সেই যে ২০০৭ সালে শেষবার উঠেছিল শিরোপা ঘরে এরপর থেকেই যেন রীতিমত দর্শক। অন্যের শিরোপা জয়ের দর্শক হয়ে কাটিয়ে দিল ভারত প্রায় দেড় দশক। মাঝে একদফা ফাইনালে উঠলেও হাত ছাড়া হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। গেল আসরে তো পার করাই গেল না প্রথম পর্ব।
এমন পারফরমেন্সে বিশ্বক্রিকেটের তাবৎ শিরোপা জেতা দলের সম্মান নিশ্চয়ই খানিকটা খর্ব হয়। সেই খর্ব হওয়া জৌলুশ ফিরিয়ে আনবার সব রকম চেষ্টাই নিশ্চয়ই করবে এবার টিম ইন্ডিয়া। তবে সে যাত্রায় ভারত জাতীয় দলের সঙ্গী হবে কে কে তা নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে সমর্থকদের মনে।
কোচ রাহুল দ্রাবিড় নিশ্চয়ই তাঁর খাতা-কলম নিয়ে তৈরি। ঝালাই করে নিচ্ছেন সকলকেই। দেখছেন সাম্প্রতিক ফর্ম। কিন্তু ভারতের ওপেনিংটা বড্ড বেশি একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে কি না সেটাও খানিকটা পরখ করে দেখছেন দ্রাবিড়। বা-হাতি ঈশান কিষাণকে বাজিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা মোটামুটি নির্ধারিতই যে ভারতের হয়ে ওপেনিংয়ে ব্যাট করবেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল।
সমস্যাটা হল এই দুইজনই ডান-হাতি। প্রতিপক্ষের যে কোন পরিকল্পনার দ্রুত ফল তুলে নেওয়া সম্ভব, যদি ওপেনিংয়ে বৈচিত্র না থাকে। এ দিক থেকে হয়ত ঈশান কিষাণ হতে পারেন একজন বৈচিত্র্যময় বিকল্প। কিষাণের স্ট্রাইকরেটটাও তাঁর পক্ষেই কথা বলে। তবে প্রথম পাওয়ার-প্লের পূর্ণ ব্যবহার তিনি আসলে করতে পারেননা। সেটা অবশ্য পুষিয়ে দেন খেলার মধ্যভাগে স্পিনারদের তুলোধুনো করে।
এই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজেই তিনি সে কাজটা করে দেখিয়েছেন। তবে কিষাণের একাদশে অন্তর্ভূক্তি এখনও বেশ একটা ধোঁয়াশা। অন্যদিকে দ্রাবিড় যদিও এক সিরিজেই বিচার করতে চান না কোন খেলোয়াড়কে, তবুও শ্রেয়াস আইয়ারের কাছে সুবর্ণ এক সুযোগ ছিল নিজেকে তিন নম্বরে থিতু করবার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি সেখানটায় খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তবে ব্যর্থ হয়েছেন।
এখানটায় তাঁর লড়াইটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরীক্ষিত বিরাট কোহলির সাথে। বিরাট কোহলির কাছ থেকে একটা জায়গা ছিনিয়ে নেওয়া নিশ্চয়ই মুখের কথা নয়। তবে খুব সম্ভবত পারলেন না শ্রেয়াস। আবার একথাও সত্য, তিনি বেশ সম্ভাবনাময় একজন ক্রিকেটার। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণও তিনি রেখেছেন। একাদশে সুযোগ পাওয়াটা কঠিন হলেও তিনি নিশ্চয়ই যাবেন দলের সাথে অস্ট্রেলিয়ায়।
আরও একটি মধুর সমস্যার জন্ম দিয়েছেন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় দীনেশ কার্তিক। হারিয়ে যাওয়ার এক ধুম্রজাল ছিঁড়ে তিনি নতুন রুপে হাজির হয়েছেন। এবারে আইপিএল মাতিয়েছেন। সে ধারাবাহিকতা বজায়ও রেখেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে। শেষের দিকে দ্রুত রান তোলায় এই মুহূর্তে তিনিই যেন সেরা। তবে তিনি একাদশে সুযোগ পেলে হিসেবে গড়মিল হবে বেশ।
তিনি খেললে ভারতকে খেলতে হবে একজন স্পিনার কম নিয়ে। সেক্ষেত্রে অক্ষর প্যাটেলের বাদ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কেননা রবীন্দ্র জাদেজা তো এ সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। কার্তিককে একাদশে সুযোগ দিতে গেলে তাহলে ভারতকে খেলতে হবে পাঁচজন বোলার নিয়ে। কারও খারাপ দিনে হয়ত বেশ ভুগতে হবে ‘ম্যান ইন ব্লু’-দের।
আবার ঋষাভ পান্তকে সরিয়ে খেলানো যায় নিশ্চয়ই। উইকেট রক্ষক ব্যাটার হিসেবে। তবে না সেটা খুব সম্ভবত হবে না। প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার ঋষাভ পান্ত। নিজের দিনে ঠিক কতটা ভয়ানক তিনি তা তো আর কারও অজানা নয়। তিনি যেকোন বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে রীতিমত ছেলে খেলা করার সামর্থ্য রাখেন। তাছাড়া তাঁকে দল থেকে ছেটে ফেলা মানেই হচ্ছে দলের একমাত্র বা-হাতি বৈচিত্র্যেও বদল আনা।
তবে সবচেয়ে স্বস্তির জায়গাটা বোধহয় ভুবনেশ্বর কুমার। তিনি যেন নিজের স্বরুপেই ফিরছেন। পিচ থেকে সামান্য একটু সুবিধা পেলেই তিনি যে কতটা কার্য্যকর একজন বোলার তাই যেন প্রমাণ করেছেন এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে। তাছাড়া প্রথম পাওয়ার প্লে-তে ভারতের হয়ে বর্তমানে তিনি উইকেট শিকার করছেন নিয়ম করে। সেদিকটা বড্ড বেশি স্বস্তিই দিচ্ছে।
ভুবনেশ্বর কুমার ইনিংস শুরু করে দেবেন আর জাসপ্রিত বুমরাহ ও হার্শাল প্যাটেল সামলেন নেবেন ‘ডেথওভার’। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আবারও ফেভারিটের তকমা গায়ে জড়িয়েই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে নামবে ভারত। নিজেদের সে ট্যাগের মর্যাদা ঠিক কতটুকু অক্ষুণ্ন রাখতে পারবে তা বলে দেবে সময়।