লাল রঙে সাজানো ছবির মতো শহর। মার্সেই নদীর ধারে সবুজ ঘাসের মখমলের ওপর গান গাইছে হাজার হাজার তরুণ তরুনী। উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের এই লিভারপুল শহরে ১৯৬০ সালে জন্ম নিয়েছিল ‘দ্য বিটলস’। জন লেননের শহরে এখন ফুলের মৌসুম। হালকা বৃষ্টির সাথে বাহারি ফুল আর কেক বেকিংয়ের গন্ধ লেগে রয়েছে শহরজুড়ে। বিটলসের বিখ্যাত লাইনগুলো গুনগুন করে ভাসছে লিভারপুলের হাওয়ায়।
১৯৮৯-৯০ এর দিকে শেষ প্রিমিয়ার লিগ ঢুকেছিল জন লেনন ইণ্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট দিয়ে। ২০০৫ সালে শেষবার ইউরোপ সেরার খেতাব – ব্যস! লেননের ব্রোকেন হার্টেড পিপলের মতোই যেন হাজার হাজার লিভারপুলের রঙিন সমর্থক অসহায় হয়ে চেয়ে রইল ট্রফির আকাশে। রাফায়েল বেনিতেজের পর রয় হজসন থেকে ব্রেন্ডন রজার্স – লেননের শহরে বড় সাফল্য আনতে পারলেন না কেউ-ই।
২০১৫ সালে এলেন এক জার্মান শিল্পী। সচরাচর কোনো জার্মান কোচ এলে ব্রিটিশরা তাকে মেনে নিতে একটু দ্বিধাগ্রস্ত হন। কিন্তু বরুশিয়া থেকে আসা এই মানুষটা অ্যানফিল্ডে পা দিতেই যেন উশকে দিলেন জেরার্ড-টরেস-ওয়েনদের স্মৃতি।
কী দিলেন এই মানুষটা লাল গ্যালারিকে? হয়ত এই প্রথম বহুবছর পর লিভারপুল তাদের মূল সুরে পা মেলালো। হয়ত এই জার্মান এসে হাজার হাজার সমর্থকের কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন।’
প্রতিটা ম্যাচের পর প্রতিপক্ষ কোচের পিঠ চাপড়ে দিলেন। দলে যে খেলোয়াড় মানসিক ভাবে দূর্বল তাকে দুপায়ে দাঁড় করালেন জার্মান মানসিকতায়। নিজের কোচিং ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠে হেরে যাবার পরেও সমর্থকদের চোখে খলনায়ক হয়ে ওঠা ক্যারিয়াসের পিঠ চাপড়ে দিলেন। সেমিফাইনাল ফার্স্ট লেগে লিওনেল মেসির অবিশ্বাস্য গোলের পর অকপটে বলে দিলেন, ‘আই এঞ্জয়েড দ্য গোল!’
জার্মান ইতিহাসে ইউর্গেন ক্লপ একজনই হন। তিনি কোনো উদ্ধত জার্মান কোচ বা খেলোয়াড় নন, একজন জীবনের গান গাওয়ার শান্ত গায়ক যার আপার অকটেভের সুর লেগে আছে লিভারপুলের সাজানো শহরজুড়ে। সেই ১৯৬০ সালের জন লেননের মতোই যেন এতবছর পর আবার জীবনের গানের ডালি নিয়ে তিনি আসলেন।
পল ম্যাকার্টনি-রংগো স্টার্স-দের সাথে নিয়ে অ্যানফিল্ডের জন লেনন গান ধরলেন। লিভারপুলের ট্রফি ক্যাবিনেটে এল মহামূল্যবান চ্যাম্পিয়নস লিগ। ৩০ বছর পর হাতে এলো ইংলিশ লিগ সেরার ট্রফি। অপেক্ষার অবসানে বেজে উঠলো – ‘And when the brokenhearted people/ Living in the world agree/ There will be an answer, let it be…’