‘আমাদের এমন একজন স্পিনার দরকার ছিল যে ভাল বল গ্রিপ করার পাশাপাশি একই সাথে কুইক ডেলিভারিতে বল করতে পারবে’
এই মাস বারো আগের কথা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়া ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভারতের দল ঘোষণায় যুজবেন্দ্র চাহালের জায়গায় রাহুল চাহারকে স্কোয়াডে নেওয়ার ব্যাখ্যায় এমন কথাই বলেছিলেন প্রধান নির্বাচক চেতন শর্মা।
এর পর থেকেই নিজের পথ যেন হারিয়ে খুঁজছিলেন চাহাল। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ‘এ’ দলেও সুযোগ মেলেনি তাঁর। এমন দুর্দশাপন্ন অবস্থা থেকে তিনি অবশ্য ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেননি। ২০২২ আইপিএলে ১৭ ম্যাচে নিলেন ২৭ উইকেট। আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়ে নিজের দল রাজস্থান রয়েলসকে নিয়ে গেলেন ফাইনালে। যদিও ফাইনাল হারের ক্ষত নিয়েই সে আসরে তাকে থামতে হয়েছিল কিন্তু অনবদ্য বোলিং পারফরম্যান্স চাহালকে আবারো নব উদ্যমে চলার গতি দিয়েছিল। আবারো ভারত একাদশে সুযোগ পান তিনি।
২০২২ এশিয়া কাপ। আবারো সেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলা। এমন পিচে সহায়ক হবে না বলে এক বছর আগে যাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল সেই চাহালকেই আবার দলের একাদশে দেখা যায়। কিন্তু এক বছর আগে চেতন শর্মা তাঁর ভাবনায় যে ভুল ছিলেন না সে চিত্রই যেন উঠে এল চাহালের বোলিংয়ে ৷ এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপে খেলা ৩ ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে এসেছে মাত্র ১ টি উইকেট। ইকোনমি রেট ৭.৭৫, কিন্তু বোলিং স্ট্রাইক রেটটা গিয়ে ঠেকেছে ৯৩ তে।
চাহালের বোলিংয়ে এবার সবচেয়ে বড় যে দুর্বলতাটা ফুঁটে উঠেছে সেটি হলো, তাঁর বল ব্যাটাররা অতি সহজেই প্রেডিক্ট করে ফেলছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচে তিনি ১৬ টি বল একই লেন্থে করেছেন। কিন্তু বোলিং রিলিজের ক্ষেত্রে তাঁর বলটি স্লো মুভমেন্ট করছে। এ কারণে ব্যাটাররা ব্যাকফুটে তাকে অনায়াসেই খেলতে পারছে।
আরেকটি সমস্যা হলো, বলের স্পিড স্লো হওয়ার কারণে তিনি মাঝে মধ্যে ফ্লাইট দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বেশিরভাগ বলই ফ্লাইট হওয়ার বদলে ব্যাটারদের কাছে ফুলটস হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য ব্যাটাররা ডাউন দ্য উইকেটে এসেও চাহালের বল স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারছে। আর লেগ স্পিন হওয়া স্বত্ত্বেও বলের স্পিড কম হওয়ায় এমন পিচে টার্ণও তেমন আদায় করতে পারছেন না চাহাল।
দলের আরেক লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণয় আবার এমন পিচেই দারুণ বল করছেন। বর্তমানে চাহালের বোলিংয়ে একমাত্র ভরসা যেখানে ফ্লাইট হয়ে উঠেছে সেখানে রবি বিষ্ণয় নজর দিয়েছেন কুইক ডেলিভারিতে। কুইক ডেলিভারির কারণে তাঁর বলে স্কিডও হচ্ছে। এজন্য তিনি সফলতাও পাচ্ছেন। এবারের এশিয়া কাপে তাই ডেথ ওভার কিংবা ভারতের টাফ মোমেন্টে রবি বিষ্ণয়েরই দেখা মিলছে বেশি।
অস্ট্রেলিয়ার সিমিং কন্ডিশনে চাহাল কেমন করবেন? এমন অফফর্মে থাকা একটা বোলারকে নিয়েই ভারত দল অস্ট্রেলিয়ায় উড়াল দেবে? সেটার উত্তর পেতে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। কয়েক দিনের মাঝেই প্রকাশ হতে পারে ভারতের বিশ্বকাপ দল। জাদেজা ইনজুরিতে পড়ায় চাহাল হয়তো উৎরে যেতেও পারেন।
তবে ভারতের টেস্ট ব্যাটার চেতেশ্বর পুজারা মনে করেন, চাহলের আরেকটু কুইক বলা করা উচিত। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ‘টি-টোয়েন্টি টাইম আউট শো’ তে তিনি বলেন, ‘সে কিছুটা ব্যাটারদের কাছে প্রেডিক্টেবল। তাঁর প্রত্যেকটা বলই অফসাইড স্ট্যাম্প বরাবর যায়। বল বেশি কুইক না হওয়ায় ব্যাটাররা সেটা রিড করতে অনেক সময় পান। এজন্য অনেকেই স্টেপ আউট না করে ব্যাকফুটে গিয়ে অফসাইডে খেলতে সুবিধাবোধ করে। সে যদি একটু পেস জেনারেট করতে পারে তাহলে ডান-হাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে ভাল করবে’।
পুজারার কথাতেই স্পষ্ট, বোলিং নিয়ে চাহালের আরেকটু কাজ করা দরকার। নয়তো টি-টোয়েন্টি দলে ব্রাত্য হয়ে পড়বেন তিনি। কারণ বর্তমানে তার বোলিংয়ে তেমন কোনো ধারই লক্ষণীয় না। একদম নির্বিষ বোলিং যেটাকে বলে সেটাই করে যাচ্ছেন।
অবশ্য ভারতের আরেক ক্রিকেটার রবিন উথাপ্পা মনে করেন, ‘চাহাল দারুণ একজন স্পিনার। শুধু উইকেটটাই তিনি পাচ্ছেন না। কিছু উইকেট পেলেই পুরনো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন তিনি’। তবে উথাপ্পা চাহালকে পরামর্শ দিয়ে আরো বলেন যে, ‘চাহালকে তাঁর বোলিংয়ে ভ্যারিয়েশন আনতে হবে। কুইক ডেলিভারি, ফ্লিপার রপ্ত করতে হবে’।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক যুজবেন্দ্র চাহাল। রেকর্ড পক্ষে কথা বলছে, কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম তাকে বেঁকে নিয়ে গিয়েছে ১৮০ ডিগ্রি কোণে। সেখান থেকে উঠে আসার সুযোগ অবশ্য তিনি পাচ্ছেন, সামনে পাবেনও। কিন্তু ক্রমাগত ভিন্ন কন্ডিশনের সাথে মানাতে না পারলে বড় আসরে টিম ইন্ডিয়ার জন্য তিনি অবশ্যম্ভাবী ভাবেই হয়ে যাবেন বড় একটা ‘কোয়েশ্চেন মার্ক’।