নীরবে বিদায় বলা ভারতীয়রা

সব ক্রিকেটারের যে এই বিদায়ী ম্যাচ খেলার সৌভাগ্যটা হয় না। অনেককেই বিদায় নিতে হয় অনেকটা অগোচরে। এই নীরব প্রস্থান কেউ নেন স্বেচ্ছায়, আবার কেউ তিক্ত বাস্তবতার গ্যাড়াকলে। ভারতের মত একটি ক্রিকেট জোয়ারের দেশেও দেখা যায় এই রূঢ় বাস্তবতা। ভারতের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় ক্রিকেটাররাও সুযোগ পাননি তাঁদের বিদায়ী ম্যাচ খেলে সবার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার।

সেই ছোটবেলায় বাবা-মা’র হাত ধরে পাড়ার মাঠে খেলতে যাওয়া। তারপর একটু একটু করে বিভিন্ন ধাপ পেড়িয়ে একটা সময় সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে আসতে প্রয়োজন বেশ লম্বা একটা সময়।

প্রয়োজন অনেক ত্যাগ, সাধনার। এই এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আবার একটা লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা ক্রিকেটাররা তাঁদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলই খরচ করে ফেলেন। জীবনের একটা বড় অংশ তো আর ভালোবাসা না থাকলে এভাবে দিয়ে দেয়া যায়। তবুও একটা বয়স পর ক্রিকেটকেও ছেড়ে যেতে হয়। এত ভালবাসার খেলাটাকে ছেড়ে যাওয়া তো আর মুখের কথা না। ক্রিকেটও অবশ্য তাঁদের যথার্থ সম্মান দিয়েই বিদায় জানায়। একজন ক্রিকেটারের বিদায়ী ম্যাচে তাঁর সতীর্থরা, ভক্তরা তাঁকে বুক ভরে ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানায়।

তবে, সব ক্রিকেটারের যে এই বিদায়ী ম্যাচ খেলার সৌভাগ্যটা হয় না। অনেককেই বিদায় নিতে হয় অনেকটা অগোচরে। এই নীরব প্রস্থান কেউ নেন স্বেচ্ছায়, আবার কেউ তিক্ত বাস্তবতার গ্যাড়াকলে। ভারতের মত একটি ক্রিকেট জোয়ারের দেশেও দেখা যায় এই রূঢ় বাস্তবতা। ভারতের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় ক্রিকেটাররাও সুযোগ পাননি তাঁদের বিদায়ী ম্যাচ খেলে সবার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার। এমনই কিছু জনপ্রিয় ভারতীয় ক্রিকেটারদের এবং তাঁদের নীরব প্রস্থানের কারণ খুঁজে দেখা যাক।

  • মহেন্দ্র সিং ধোনি

ভারতের ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের একজন ধোনি। তাঁর অধিনায়কত্বে ভারত ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেছে। তাঁর নেতৃত্বেই ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিরও শিরোপা জিতে।

ভারতের ইতিহাসের সেরা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের শুধু ওয়ানডে ক্রিকেটেই আছে দশ হাজারের বেশি রান। তবে তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন কোনো বিদায়ী ম্যাচ ছাড়াই। তবে তিনি চাইলেই ভারত তাঁর জন্য একটি বিদায়ী ম্যাচ আয়োজন করতে পারতো। তবে ধোনিই কখনো চাননি উদযাপন করে বিদায় নিতে। তাইতো প্রিয় এই খেলাটাকে বিদায় জানিয়েছেন নীরবে-নিভৃতে, ২০২০ সালে।

  • সুরেশ রায়না

ভারতের এই অলরাউন্ডার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন বেশ আগেভাগেই। বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেটে অসাধারণ এই ক্রিকেটার জাতীয় দলে ফিরতেই পারতেন। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন তিনি। তারপর অপেক্ষায় ছিলেন ফেরার। তবে, ফিরতে পারেননি। ২০২০ সালে হঠাৎই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই অলরাউন্ডার। কোনো রকম বিদায়ী ম্যাচ ছাড়াই তাঁকে বিদায় জানাতে হয় ক্রিকেট বিশ্বকে।

  • বীরেন্দ্র শেবাগ

ভারত তাঁদের অন্যতম সেরা এই ওপেনারকেও বিদায় জানিয়েছে কোনো আয়োজন ছাড়াই। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটিং এর সংজ্ঞাই পাল্টে দিয়েছিলেন এই ওপেনার। চিরকাল মেনে আসা হয়েছিল টেস্টের প্রথম এক ঘন্টা বোলার কে দিলে বাকি দিন ব্যাটসম্যানের। তবে শেবাগ এই থিওরিতে বিশ্বাসী ছিলেন না।

তিনি প্রথম বল থেকে তাঁর আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন। দিনের শুরুতেই বোলারদের মনোবল ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন। তবে ২০১৩ সালে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। তারপর আর সুযোগ না পেলে ২০১৫ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান।

  • গৌতম গম্ভীর

ভারতের ক্রিকেটে সবচেয়ে দরকারী কিছু ইনিংস খেলেছেন এই ওপেনার। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে কিংবা ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালেও জয়ের ভীত গড়ে দিয়েছিলেন তিনিই। যদিও তাঁর এই ইনিংস গুলো চাপা পড়ে যায় ধোনিদের বীরত্বে।

রোহিত শার্মা,শিখর ধাওয়ানরা ভারতীয় ক্রিকেটে আসার পর খুব একটা সুযোগ পাচ্ছিলেন না গম্ভীর। ২০১৬ সাল পর্যন্ত টেস্ট খেললেও পরে এখানেও জায়গা হারান। তারপর ২০১৮ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন এই ব্যাটসম্যান।

  • জহির খান

ভারতের ক্রিকেটে জহির খানের মত বা তাঁর মানের বাঁহাতি পেসার আর কখনো আসেনি। টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০-এর বেশি উইকেটের মালিক এই পেসার। ২০১১ বিশ্বকাপেও ভারতের বোলিং ডিপার্টমেন্টের মূল অস্ত্র ছিলেন তিনি।

২০১৪ সালে তিনি তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। তিনি মনে করতেন মোহম্মদ শামিরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তাই ২০১৬ সালে কোনো রকম আয়োজন ছাড়াই ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি।

  • যুবরাজ সিং

ভারতকে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন কে? কে আবার যুবরাজ সিং। ব্যাটে বলে সেই আসরে সমান ভাবে জ্বলে উঠেছিলেন তিনি। ভারতকে এনে দিয়েছিলেন শিরোপা। যদিও, এরপর ক্যান্সারের সাথে লম্বা সময় লড়াই করতে হয় তাঁকে। জাতীয় দলে ফিরেছিলেন বটে, তবে আর লম্বা সময় সার্ভিস দিতে পারেননি। সেভাবে তাই মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার সুযোগও হয়নি। ২০১৯ সালে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন তিনি।

৩০৪ টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। তাতে নয় হাজার ছুঁইছুই রান করেছেন তিনি। বল হাতে নেন ১১১ টি উইকেট। এছাড়া খেলেন ৪০ টি টেস্ট আর ৫৮ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...