয়ে ২০১১ বিশ্বকাপ জিতেছেন। ২০১১ সালের পর ভারতীয় জাতীয় দলে নিয়মিত দেখা যায়নি তাকে। ২০১৯ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন।

গৌতম গম্ভীরের রাজনৈতিক দল হল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। ভারতের প্রয়াত রাজনৈতিক অরুণ জেটলি এবং রবি শঙ্কর প্রসাদের স্থানে আসেন তিনি। ২০১৯ সালে অরুণ জেটলির মৃত্যুতে শুন্য হওয়া আসনে নির্বাচন করে লোক সভার সদস্য নির্বাচিত হন গৌতম গম্ভীর।

  • নভজ্যোৎ সিং সিধু

নভজ্যোৎ সিং সিধু ছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তার সময়ে ভারতের সবচেয়ে হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান। ১৯৯৯ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। এরপর ২০০৪ সালে যোগ দেন রাজনীতিতে।

নভজ্যোৎ সিং সিধুর রাজনৈতিক দল ছিলো ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। ২০০৪ সালে নভজ্যোৎ সিং সিধু বিজেপির হয়ে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি পাঞ্জাবের সংস্কৃতি এবং টুরিজম মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে বিজেপির হয়ে নির্বাচনে লড়ার টিকেট পাননি। তাঁর পাশাপাশি একই বছর অরূণ জেটলিও দল থেকে নির্বাচনের অনুমতি পাননি। দলের বাইরে গিয়েও নির্বাচন করেন নভজ্যোৎ সিং সিধু। নির্বাচনে জিতে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাজ্যসভার সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

  • কীর্তি আজাদ

কীর্তি আজাদ ছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী ভগত ঝা আজাদের ছেলে। কীর্তি আজাদ রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন একজন ক্রিকেটার। তিনি ভারতের হয়ে ৭ টেস্ট এবং ২৫ ওয়ানডে খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর পদার্পণ বেশি না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ ভালো পারফর্ম ছিলো কীর্তি আজাদের।

খেলা ছাড়ার পর রাজনীতিতে আসেন কীর্তি আজাদ। তিনি দিল্লীর গোল মার্কেট আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) যোগ দেন। সেখানে যোগ দিয়ে নিজ রাজ্য বিহারের ধরভাঙ্গা অঞ্চল থেকে নির্বাচন করেন। এই আসনে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৯ সালে বিজেপি ছেড়ে যোগ দেন ভারতীয় ন্যাশন্যাল কংগ্রেসে।

  • মনসুর আলী খান পতৌদি

ভারতের সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক ছিলেন মনসুর আলী খান পতৌদি। তিনি পরিচিত ছিলেন টাইগার পতৌদি। টাইগার পতৌদির সময়ে খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনিই প্রথম রাজনীতিতে আগ্রহ দেখান। তিনি ভারতীয় ন্যাশন্যাল কংগ্রেসের হয়ে দুইবার লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন।

তাঁর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কপিল দেব এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী । কিন্তু তারপরও নির্বাচনে জিততে পারেননি টাইগার পতৌদি। দুইবার নির্বাচনে হেরে রাজনীতি থেকে সরে যান মনসুর আলী খান পতৌদি।

এদের বাইরেও অনেক ক্রিকেটাররা রাজনীতিতে এসেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন পশ্চিম বঙ্গের ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি, অশোক ডিন্ডা, লক্ষী রতন শুক্লা প্রমুখ। ক্রমেই এই তালিকাটা লম্বা হচ্ছে।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link