অভিষেক দিয়েই ৬৬ লক্ষ টাকার বাজি জয়

১৪ বছর আগের কথা। ১১ বছরের এক কিশোরের ওপর টিম পাইপার নামক এক ব্যক্তি বাজি ধরলেন যে এই কিশোর একদিন ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলবে। লর্ডসে জেমস অ্যান্ডারসনের কাছ থেকে ইংল্যান্ডের ৭১১ নম্বর টেস্ট ক্যাপ পাবার পরেই ১৪ বছর আগের সেই বাজি জিতে গেলেন টিম পাইপার।

জশুয়া টংয়ের ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হবার মাধ্যমে বাজির ৫০ হাজার ডলার অর্থ প্রাপ্তিও নিশ্চিত হয়েছে টংয়ের বাবার বন্ধু টিম পাইপারের।

অনেকটা গল্পের মতই শোনাবে ঘটনাটা। ২০০৯ সালে টিম পাইপার জশুয়া টংকে নিয়ে অনুমান করেছিলেন এই ছেলে একদিন ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলবে। ১০০ পাউন্ড বাজি ধরলেন টংয়ের ওপর। বাজির দর তখন ছিল ৫০০-১। সেই ১০০ পাউন্ড বাজি ধরে ১৪ বছর পর পাইপার পেলেন ৫০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৬৬ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা।

ছয় বছর বয়স থেকেই জুশুয়া টং করতেন স্পিন বোলিং। বার্মিংহামের স্থানীয় একটি ক্লাবে একসাথে খেলতেন জশুয়া টংয়ের বাবা ফিল টং ও পাইপার। পাইপার নিজেও স্পিনার ছিলেন। জশুয়া টং একদম ছোটোবেলা থেকেই লেগ স্পিনে বেশ পাঁকা ছিলেন।

বন্ধুর ছেলের এমন প্রতিভা দেখেই পাইপার বাজি ধরতে চাইলেন জশুয়ার ওপর। জশুয়ার বয়স যখন ছয় বছর তখনই তাকে নিয়ে বাজি ধরতে চেয়েছিলেন পাইপার। কিন্তু কোনো গ্যাম্বলিং ফার্মকে রাজি করাতে পারেননি পাইপার।

এরপর এক পর্যায়ে উস্টারশায়ার ক্লাবে নাম লেখান জশুয়া টং। সেখানে গিয়ে লেগ স্পিনার থেকে হয়ে গেলেন পেসার। স্পিন ছেড়ে পেসার হয়ে যায় টংকে নিয়েও বিশ্বাসের কমতি ছিল না পাইপারের।

টংয়ের বয়স যখন ১১ তখন ‘কোরাল’ নামক একটি গ্যাম্বলিং ফার্মকে রাজি করাতে সক্ষম হন পাইপার। ৫০০-১ দরে ১০০ ডলার বাজি ধরলেন যে একটি জশুয়া টং ‘থ্রি লায়ন্স’দের হয়ে টেস্ট খেলবে।

এরপর দীর্ঘ ১৪ বছরের অপেক্ষা। ক্যারিয়ারে অনেক চড়াই উতরাই পেড়িয়েছেন জশুয়া টং। পারফরম্যান্স ভালো থাকলেও ইনজুরি যেন পিছুই ছাড়ছিল না তাঁর। কাঁধের ইনজুরিতে তো একটা পর্যায়ে ভাবলেন খেলাই ছেড়ে দেবেন।

তবে, ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরতে শুরু করলো অনেকটা হঠাৎ করেই। ইংল্যান্ড লায়ন্সের হয়ে শ্রীলঙ্কা ‘এ’’ দলের বিপক্ষে নেন আট উইকেট। সেখান থেকেই ডাক পান আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের টেস্ট দলে।

অনুশীলনে তাকে দেখে মুগ্ধ হলেন ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। দলের চোট সমস্যায় অভিষেক করিয়ে দিলেন ২৫ বছর বয়সী এই পেসারকে। জেমস অ্যান্ডারসনের কাছ থেকে স্বপ্নের টেস্ট ক্যাপ পাবার সাথে জীবনের অনেক বড় একটা অপেক্ষার অবসানও ঘটালেন টং।

অপেক্ষার অবসান হয়েছে টিম পাইপারেরও। ১৪ বছর ধরে যে বিশ্বাস তিনি পুষে রেখেছিলেন আজ তা বাস্তব হতে দেখলেন। বিবিসি স্পোর্টসকে পাইপার বলেন, ‘আমি ওই রসিদ এত বছর ধরে আমার আলমারিতে রেখে দিয়েছি। ভেবেছি, ১০০ পাউন্ড খরচ করাটা ভুল হয়নি। যদি শেষ পর্যন্ত সে না-ই পারে, তবু আমরা গর্বিত তাঁকে নিয়ে। টেস্ট দলে তার সুযোগ পাওয়াটা আসলে একটা বোনাস।’

লর্ডসে টংয়ের অভিষেক টেস্ট দেখতে আসছেন পাইপার। শুধু ৫০ হাজার পাউন্ড অর্থ প্রাপ্তিই নয়, নিজের বিশ্বাসকে বাস্তবায়ন হতে দেখার চেয়ে তৃপ্তির কিছু নেই নি:সন্দেহে। বাজির পুরো অর্থ হাতে পাবার পর টংয়ের পুরো পরিবারকে দাওয়াত করে খাওয়াবেন বলেও জানিয়েছেন পাইপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link