সাকিব আল হাসানকে ছুঁয়ে ফেলার দুয়ারেই ছিলেন। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত পারলেন না। চার উইকেট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল রবীন্দ্র জাদেজাকে। ঘূর্ণির জালে রবীন্দ্র জাদেজা জড়িয়ে ফেলেছিলেন ইংলিশ মিডল অর্ডার। কিন্তু বিধি বাম—চারেই থামল তাঁর যাত্রা। একটুর জন্য অধরা থেকে গেল পাঁচ উইকেট।
আর তাতেই, ইংল্যান্ডের মাটিতে বাঁহাতি স্পিনে শেষবারের মতো ভিনদেশী কারও ফাইফারের সেই গল্পটা আবারও উঁকি দিল। ২০১০ সালের সেই বর্ষার মৌসুম, সেই স্লিপে ক্যাচ, সেই আর্ম ডেলিভারির ভেতর লুকিয়ে থাকা ক্ষণিকের সেই জাদু। সেই জাদুকর ছিলেন সাকিব আল হাসান। সেবারই শেষবারের মত কোনো উপমহাদেশীয় বোলার পাঁচ উইকেট পান এই ম্যানচেস্টারে।
জিম লেকার যেখানে ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন, সেটা উপমহাদেশীয়দের জন্য কোনো পয়া ভেন্যু নয়। মাত্র পাঁচবার এখানে উপমহাদেশের কোনো বোলার পাঁচ উইকেট পেয়েছেন। সাকিবের আগে সর্বশেষ সেই ১৯৯২ সালে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন ওয়াসিম আকরাম।
আর বাঁ-হাতি স্পিনারদের কথা ধরলে, সাম্প্রতিক সময়ে ম্যানচেস্টারে সাকিবের ওপর নেই কেউ। গত ১৫ বছরে রবীন্দ্র জাদেজা ২৮ ইনিংস, রঙ্গনা হেরাথ ১৩ ইনিংস, কেশভ মহারাজ ১২ ইনিংস—বল ঘোরাতে এসেছেন ইংল্যান্ডের সবুজ উইকেটে। সবাই বাঁ-হাতি স্পিনার। সবারই সুযোগ ছিল সাকিবকে ছুঁয়ে ফেলার। তবে, পারেননি কেউ।
শেষ ভিনদেশি বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ম্যানচেস্টারে ফাইফারের তালিকাটা থেমে আছে সাকিব আল হাসানে। ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের জ্যাক লিচ কেবল ছুঁতে পেরেছিলেন সাকিবকে। এর আগে এই শতাব্দীতে আরেকবার হয়েছে এই ঘটনা। সেই কীর্তিমানের নাম নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। গোটা শতাব্দীজুড়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে বাঁহাতি স্পিনে ফাইফারের গল্প বলতে গেলে এই তালিকায় দু’জনই আসবেন — ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ও সাকিব আল হাসান।
নিন্দুকেরা বলেন, সাকিবের বোলিংয়ের অনেক কীর্তিই নাকি হয়েছে ছোট দলের বিপক্ষে। অনেকেই বলেন, স্পিনিং উইকেটে খেলেন বলেই আজ এত উইকেট। কিন্তু সেই সাকিব, ক্যারিয়ারের চতুর্থ বছরেই সিমিং কন্ডিশনে সেই ফাইফারটা তুলে নিয়েছিলেন।
ম্যানচেস্টারের মেঘলা আকাশে, ব্রড-আন্ডারসনের দেশে, এক তরুণ সাকিব বল হাতে যা করে গিয়েছিলেন, তা আজও তা অনতিক্রম্য এক সীমারেখা হয়ে রয়ে গেছে বাঁহাতি স্পিনারদের জন্য। সর্বকালের সেরা বাঁ-হাতি স্পিনার — এই ছোট্ট ব্র্যাকেটে সাকিবের নামটা তাই অনায়াসেই আসে বারবার।
সেই তালিকায় রবীন্দ জাদেজার নামও আসে। কিন্তু, ম্যানচেস্টারের এই লড়াইয়ে তিনি সাকিবের কাছে হেরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করার সুযোগও যে পাবেন তিনি, সেই কথাও হলফ করে বলা যাচ্ছে না।