তীরে এসেও তরী ডুবল ভারতের

লর্ডসে ভারতের দর্পচূর্ণ করে জয়ের নিশান উড়ালো ইংল্যান্ড। আগুনঝরা একেকটা দিন, ভয়ংকর স্লেজিং, চোখে চোখ রেখে দু'দলের লড়াই, সবকিছু অবশেষে শেষ হলো আর শেষটাতে হলো ইংলিশদের জয়জয়কার।

লর্ডসে ভারতের দর্পচূর্ণ করে জয়ের নিশান উড়ালো ইংল্যান্ড। আগুনঝরা একেকটা দিন, ভয়ংকর স্লেজিং, চোখে চোখ রেখে দু’দলের লড়াই, সবকিছু অবশেষে শেষ হলো আর শেষটাতে হলো ইংলিশদের জয়জয়কার।

শেষ দিনের সকালের সেশনটাই নির্ধারণ করে দিয়েছিল ম্যাচের ভাগ্য। আর্চার-স্টোকসদের আগুনে বোলিংয়ের সামনে বিদ্ধস্ত হয়ে যখন আহত যোদ্ধার বেশে ফিরে যাচ্ছিলেন লোকেশ রাহুল, তখনই সম্ভাবনার শেষ আলোটুকু নিভে যায়। জাদেজা একপ্রান্তে লড়েছেন একাই, তবে তলোয়ার ছাড়া তো আর যুদ্ধ জেতা যায় না। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৩৮৭, ভারতও করলো তাই। টেক্কাটা শুরু তখন থেকেই।

এরপর তৃতীয় দিনের শেষ ওভারের নাটকীয়তা, চতুর্থ দিনের সকালে বুমরাহ-সিরাজদের আধিপত্য বিস্তার—কতশত গল্পই তো এই পাঁচ দিনে লিখলো লর্ডস। সিরাজ-ওয়াশিংটনদের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ১৯২ রানে আটকে গেল ইংল্যান্ড, ম্যাচে তখন ফেবারিট ভারতই। যদিও লর্ডস বরাবরই আনপ্রেডিক্টেবল গ্রাউন্ড, তবুও ভারতের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপের সামনে এই রান চেজ করাটা খুব একটা কঠিন বলার উপায় ছিল না।

তবে প্রতিপক্ষ যে ইংল্যান্ড, হারার আগে হার স্বীকার করতে নারাজ স্টোকস বাহিনী। জয়সওয়ালের খাতা খোলার আগেই আর্চারের আঘাত, তখন থেকেই ইংল্যান্ডের সম্ভাবনা উঁকি দিয়ে ওঠে। এরপর একটা জুটি গড়ে উঠে, ৪১ রান পর্যন্ত আর উইকেটের দেখা পায়নি ইংল্যান্ড। তখনও পুরোপুরি ভাবে ড্রাইভিং সিটে ভারত। ইংলিশদের ছাই ছাপা সম্ভাবনাকে এবার টেনে তোলেন ব্রাউডন কার্স।

৪১ থেকে ৫৩—এই ১২ রানের মাথায় করুন নায়ার এবং কাপ্তান শুভমান গিলকে ফেরান তিনি। আর দিনের শেষটাতে নাইটওয়াচম্যান আকাশ দ্বীপকে তুলে নেন স্টোকস। লড়াইটা জমে উঠে আরও।

ভারতের সমস্ত ভরসা গিয়ে ঠেকে প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান লোকেশ রাহুলের দিকে। পান্ত আর রাহুল মিলে শুরু করলেন শেষ দিনের সকালটা। তবে সবকিছু ফিকে হয়ে এল আর্চারের গতির সামনে। ফেয়ারলেস পান্তের স্টাম্প উপড়ে দিলেন আর্চার, ভারতের বুকে যেন তীর বিধলো।

তবে রাহুল থাকায় একটা ক্ষীণ আশা বেঁচে ছিল ভারতের জন্য। আর তখনই স্টোকসের আঘাত, ভিতরে ঢুকে আসা বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন তিনি। নিভে যায় ভারতের শেষ সম্ভাবনাটুকু। এরপর অবশ্য জাদেজা আর নীতিশ রেড্ডি মিলে চেষ্টা করেছেন। নীতিশ ফিরে গেলে জাদেজা বুমরাহকে সাথে নিয়ে লড়েছেন। শেষটাতে একাই হাল ধরেছিলেন দলের, ফিফটি তুলে নিয়ে একটু একটু করে জয়ের পথে হাঁটছিলেন জাদেজা।

তবে শেষমেষ আর সম্ভব হয়নি জয়ের তীরে তরী ভেড়ানোর। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ইংল্যান্ড জয় পায় ২২ রানে। ২-১ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে থাকলো ইংল্যান্ড। ভারতের জন্য কঠিন হলো সিরিজ জয়ের স্বপ্ন। তবে লর্ডসে যে লড়াইটা হলো সেটাই ক্রিকেটের সৌন্দর্য, সেটাই তো সাদা পোশাকের গৌরবের লড়াই।

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link