বুমরাহ ও নো-বল প্রীতি/বিপত্তি

২০১৭ সালের কথা। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল চলছে। ভারত ও পাকিস্তানের ধুন্ধুমার লড়াই।

দলীয় ৮ রানেই জাসপ্রিত বুমরাহর বলে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত তিন রানে আউট পাকিস্তানি ওপেনার ফখর জামান। টিভি স্ক্রিনে রিপ্লেতে দেখা গেলো বুমরাহ ওভারস্টেপ করেছেন। ব্যাস, নো বলের কারণে বেঁচে গেলেন ফখর। সেখান থেকেই তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। এক নো বলেই কিনা ম্যাচ জয়ী সেঞ্চুরি তুলে নেন ফখর জামান।

সেদিন ‘নো’ কে নো বলতে পারলে হয়তো ম্যাচের চেহারাটাই অন্যরকম হতে। তবে, নো বল আর বুমরাহ যেনো একসূত্রে গাঁথা।

সম্প্র‍তি লর্ডস টেস্টে রেকর্ড পরিমাণ নো বল দিয়ে আবারো আলোচনায় এসেছেন বুমরাহ। চলতি লর্ডস টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৩টি নো বল করেন বুমরাহ। অবশ্য সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জেমস অ্যান্ডারসনের বিপক্ষে তিনি ১০ টি নো বল করেছেন! এমনকি এক ওভারেই দিয়েছেন চারটি নো বল! বুমরাহর নো বল কান্ডেই ইংলিশরা ২৭ রানের লিড পায়। ভারতের হয়ে টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ নো বল দেওয়ার রেকর্ডে জহির খানের সাথে যৌথভাবে এখন এক নম্বরে আছেন বুমরাহ।

২০০২ সালে গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে এক ইনিংসে ১৩টি নো বল দেন জহির খান। ভারতের হয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ নো বল দেওয়ার রেকর্ড ছিলো এটিই। লর্ডস টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৩টি নো বল দিয়ে এই তালিকার শীর্ষে জহির খানের পাশে নাম লেখান বুমরাহ।

শুধু তাই নয় টেস্টে এক ইনিংসে কোনো উইকেট না পাওয়া ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নো বলের লজ্জার রেকর্ড গড়েছেন বুমরাহ। সবশেষ ২০১০ সালে মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক ইনিংসে ১০ টি নো বল করেন ইশান্ত শর্মা, শিকার করতে পারেননি কোনো উইকেট।

লর্ডস টেস্টে জাসপ্রিত বুমরাহর ১৩টি নো বল দলের জন্য অবশ্যই হতাশাজনক বটে। আর তিনি যে মানের বোলার তাতে এটা গ্রহণযোগ্যও নয়। গত এক দশকেও কোনো টেস্টেরর প্রথম দিনে কোনো বোলার এতো নো বল দেননি। এমনকি গত সাত বছরে দলীয়ভাবেও কোনো টেস্টের প্রথম দিনে এতো নো বল দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। লর্ডস টেস্টের তৃতীয় দিনে ভারতীয় বোলাররা মোট ১৪টি নো বল করে। সবশেষ ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে লঙ্কান বোলাররা এক দিনে ১৫টি নো বল করেছিলো।

লর্ডস টেস্টের তৃতীয় দিনে ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসনকে অনবরত বাউন্সার দিচ্ছিলেন বুমরাহ। অ্যান্ডারসনের শরীর লক্ষ্য করেই বাউন্সার মারছিলেন তিনি। এতেই বাঁধে বিপত্তি। অতিরিক্ত আগ্রাসী মনোভাব দেখাতে গিয়ে করেন একের পর এক নো বল।

অবশ্য আগ্রাসনের শেষটাও ছিলো তিক্ত। ২৬ ওভারে ৭৯ রানে উইকেটশূন্য থাকেন বুমরাহ। নিজের শেষ ওভার করতে সময় নেন ১৫ মিনিট! চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল থেকে চলতি লর্ডস টেস্ট; বুমরাহ আলোচিত-সমালোচিত নো বল কাণ্ডে।

এই নো বল বাঁধা কি ক্যারিয়ার জুড়ে ছায়া হয়েই থাকবে? আর এবার, এবার সমালোচনার তীরে একটু বেশিই বিদ্ধ হতে হচ্ছে তাঁকে। বলাই বাহুল্য, এই নো-বল চক্রের এই দু:স্বপ্ন থেকে দ্রুতই বের হওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা খালি নেই বুমরাহর সামনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link