আন্তর্জাতিক সিরিজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার!

তবে কি আন্তজার্তিক ক্রিকেট এখন শুধুই বড় আসরগুলোতেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে? ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কাছে হার মানছে ক্রিকেটের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, খেলার মান?

দক্ষিণ আফ্রিকার ১২ সদস্যের দল। পাকিস্তানের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ। ছয়জন ক্রিকেটারের অভিষেক হবে। টেম্বা বাভুমা বাদে বাকি ‘অভিজ্ঞ’দের অভিজ্ঞতাও সামান্য। কারণ, এসএ টি-টোয়েন্টির ফাইনাল। এই ফ্র্যাঞাইজি আসর চলাকালে গেল বছর দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে টেস্টও খেলে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেবার দলের অধিনায়কেরও সেটাই ছিল অভিষেক!

তবে কি আন্তজার্তিক ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ শঙ্কার মুখে? আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) মেগা ইভেন্ট বাদে চাহিদা হারাচ্ছে সবখানে। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ক্রিকেটের পরাশক্তির দেশগুলো। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের টাকার ঝনঝনানি আর চার ছক্কার ডামাডোলে বিলুপ্তির পথে এখন আন্তর্জাতিক দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক সিরিজের ভবিষ্যৎ?

সাম্প্রতিক সময়ের হাবভাব কিন্তু অন্তত সেই ইঙ্গিত দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কথাই ধরুন না, পাকিস্তানে হতে যাওয়া ত্রিপাক্ষিক সিরিজের প্রথম ম্যাচে জন্য ১২ সদস্যর দল ঘোষনা করেছে তারা৷ এরমধ্যে জেরাল্ড কোটজে আবার ইনজুরির জন্য ছিটকে গেছেন। অর্থাৎ কোন বিকল্প ছাড়াই প্রথম ম্যাচটা খেলতে হবে তাদের। যে একাদশের ছয়জনের এখনো অভিষেকই হয়নি। দুইজনের ওয়ানডে ক্যারিয়ার মোটে দুই ম্যাচের৷ বাকি তিনজনের মধ্যে টেম্বা বাভুমা বাদে কারো নেই ২০ টা ওয়ানডে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাও।

এর অর্থ হল একদমই আনাড়ি এক দল নিয়ে পাকিস্তান গেছে প্রোটিয়ারা। অথচ দিন দশেক পরেই সেখানেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মত মহাগুরুত্বপূর্ণ এসাইনমেন্ট দলটির সামনে। কিন্তু, সেই স্কোয়াডের ডেভিড মিলার, কাগিসো রাবাদা, মার্কো ইয়ানসেন, এইডেন মার্করাম, ভ্যান ডার ডুসেন মত বড় খেলোয়াড়রা থাকবেনই না এই সিরিজে।

দ্বিতীয় ওয়ানডে থেকে দলের সাথে যোগ দিতে পারেন কেশব মহারাজ, হেনরিখ ক্লাসেন। অথচ টুর্নামেন্টের প্রস্তুতির জন্য এই সিরিজটি হতে পারতো বেশ চমৎকার মঞ্চ। কেন এই বড় তারকারা নেই জানেন? দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে ব্যস্ত তারা তাই। হ্যা, নিজের দেশের হয়ে খেলার থেকে এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলাটাই প্রধান্য পাচ্ছে বিশ্বব্যাপী।

শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় একই কাজ বহু বছর আগে থেকেই করে আসছে ‘সেনা’ দেশের আরেক পরাশক্তি নিউজিল্যান্ডও। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) অংশ নিতে খেলোয়াড়দের অনাপত্তিপত্র দিয়ে দেন তারা। ফলে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজগুলোতে পাঠান দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির দল। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দামামা বাজাতে বহু আগে থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের কন্ট্রাক্ট থেকে দূরে আসছে ক্যারিবিয়ানরা।

সারাবছরই ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট চলছে কোথাও না কোথাও। খেলোয়াড়দের আর্কষনও সেদিকে বেশি। অনাপত্তিপত্র দিতে বোর্ডকে চাপও দিতে দেখা যায় তাদের। কোনো কোনো ক্রিকেটার আরও এককাঠি সরেস, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই অবসর নিয়ে নেন শুধু ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জন্য।

এর ফলে আন্তজার্তিক ক্রিকেটের সিরিজগুলো অনভিজ্ঞ খেলোয়াড় আর বড় তারকার অভাবে হারাচ্ছে দর্শক। ব্রান্ডভ্যালু থেকে টিভি রাইটস সবই কমে কমে এখন আর্থিকভাবেই সচ্ছলতা হারাচ্ছে বোর্ডগুলো। তবে খেলোয়াড়রা ঠিকই মেজর টুর্নামেন্টে অংশ নিতে মুখিয়ে থাকেন। দলে সুযোগ না পেলে হা হুতশেরও শেষ থাকে না অনেক সময়। তবে কি আন্তজার্তিক ক্রিকেট এখন শুধুই বড় আসরগুলোতেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে? ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কাছে হার মানছে ক্রিকেটের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, খেলার মান?

Share via
Copy link