ঈশান কিষাণ: বিগ মানি সুপারস্টার

তখন ২০১৬ সাল। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নিলামের কিছুসময় আগে তখন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ভারত। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে নেটে ব্যাটিং করছিলেন তরুণ ঈশান কিষাণ।

নেটে বারবার চেষ্টা করছিলেন বড় শট খেলার। কিন্তু, কোনো ভাবেই পারছিলেন না। পরের ম্যাচেই কোয়ার্টার ফাইনালে দলকে নেতৃত্ব দিবেন ঈশান। কোচ রাহুল দ্রাবিড় যেন একটু বিরক্তই হলেন। ডেপুটি অধিনায়ক ঋষাভ পান্তকে ডেকে বললেন, ‘ওকে বলো শান্ত থাকতে!’

এর ঘণ্টাখানেক পর ঈশান টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাকে এখন এটা নিয়ে ভাবতে হবে না। এরপর তো আইপিএলই হয়তো খেলতে হবে।’

এর একদিন পরই পান্ত ১.৯ কোটি রুপিতে ও ইশান আইপিএল নিলামে বিক্রি হয় মাত্র ৩৫ লাখ রুপিতে! পান্তের ক্যারিয়ার এরপর ধীরে ধীরে উঠতে থাকে অনেক উপরে। আইপিএলে সফলতার পর সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় দলেও।

ঈশান নিজেকে প্রমাণ করেছেন ধীরে ধীরে। আর ২০১৬ সালে ৩৫ লাখ রুপিতে বিক্রি হওয়া সেই ঈশান ২০২২ আইপিএলের নিলামে রেকর্ড গড়ে ১৫ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে বিক্রি হয়েছেন! নিলামে চলতি বছর এখন পর্যন্ত এক অর্থকড়ি আর কেউই পাননি।

সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের সাথে লড়াইয়ে ১৫.২৫ কোটিতে ঈশানকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। আসলে, এই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সই তাঁর ঘরবাড়ি।

আর এই নিলামের মাধ্যমে নিজেকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন ঈশান। চলতি মৌসুমে ঈশান কিষাণের দামের চেয়ে মাত্র ৭৫ লাখ রুপি বেশি পেয়েছেন মুম্বাইয়ের স্বয়ং অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ঋষাভ পান্ত ও রবীন্দ্র জাদেজা। এছাড়া লোকেশ রাহুলের চেয়ে মাত্র ১.৭৫ কোটি রুপি কম পেয়েছেন ঈশান। চড়ামূল্যে বিক্রি হয়ে ইশান বনে গেছেন আইপিএলের ‘বিগ মানি সুপারস্টার’।

গেলো চার বছর ধরে ঈশানের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। শুরুতে কুইন্টন ডি ককের ব্যাকআপ হিসেবে খেললেও ধীরে ধীরে বনে যান নিয়মিত মুখ। মুম্বাইয়ের জার্সি গায়েই পরিণত হন এই পকেট ডায়নামাইট।

অবশ্য চলতি বছর নিলামের আগেই ড্রাফট থেকে ঈশানকে দলে ভেড়াতে চেয়েছিলো নতুন ফ্র‍্যাঞ্চাইজি গুজরাট লায়ন্স। তবে ইশান নিজেই চেয়েছিলেন নিলামে যেতে! মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কোচ, লঙ্কান কিংবদন্তি মাহেলা জয়াবর্ধনেও ইশানের ক্যারিয়ারে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তরুন ইশানকে সেরাটা দিতে সবসময়ই পাশে ছিলেন সাবেক এই লঙ্কান গ্রেট।

২০১৮ সালে ৬.৪ কোটি রুপিতে ঈশানকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। সেবার ডি ককের ব্যাকআপ হিসেবেই দলে ছিলেন তিনি। চার বছরে নিজের সেরাটা দিয়ে বনে গেছেন দলের অন্যতম এক্স-ফ্যাক্টর।

মুম্বাই বরাবরই তরুণদের উপর বিনিয়োগ করে তাঁদেরর বেড়ে ওঠার জন্য অন্যতম সেরা ফ্র‍্যাঞ্চাইজি হিসেবে পরিচিত। এই বড় বিনিয়োগের একটা অংশ ছিলেন ইশান। ২৩ বছর বয়সে রোহিত শর্মা অধিনায়কত্বে নিজেকে তৈরি করার সেরা সুযোগই পেয়েছেন মুম্বাইতে।

ইশানের বাবা প্রণব পান্ডে গেলো আগস্ট মাসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সে ক্রিকেট থেকে যে টাকা আয় করে সেটা পরিবারকে দেয় এবং এখনো সে নিজের হাত খরচের জন্য টাকা নেয়! তাঁর পুরো ফোকাসটা ক্রিকেটকে ঘিরেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link