পার্টটাইমারে টালমাটাল

টেস্ট ক্রিকেটকে আমরা এক শব্দে ব্যাখ্যা করি ‘পরীক্ষা’ বলে। ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মিলে অমরত্ম। একজন ক্রিকেটার হয়ে উঠেন ক্রিকেটীয় ইতিহাসের কোনো অধ্যায়। তবে টেস্ট ক্রিকেটে তুলণামূলকভাবে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় সফরকারী দলগুলোকে। কেননা নিজেদের কন্ডিশনে সবসময়ই বাড়তি সুবিধা পায় স্বাগতিক দলগুলো।

তাছাড়া স্বাগতিক দলগুলো পিচ তৈরি করে থাকে নিজেদের শক্তিমত্তার উপর ভিত্তি করে। ইউরোপ,অস্ট্রেলিয়ার সবুজ পিচ গুলোতে দেখা যায় পেসারদের একতরফা দাপট। আবার উপমহাদেশে খেলা হলেই উল্টে যায় পাশার দান। এখানকার দল গুলো পিচ তৈরি করে তাঁদের ঘূর্নি বোলারদের জন্য।

সেই স্পিনারদের ঘূর্নিতে টালমাটাল হয় সফরকারী দলগুলো। এখন অবশ্য সেই দিন কিছুটা পাল্টেছে। অস্ট্রেলীয়া, ইংল্যান্ডের ব্যাটাররাও এখন স্পিন খেলতে জানেন। কিংবা উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানরাও পেসারদের বিপক্ষে ব্যাট ধরতে জানেন শক্ত হাতেই।

তবে সে ধারা যে একেবারে উঠে গেছে তা বলাও ঠিক হবেনা। তবে প্রতিপক্ষের জন্যে মরণফাঁদ পাততে গিয়ে অনেক সময় নিজেরাও সেই ফাঁদে পাঁ দিয়ে ফেলে দলগুলো। যেমন ভারত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের জন্য তৈরি করেছে পুরোপুরি এক স্পিনিং ট্র্যাক।

সেখানে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১১২ রানেই অল আউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। তবে ভারত ও সুবিধা করতে পারেনি তাঁদের নিজেদের তৈরি স্পিনিং উইকেটে। তাঁরাও প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৪৫ রানেই অল আউট হয়ে যায়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইন আপ প্রায় একাই ধসিয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট। ইংল্যান্ডের পার্টটাইম এই বোলার স্পিনিং ট্র্যাকের সুবিধা নিয়ে ভেঙে দিলেন ভারতের ব্যাটিং স্তম্ভ। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৮ রান দিয়েই তুলে নেন ৫ উইকেট। ভারত নিশ্চই নিজেদের ফাঁদে মারা পড়ে বেশ অসহায় হয়ে গিয়েছিল।

তবে ভারতের এই অসহায়ত্ব এই প্রথম নয়। ২০০৪ সালেও একবার অজিদের বিপক্ষে একই ফাঁদে পড়েছিল ভারত। সেবার অজি পার্টটাইমার মাইকেল ক্লার্ক নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। মাইকেল ক্লার্ক তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে মোট ৩১ উইকেট পেয়েছিলেন। যার প্রায় অর্ধেক, ১৪ টি উইকেটই ভারতের বিপক্ষে ।

জো রুটেরও মোট উইকেট সংখ্যা ৩৭ যার ৯ টিই ভারতের বিপক্ষে। ফলে ভারতের এই ভাঙা উইকেট অনেক ব্যাটসম্যানদেরও বানিয়ে দেয় দুর্ব্যেধ্য স্পিনার। সেই স্পিনারদের ঘুর্নিতেই ঘুরপাক খায় ভারতের ব্যাটাররা।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে, ঐতিহাসিক গ্যাবা টেস্ট জয়ের পর দেশে ফিরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট হেরে যাওয়াটা অপ্রত্যাশিতই ছিল ভারতের জন্য। সেজন্য পরের টেস্টগুলো থেকে নড়েচড়ে বসেছে ভারত। পরিকল্পনা একটাই, আর প্রতিপক্ষকে চড়ে বসতে দেওয়া যাবে না।

সেজন্যেই আগের টেস্টের উইকেট ছিল স্পিন সহায়ক। আর এবারে আহমেদাবাদে বানানো হয়েছে রীতিমত র‌্যাংক টার্নার। আর দিবারাত্রীর ম্যাচ বলেই কি না – তাঁর প্রভাবটা বেশি। দু’দলের কেউই সামান্য ১৫০-রানের কোটাও পূরণ করতে পারেনি। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ১১২, ভারত প্রথম ইনিংসে করে ১৩৫। দ্বিতীয় ইনিংসের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ইংল্যান্ড মাত্র ৮১ রানে অলআউট হয়, বুঝুন অবস্থা!

হবে নাই বা কেন, রুটের চেয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিন বা অক্ষর প্যাটেলদের দুরন্ত হয়ে ওঠাটা এই উইকেটে আরো বেশি স্বাভাবিক!

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link