জীবনানন্দ দাস বলেছিলেন, প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও মরে যেতে হয়। আসলেই তো, ধীরে ধীরে তো আমরা ছুটে চলছি কোন এক শেষের পানে। ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে সেটা আরো বেশি করেই সত্যি। খুব অল্প সময়ই তাঁরা মাঠে থাকার সুযোগ পান, একটা সময় ব্যাট প্যাড তুলে ঠিকই বলে দিতে হয় – বিদায়। আজকে আমরা এমনই পাঁচজন ভারতীয় ক্রিকেটারের গল্প বলব যারা এই ২০২১ এই সেই ‘বিদায়’ বলে দিতে পারেন হঠাৎ করেই।
- হরভজন সিং
হরভজনকে ভারত শেষবার বিবেচনা করেছে ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। তারপর থেকে আর দলে গোণায় ধরা হয়নি তাকে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, কূলদ্বীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহালের ভিড়ে আর সে সম্ভাবনাও নেই। খুব সম্ভবত হরভজন নিজেও আর সে সম্ভাবনা দেখছেন না।
তাই তো এ বছরই হুট করে অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিতে পারেন সুরেশ রায়না, যুবরাজ সিংদের ‘ভাজ্জি’ । হরভজনকে শেষবার ক্রিকেটে দেখা গেছে ২০১৯ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আইপিএলের ২০২০ সংস্করণে তিনি খেলেননি। সামনে আর খেলবেন কিনা দেখা যাক।
- অমিত মিশ্র
অমিত মিশ্র তাঁর খেলা শেষ ওয়ানডেতেও ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন। সেটা ছিল ২০১৬ সাল। কিন্তু এরপর থেকে কোন একটা কারণে ওয়ানডেতে আর নীল জার্সিতে দেখা যায়নি এই লেগ স্পিনারকে। তা ওয়ানডেতে না দেখা গেলেও ২০১৭ অবধি টি-টোয়েন্টিতে মিশ্রকে গুরুত্বের সাথেই বিবেচনা করত ভারত। তবে, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি যথেষ্ট সুযোগ পাননি। সামর্থ্য থাকার পরও ২০০৩ থেকে ২০১৭ – এই ১৩ বছরে খেলেছেন মাত্র ৬৮ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
এরপর দলে চাহালের আগমনে তাতেও ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন তিনি। বর্তমানে অবশ্য তিনি দিল্লী ক্যাপিটালস আর হরিয়ানার হয়ে পারফর্ম করে যাচ্ছেন তিনি। তবে যেকোন মুহূর্তেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিতে পারেন।
- দীনেশ কার্তিক
দীনেশ কার্তিককে ভারতীয়দের কেউ কেউ দুর্ভাগা বলে থাকেন। তাঁরা মনে করেন ধোনীর সময়ে জন্মানোটাই কাল হয়েছে কার্তিকের জন্যে। সেটা সত্যি কিনা সেটা অবশ্যি যাচাই করার সুযোগ নেই, তবে এটুকু তো সত্যি মহেন্দ্র সিং ধোনি না থাকলে দীর্ঘদিন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে কার্তিককেই খেলাতো ভারতীয় দল।
সে যাক, শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফির আলোড়নের পর তিনি আবারও এসেছিলেন আলোচনায়, তবে নিজের পারফর্ম্যান্স ধরে রাখতে পারেননি। সহসাই আর জাতীয় দলের দরজা খুলবে এমন সম্ভাবনাও নেই। তাই এ বছরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট তুলে দিতে পারেন তিনি।
- কেদার যাদব
ভারতীয় দল ছাড়ুন, আইপিএলেই সামনের সংস্করণে কেদার যাদব ফিরতে পারবেন কিনা সেটাতেই রয়েছে ঘোর সন্দেহ। শেষ হওয়া আইপিএলের আসরে তিনি ৮ ম্যাচে করেছেন ৬২ রান। এমন পারফর্ম্যান্স দিয়ে তো অন্তত ভারতীয় ক্রিকেটে টিকে থাকা বেশ কঠিন।
কেদার যাদবের ফর্ম অবশ্য এই বিশ্বকাপের পর থেকেই ভাল চলছিল না। বিশ্বকাপের মাঝপথে দল থেকে ছিটকেও গেছিলেন তিনি। সবাই যখন জাতীয় দলে কেদারের শেষ দেখে ফেলছিল, আইপিএলের এই পারফর্ম্যান্স তখন যেন কফিনে পেরেক ঠুকে দেবার মত হয়েই এল। এ বছরই তাই কেদার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিতে পারেন।
- স্টুয়ার্ট বিনি
পুরো ক্যারিয়ারটাই যেন উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে গেছে রজার বিনির ছেলে স্টুয়ার্ট বিনির। ভারতীয় ক্রিকেটে সেরা বোলিং ফিগারটাই তাঁর দখলে – ৪ রানের খরচায় ৬ উইকেট। এরপর মাত্র নয় ম্যাচের অভিজ্ঞতাতেই সুযোগ পেয়ে যান ভারতীয় দলে। ভারত মোটামুটি বিনির মধ্যেই দীর্ঘদিনের পেস বোলিং অলরাউন্ডার সমস্যার সমাধান দেখছিল। কিন্তু, সেই ২০১৫ থেকেই ওয়ানডে দলে অনিয়মিত হয়ে গেলেন তিনি।
এরপরও টি-টোয়েন্টিতে যা একটু সুযোগ পাচ্ছিলেন ২০১৬ সালে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান এভিন লুইসের কাছে এক ওভারেই পাঁচ ছক্কা খাওয়ার পর সে ফরম্যাটেও সুযোগ শেষ হয়ে গেল। আইপিএলেও তিনি অবিক্রিতই থাকেন। তাই এ বছরই হয়তো ইতি টেনে দিতে পারেন নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের।