একটা বোমাই যেন ফাটালো ইংলিশ গণমাধ্যম ‘দ্য টাইমস’। অভিযোগের তীর সোজা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ফ্রাঞ্চাইজিদের দিকে। ক্রিকেট যে ক্রমশ বিরাট এক বিবর্তনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তেমন তথ্যই যেন আরও একবার সামনে এলো।
পৃথিবী ব্যপী ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বিস্তৃতি। আর অধিকাংশ ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটেই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে যুক্ত আছে আইপিএলের ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। সেটা ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ হোক কিংবা এসএ টি-টোয়েন্টি অথবা আসন্ন মেজর লিগ ক্রিকেট সবখানেই নিজেদের অফিস খুলে বসেছে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো।
এতটা বিস্তৃতির কথা মাথায় রেখে ভিন্ন এক পথ ধরেছে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। সে ধারাবাহিকতায় এবার তারা বেশকিছু ইংলিশ ক্রিকেটারকে প্রস্তাব দিয়েছে বছর ব্যাপী চুক্তিবদ্ধ হওয়ার। টাইমসের মতে ছয়জন ইংলিশ ক্রিকেটারকে প্রায় পাচ মিলিয়ন পাউন্ডের প্রস্তাব দিয়েছে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো।
এই প্রস্তাবে সম্মতি জানালে প্রথমত খেলোয়াড়দের ছাড়তে হবে জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় চুক্তি। ঠিক এমন প্রস্তাব আগেও দিয়েছিল আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। তবে সেবার অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য করেই এমন প্রস্তাবনা পেশ করেছিল তারা।
সেই ধারায় এবার যুক্ত হয়েছে ইংলিশ ক্রিকেটাররাও। ছয় জনের সবাই আন্তর্জাতিক তারকা ক্রিকেটার। ফ্রাঞ্চাইজি কিংবা খেলোয়াড়দের নাম প্রকাশ করেনি ইংলিশ গণমাধ্যমটি। তবে এটা নিশ্চিত করেছে তারা প্রত্যেকে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাদের প্রত্যেককে চুক্তি প্রস্তাব করা হয়েছে।
সে মোতাবেক তাদেরকে পরিচালনার সত্ত্ব চলে যাবে ভারতীয় একটি দলের কাছে। তখন ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড কিংবা কোন কাউন্টি দলের এখতিয়ার থাকবে না খেলোয়াড়দের উপর। চুক্তি সাক্ষরের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হতে পারে বছর শেষে। যদি খেলোয়াড়রা রাজী হন সে চুক্তিতে।
তবে রাজি না হওয়ার পথটা বেশ সংকীর্ণ। কেননা বেশ মোটা অংকের অর্থের প্রলোভন রাখা হয়েছে খেলোয়াড়দের সামনে। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের প্রায় পাঁচ গুণ বেশি পারিশ্রমিকের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে খেলোয়াড়দের। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় দলকে বিদায় জানানোটা সময়ের ব্যাপার।
তবে এই বিষয়গুলো ক্রিকেটকে ফুটবলের মডেলের দিকেই ধাবিত করছে। ফুটবলে বিভিন্ন ক্লাবের সাথে খেলোয়াড়রা চুক্তিবদ্ধ থাকেন বছর জুড়ে। শুধু জাতীয় দলে খেলার সময়টুকু ছাড় পান তারা। ঠিক সে পথেই যেন হাটতে চলেছে বিশ্ব ক্রিকেট। সেটা হওয়াও যেন অবধারিত।
কেননা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা প্রায় আকাশচুম্বী। অন্যদিকে টি-টেন টূর্নামেন্টগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। সেগুলোও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে দিনকে দিন। সেদিক থেকে খেলোয়াড়দের নির্দিষ্ট একটি ফ্রাঞ্চাইজির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও বেশ স্বাভাবিক। সেদিক থেকে বিপাকে পড়তে পারে আইসিসি। নিজেদের কাঠামো পুরো ঢেলে সাজাতে হবে তাদের।
যদিও আইসিসি একটা বিধি-নিষেধ আরোপ করবার পথ খুঁজছে। একটি খেলোয়াড় ঠিক কতগুলো ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টূর্নামেন্ট খেলতে পারবে সেটা নির্দিষ্ট করে দিতে চায় আইসিসি। সেদিক থেকে আবার আরও একটি সমস্যা রয়েছে। অধিকাংশ খেলোয়াড় তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফ্রী-এজেন্টে রুপান্তরিত হবে। সেদিক বিবেচনায় হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে পুরো ক্রিকেট কাঠামো।
তবে ক্রিকেটের এই অবশ্যম্ভাবী বিবর্তনকে আটকে রাখা বেশ দুষ্কর। দিনশেষে সবাই ভবিষ্যতের নিরাপত্তা চায়। আর বস্তুবাদের এই পৃথিবীতে অর্থের বিনিময়ে মেলে নিরাপত্তা, মেলে সুখ।