নতুন দিনের মশাল হাতে

একজন পথপ্রদর্শক, একজন আস্থাভাজন মেন্টরই বদলে দিতে পারে জীবনের গতিপথ। ভারতের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজার ক্ষেত্রে এই কথাগুলো ষোল আনা সত্য। তাঁকে পথ বাতলে দিয়েছেন, উপদেশ দিয়েছেন যিনি তিনি ভারতের সফলতম অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। এখন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের সাথে সমানে সমান লড়াই করছেন জাদেজা। অথচ তাঁকে ভরসা করতে যেন হত দ্বিধা।

২০০৮ সালে প্রথম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। রাজস্থান রয়ালসের হয়ে জিতেছিলেন সে শিরোপা। এরপর চেন্নাই সুপার কিংস শিবিরে যুক্ত হন তরুণ ক্রিকেটার জাদেজা। ব্যাটে-বল খুব যে আহামরি পারফর্মেন্স যে করতে পারতেন তিনি তা নয়। তাঁকে নিয়ে এক সংশয় ছিল চেন্নাই সুপার কিংসের।

সে সংশয়ের পেছনে মূল কারণ সে অপরিপক্কতা। তরুণ ক্রিকেটার, ব্যাট হাতে পূর্ণ এক ব্যাটার হতে হিমসিম খান, আবার বল হাতেও বেধম পিটুনি খেয়ে পুরণ করতে পারেন না নিজের বোলিং কোটা। এমন একজন অলরাউন্ডারকে নিয়ে সংশয় হওয়াটা যেন স্বাভাবিক। তবে জাদেজা ছিলেন লম্বা দৌড়ের ঘোরা। সেটা যেন আন্দাজ করতে পেরেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে দিন বদলের এই পুরো ক্রেডিট অবশ্য ধোনির একার না।

জাদেজার সংকল্প, তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও একাগ্রতা তাঁকে তাঁর বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে। তাছাড়া ধোনির তাঁর প্রতি অগাধ বিশ্বাস জাদেজার এমন আমুল পরিবর্তনের পেছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। আর সেই ধোনির স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন জাদেজা। চেন্নাই সুপার কিংসের নতুন অধিনায়ক এখন জাদেজা।

গেল মৌসুম থেকেই চেন্নাই ম্যানেজমেন্ট এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন যে জাদেজাকে পরবর্তী অধিনায়কের জন্যে প্রস্তুত করা হবে। তাঁর অধিনায়কত্বের মেন্টর হবেন ধোনি। অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন ধোনি তবে জাদেজা তাঁকে সহয়তা করবেন এবং শিখে নেবেন দল পরিচালনার সকল টোটকা। কিন্তু চেন্নাইয়ের আইপিএল ২০২২ এর জন্যে হওয়া প্রস্তুতি ক্যাম্পে ধোনি হয়ত অন্যকিছু আন্দাজ করতে পেরেছিলেন।

ধোনি হয়ত উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে জাদেজা অধিনায়কের দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার জন্যে প্রস্তুত। তাই হয়ত চেন্নাই সুপার কিংস আর কালক্ষেপন না করেই রবীন্দ্র জাদেজার উপর ছেড়ে দিয়েছেন মাঠে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব। মূলত বাকি ফ্রাঞ্চাইজি-তেও নতুন সব তারকাদের অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়াই উদ্বুদ্ধ করেছে চেন্নাই ও ধোনিকে।

রবীন্দ্র জাদেজা তাঁর এই নতুন দায়িত্ব নিয়ে নিশ্চয়ই বেশ চিন্তিত এবং উৎফুল্ল। বিশাল এক চাপ তিনি হয়ত অনুভব করতেই পারেন। তবে না তিনি সে চাপ অনুভব করছেন না। কেননা ধোনির ফেলে যাওয়া ‘লিগ্যাসি’ টেনে নিয়ে যাওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। সে লিগ্যাসি ধরে রাখার দায়িত্ব সামাল দিতে হবে সামনে থেকে। চাপটা কম হওয়ার কথা নয়। তবে জাদেজা বেশ নির্ভার।

নির্ভার জাদেজা বলেন, ‘মাহি (মহেন্দ্র সিং ধোনি) ভাই ইতোমধ্যেই বিশাল এক লিগ্যাসি তৈরি করে ফেলেছেন আমাদেরকে সেটা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাই আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমি সে কাজটা করতে পারব। তাছাড়া সে (ধোনি) এখনও রয়েছেন দলে, আমার চিন্তার বিশেষ কোন কারণ নেই। আমি যেকোন সময়ে তাঁকে যেকোন প্রশ্ন করতে পারব। আমি অবশ্যই তাঁর কাছে যাব।’

যে ধোনি তাঁকে সেরা খেলোয়াড় হতে সহয়তা করেছে সে ধোনিই এখন আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে জাদেজাকে, ভরসা দিচ্ছে। ধোনির দিকনির্দেশনা নিঃসন্দেহে তাঁকে সহয়তা করবে। তবে অধিনায়ক হিসেবে ব্যাট হাতে বাইশ গজে নেমে নিজের স্নায়ুচাপটা ঠিক কতখানি সামাল দিতে পারবেন কিনা জাদেজা সেটা একটা প্রশ্নের বিষয়। সে প্রশ্নের জবাব সময় দেবে।

তবে জাদেজা যে দলের দায়িত্ব পেলেন সে দলটা বেশ সমৃদ্ধ। তারুণ্যের জয়গানের সাথে সাথে অভিজ্ঞতার ধৈর্য্য আর দলের মাঝের অতল গভীরতা এসব কিছুর মিশেলে বেশ শক্তপোক্ত এক দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন জাদেজা। অতএব ভাল কিছু করবেন এই তারকা অলরাউন্ডার সে প্রত্যাশা করাটা খুব বড় ভুলের সামিল হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link