জাকের আলি ইজ আ ফাইটার। কি অভাবনীয় এক যাত্রা! তার ব্যাটিং মনোমুগ্ধকর নয়। আপনি দেখে বাহবা দেবেন না নিশ্চয়ই। কিন্তু বেশ কার্যকর এক একটি ইনিংস খেলে যাচ্ছেন তিনি। টানা তৃতীয় টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলে ফেলেছেন জাকের আলি অনিক। অথচ তিনি লাইমলাইটে এসেছেন বিপিএল দিয়ে। টি-টোয়েন্টি ব্যাটারের তকমাই তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যে পুরোদস্তুর একজন টেস্ট ব্যাটার, সেটাই প্রমাণ করছেন।
পরিস্থিতি বিবেচনায় তার প্রত্যেকটি ইনিংস বাংলাদেশকে দিয়েছে নতুন লাইফলাইন। সীমাবদ্ধতার শেষ নেই তার। সব বলকেই লেগ সাইডে খেলতে চান তিনি। বিরক্তিকর হয়ত মনে হয় কোন কোন ক্ষেত্রে। কিন্তু তিনি বাইশ গজে কি করছেন বা করবেন, তা সম্পর্কে তার রয়েছে স্পষ্ট ধারণা।
এখনই তুলনা করবার মত পরিস্থিতি এসে যায়নি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা ব্যাটার স্টিভেন স্মিথও একই ধারার ব্যাটিং করেন। অফ স্ট্যাম্পের দিকে সাফেল করে, বলের লাইনকে নিষ্ক্রিয় করবার বেশ দারুণ টেকনিকে সফলতাও পেয়েছেন তিনি।
অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলগুলো সাধারণত বেশ ভয়ংকর হয়। সামান্য ভুলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। জাকের সেই সম্ভাবনাকে যতটা সম্ভব কমিয়ে দেন। আর সেই ধারার ব্যাটিংয়েই সফলতার দেখা পাচ্ছেন জাকেরও।
তাছাড়া পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এখন অবধি খেলা প্রতিটা ইনিংসেই তাকে ব্যাটিং করতে হয়েছে শেষের দিকে। টেলএন্ডারদের সাথে করে ব্যাটিং করাটা মোটেও সহজ কাজ নয়। যতটা সম্ভব ঝুঁকি এড়িয়ে ব্যাটিং করে যেতে হয়। জাকের সে কাজটাই করছেন। বাংলাদেশের ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইনআপে তিনি একাই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন সাদা পোশাকে।
তাছাড়া অফ স্ট্যাম্পের দিকে এগিয়ে গেলেও তিনি নিজের ফ্রন্টফুটকে বলের লাইন থেকে দূরেই রাখেন। এছাড়া পায়ের উপরের বলগুলো হ্যান্ড-আই কম্বিনেশনের কারণে দারুণভাবে খেলতে পারেন জাকের। নিজের প্রতি সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই তিনি লেগ সাইডকে উন্মুক্ত করেন নিজের জন্যে।
শুধু যে বল ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল চুরি করেন তিনি, তা কিন্তু নয়। গ্যালারিতেও বল ফেলতে জানেন। স্যাবাইনা পার্কের গ্যালারিতে বল পাঠিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডারকে বাধ্য করেছেন বল খুঁজে নিয়ে আসতে। কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি উইকেট আগলে রাখতে জানেন। আবার সময় সুযোগ মত পেশি শক্তির ব্যবহারটাও করতে জানেন।
অর্ধশতক করবার পথে তিনি টানা তিনটি বাউন্ডারিও মেরেছেন। ব্যাটিংয়ের গিয়ার পরিবর্তনের কাজটাও করতে জানেন জাকের। মোদ্দা কথা ব্যাটার হিসেবে তিনি কার্যকর সব ইনিংস খেলতে বড্ড পটু। আর নিজের সক্ষমতা সম্পর্কেও অবগত তিনি। সে কারণেই সফলতা এসে ধরা দিচ্ছে তার ব্যাটের গোড়ায়। এই ধারাবাহিকতাটুকু অব্যাহত থাকুক, এখন সেটুকুই প্রত্যাশা।