সেই ব্যাঙ লাফের নেপথ্যে…

ক্রিজে তখন ব্যাট হাতে জাভেদ মিয়াঁদাদ। বল করলেন ক্ষুদে শচীন টেন্ডুলকার। জাভেদ বলটি মিস করলেন কিন্তু উইকেটের পেছন থেকে কিরণ মোরে এমনভাবে আবেদন করলেন যেনো বলটি জাভেদের ব্যাট স্পর্শ করে এসেছে৷ আম্পায়ার কিরণের আবেদনে অবশ্য সাড়া দেননি, তবে বেশ বিরক্তই হয়েছিলেন জাভেদ!

এরপর একটা বলে রান আউটের সুযোগ আসে! কিন্তু ফিল্ডার উইকেটরক্ষকের কাছে বল দেওয়ার আগেই ক্রিজের ভিতরে চলে আসেন জাভেদ। উইকেটরক্ষক কিরণ মোরে বল ধরেই স্টাম্প ভাঙার চেষ্টা করে, অনেকটা জাভেদকে লক্ষ্য করেই ছোট লাফ দেন। এরপরই জাভেদ স্টাম্পের সামনে ব্যাঙের মতো লাফ দিতে থাকেন!

সেদিনের জাভেদের সেই হাস্যকর কান্ড এখনো ভুলেনি ক্রিকেট ভক্তরা।

বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান মানেই একপেশে লড়াই। এই লড়াইয়ের শুরুটা ১৯৯২ বিশ্বকাপ থেকে। যেবার পাকিস্তান ইমরান খানের নেতৃত্বে শিরোপা ঘরে তোলে। সেই ১৯৯২ বিশ্বকাপ থেকেই বিশ্বকাপ মঞ্চে ভারতের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান। ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো দুই দল মুখোমুখি হয়! আর ভারতের কাছে সেই ম্যাচে পরাজিত হয় পাকিস্তান।

সেই ম্যাচে শুধু যে দুই দলের প্রথম বিশ্বকাপে লড়াই সেটাই নয়, কিরণ মোরে ও জাভেদ মিয়াঁদাদের বাক বিতণ্ডা। ১৯৯২ এর ভারত-পাকিস্তানের সেই লড়াইয়ের কথা মনে হলেই মনে পড়ে সেই ‘ব্যাঙ লাফ’! ম্যাচে জয়-পরাজয় সব ছাপিয়ে সেই ‘ব্যাঙ লাফ’ ক্রিকেট পাড়ায় এক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

সম্প্রতি এক ইউটিউব শো ‘দ্য কার্টলি এন্ড কারিশমা’তে সাবেক ভারতীয় উইকেটরক্ষক কিরণ মোরে সেই ম্যাচের ঘটনাকে মনে করে বলেন, ‘জাভেদ আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো। কিন্তু ওই ম্যাচে ১৯৯২ সালে আমরা প্রথমবার বিশ্বকাপে মুখোমুখি হই। আমাদের দলের উপর তখন অনেক চাপ ছিলো। দর্শকরা অনেক শব্দ করছিলো যার কারণে আমাদের উপর একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছিলো। এটা আমাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিলো।’

স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ব্যাট করতে যাই তারা (পাকিস্তান খেলোয়াড়) আমাদের সামনে অনেক কিছু করেছিলো। আমরা যখন ব্যাটিং করি মঈন খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ ও সেলিন মালিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেকেই আমাদের চারপাশে ছিল এবং চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছিল। তাই আমরা যখন ফিল্ডিংয়ে গেলাম ওরা যা করেছিলো সেটাই তাদের ফিরিয়ে দিতে আমি নেতৃত্ব দেই। আমিই এটা শুরু করি এবং পরবর্তীতে শচিন টেন্ডুলকার, কপিল দেবরাও এতে যোগ দেয়। আমরা সেই ম্যাচটা জিততে চেয়েছিলাম। আমি আমির সোহেলের সাথে কথা বলা শুরু করেছিলাম এরপর ক্রিজে জাভেদ আসে।’

জাভেদ মিয়াঁদাদ সেদিন শতভাগ ফিট ছিলেন না। কিরণ মোরে বলেন, ‘জাভেদের তখন পিঠে ইনজুরি ছিল। আমি বোলারদেরকে বলছিলাম তাকে শর্ট বল না করতে। যদি আপনি শর্ট বল করেন তাহলে তার পিছনে ইনজুরি থাকা সত্ত্বেও তার জন্য সেটা কাট শটে খেলাটা সহজ হতো। সে অনেকটা ভয়ে ছিলো। সে মিড অফ এবং কভারে বার বার ড্রাইভ করতে চাচ্ছিলো কিন্তু ঠিকভাবে পেরে উঠছিলেন না।’

আর জাভেদের সেই লাফ দেওয়া নিয়ে মোরে বলেন, ‘সে প্রথমে হিন্দিতে আমাকে বলে যে আমরা (পাকিস্তান) এই ম্যাচ জিতবো। এরপর আমি বলেছিলাম ভাগো, আমরাই এই ম্যাচ জিতবো। এরপরই শচিনের বলে আমি ক্যাচের আবেদন জানাই, আমি ভেবেছিলাম এটা ক্যাচ ছিলো। কিন্তু তারপরই জাভেদ আমার দিকে বিরক্তি দেখায়। আমি তাকে বলি চুপ করো, সেও আমাকে একই কথা বলে। এরপর একটা রান আউটের আবেদন জানাই আমি স্টাম্পের সামনে ছোট একটা লাফ দেই। এবং সে আমাকে অনুকরণ করে ব্যাঙের মতো লাফানো শুরু করে। আমি আমার গ্লভস দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলাম। ওই সময় স্টাম্প মাইক ছিলো। আম্পায়ার ডেভিড শেফার্ড জাভেদের কাছে আসে এবং বলে যদি এটা তুমি আরেকবার করো তাহলে আমি তোমাকে মাঠের বাইরে বের করে দিবো।’

সাবেক এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অবশ্য শেষে বলেন একবার মিয়াঁদাদ তাকে তার বাসায় ডিনারে আমন্ত্রণ জানায়। এটা সেই ঘটনার খুব বেশি সময় পরে না। মোরে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমি পাকিস্তান গিয়েছিলাম। জাভেদ আমাকে ফোন করে এবং আমি তার বাসায় ডিনারে গিয়েছিলাম। ভোর ৪ টা পর্যন্ত আমরা বেশ ভালো সময় পার করি। খুব হাসাহাসি করি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link