রবীন্দ্র জাদেজা একটা বিশ্বাসের নাম, নির্ভরতার নাম। অন্ধকারের মাঝে আলো হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভরসার নাম। সবাই যখন ভেঙে পড়ে, সম্ভাবনার শেষ চিহ্নটুকু মুছে দিয়ে যায় সময়, তখনও জাদেজার ব্যাটে নীরব যুদ্ধ চলে।
ভারতের সব তাবড়-তাবড় ব্যাটারদের ভিড়ে চোখ পড়ে না তার উপর। বল হাতে বুমরাহ-সিরাজরা সব আলো নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নেন। জাদেজা যেন সূর্যের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছায়ামূর্তি। তবে নিজের কাজটা তিনি ঠিকই করে যান সবার অগোচরে। কখনো ব্যাট হাতে দলের হয়ে ইমপ্যাক্টফুল ইনিংস খেলে, কখনো বা বল হাতে এনে দেন ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া ব্রেকথ্রু। আবার ফিল্ডিংয়ে মাঠ জুড়ে একক শাসন চলে তার।
তবে লর্ডসে তৃতীয় টেস্টে যে চেষ্টা করলেন সেটা হয়তো একটা অবিশ্বাস্য কবিতা হতেই পারত, হতে পারত সাদা পোশাকে জীবনের সেরা ইনিংসগুলোর একটি। সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তবুও একা হাতে ইংলিশ পেসারদের যেভাবে রুখে দিয়েছিলেন একটা সময় সেটা তাকে আরও একবার নতুন করে চিনিয়ে দিল। বুঝিয়ে দিল কেন তিনি নম্বর ওয়ান অলরাউন্ডার।
প্রথম ইনিংসে যখন ইংল্যান্ড ৩৮৭ রানের বড় পুঁজি স্কোরবোর্ডে জমা করলো, তখনই একটা বাড়তি চ্যালেঞ্জ ছিল ভারতের ব্যাটিং অর্ডারের সামনে। তবে লোকেশ রাহুল এবং পান্তের অনবদ্য জুটি স্বস্তি এনে দেয় ভারতকে। পান্তের ৭৪ রানের ইনিংস এবং রাহুলের ক্লাসিক্যাল সেঞ্চুরি সব আলো কেড়ে নেয়।
তখনও কাজটা বাকি ছিল, ভারত পিছিয়ে ছিল বড় ব্যবধানে। রাহুল-পান্ত ফিরে গেলে তাই তো দুশ্চিন্তায় পড়ে ভারত। তবে নীরবে সবকিছু সামলে নিলেন একজন, বোধহয় সবার আড়ালে লুকিয়ে ৭২ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলের অবস্থাটা পাকাপোক্ত করেন। তবে অনেকের এই ইনিংস হয়তো খুব একটা চোখে পড়েনি।
দ্বিতীয় ইনিংসে জাদেজা এবার আলোর পর্দা সরিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালেন। ইংল্যান্ডের দেওয়া ১৯৩ রান যখন পাহাড়সমান, যখন একে একে সবাই আত্মাহুতি দিয়ে ফিরে গেছে সাজঘরে, তখনই ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন ভারত শিবিরের। স্টোকস, আর্চারের গতির সামনে সম্ভাবনার দ্বীপ জ্বালিয়ে রাখলেন, তুলে নিলেন আরও এক ফিফটি।
শেষ পর্যন্ত জেতা হলো না ভারতের। ৬১ রানে অপরাজিত থেকে একটা ব্যর্থ যুদ্ধ শেষ করলেন জাদেজা। নিজের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেও থাকলেন পরাজিতদের দলে।
তাতে কি? জাদেজার লড়াইটা যে আজ সবাই দেখলো। সবাই দেখলো সব আলো নিভে গেলে কিভাবে অন্ধকারে পথ চলতে হয়, কিভাবে প্রতিপক্ষের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে হয়। পরাজিতদের কেউ মনে রাখে না। জাদেজার এই ইনিংসটাও হয়তো সবাই ভুলে যাবে। তবে লর্ডসের মাঠটা নিশ্চয় মনে রাখবে, ক্রিকেটের রেকর্ড বুকটা মনে রাখতে বাধ্য জাদেজার এই নীরব লড়াইকে!