আরও একবার পাক-ভারত ফাইনাল?

একটা সম্ভাবনা দিচ্ছে উঁকি। ২০০৭ বিশ্বকাপের আবারও হতে পারে পুনরাবৃত্তি। না চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ এখনই নির্ধারণ করে ফেলবার সুযোগ নেই। কেননা মাঝে তো রয়েছে সেমিফাইনাল নামক এক কঠিন বাঁধা। তবে এই কঠিন বাঁধাই সম্ভাবনা দেখাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল লড়াইয়ের। আবারও তবে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব পুড়তে পারে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের আগুনে।

কিন্তু সেটা কেবলই সম্ভাবনা। ভারতকে পার করতে হবে ইংল্যান্ডের মত শক্তিশালী এক দলের বাঁধা। অন্যদিকে ধুকতে ধুকতে সেমিফাইনালের পথ খুঁজে পাওয়া পাকিস্তানকে হারাতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। নিউজিল্যান্ড তো গেল বারের ফাইনালিস্ট দল। ভাগ্যের নির্মমতায় বারে বারে তাদের হোচট খেতে হয় অন্তিম পরীক্ষায়। কিন্তু তেমনটা তো এবার নিশ্চয়ই হতে দিতে চাইবে না নিউজিল্যান্ড।

তবে পাকিস্তানকে হেলা করবার সুযোগ নেই বিন্দুমাত্র। হ্যা, জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে দলটি। তবে ভাগ্য হয়েছে সুপ্রসন্ন। তাঁরা নিজেদেরকে আবিষ্কার করছে সেমিফাইনালের মঞ্চে। দলটার বিষয়ে একটা কথার বেশ প্রচলন আছে, ‘আনপ্রেডিক্টটেবল’। গেল আসরে রীতিমত রাজত্ব করেছে পাকিস্তান। পরিষ্কার ফেভারিট হয়েই উঠেছিল সেমিফাইনালে। তবে বিধিবাম। শেষ আসরের চ্যাম্পিয়ন দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় পাকিস্তান। শিরোপা জয়ের আশাটা হয়ে যায় বিলীন।

কিন্তু এবারে পাকিস্তানের যাত্রাটা ছিল অমসৃণ। টুর্নামেন্টের শুরুতে ভারতের কাছে হেরেছে বাবর আজমের দল। গেল আসরের প্রতিশোধ। এরপরেই ঘটে অঘটন। জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে যায় শিরোপা প্রত্যাশি পাকিস্তান। পাকিস্তান টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাবে তেমন গুঞ্জনে সরব গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। তবে না, তাঁরাও ঘুরে দাঁড়ালো। ভাগ্যও সহায় হলো। পাকিস্তানের মিডল অর্ডার সমস্যার সমাধান মিলেছে। বোলিং আক্রমণ সে তো বরাবরই তুখোড়। এখন তাদের চিন্তা বাবর আজমের রানে না ফেরা।

সেমিফাইনালে সেটাও হয়ে গেলেই পাকিস্তানের জন্যে ফাইনালের যাবার পথটা হবে আরও খানিকটা মসৃণ। তবে লড়াইটা যে হবে জম্পেশ সেটা বলে দেওয়াই যায়। নিউজিল্যান্ডের তিন ইউনিট বড্ড দুরন্ত। তাদের বিপক্ষে পাকিস্তানকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হবে। পেস ডিপার্টমেন্ট হয়ত পাকিস্তানকে ভরসা জোগাবে। কিন্তু তাদের ব্যাটিংটা নিষ্প্রভ থেকে গেলে ফায়দাটা লুটে নেবে নিউজিল্যান্ড। পরপর দুইটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চয়ই তাঁরাও খেলতে চাইবে।

অন্যদিকে ভারত রয়েছে দুরন্ত ফর্মে। এবারের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম শক্ত দাবিদার তাঁরা। দলটার প্রধান চিন্তার জায়গা ছিল টপ অর্ডার ব্যাটারদের ফর্মহীনতা ও সেই সাথে পেস আক্রমণে জাসপ্রিত বুমরাহের অনুপস্থিতি। তবে টপ অর্ডারদের ফর্মহীনতা যেমন দূর হয়েছে ঠিক তেমনি বুমরাহের ঘাটতি পুষিয়ে নিয়েছে দলটি। আর্শ্বদীপ সিং, ভুবনেশ্বর কুমার ও মোহাম্মদ শামিকে নিয়ে গড়া পেস আক্রমণ এখন পর্যন্ত বেশ ফলপ্রসূ। সেই সাথে সুরিয়াকুমারের দানবীয় ব্যাটিং তাণ্ডব। সব মিলিয়ে স্বস্তির জায়গাটা পাকিস্তানের চাইতে ভারতের বেশি।

কিন্তু ইংল্যান্ডও নিশ্চয়ই খুব সহজে হাতছাড়া করবে না ফাইনালের যাবার সুযোগ। তাদের দলটাও বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। তবে জশ বাটলারের অফফর্মটা ভাবাচ্ছে দলটিকে। কিন্তু বাটলাররা চ্যাম্পিয়ন মানসিকতা ধারণ করেন নিজেদের মধ্যে। তাঁরা দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সময়ে জ্বলে উঠতে পারেন। আর তেমনটা হলে ভারতের আরও একবার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হতে পারে। অপেক্ষার প্রহর আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।

তবে সকল সম্ভাবনাকে পেছনে ফেলে নিশ্চয়ই পুরো ক্রিকেট বিশ্ব আরও একবার ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ দেখবার অপেক্ষায়। ক্রিকেট বিধাতাও নিশ্চয়ই তেমনটি প্রত্যাশা করে। নতুবা সব সমীকরণ উল্টে পাকিস্তানের সেমিফাইনালে পৌঁছানোটা একটা সময় অসম্ভবই মনে হয়েছিল। তবে সেটা যখন হয়েই গেছে আরও একবার ভারত-পাকিস্তান লড়াই প্রত্যাশা নিশ্চয়ই দোষের কিছু নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link