ভারত ‘এ’ দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় জুরেলের পারফরম্যান্স আকর্ষণীয়। প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া খেলা জুরেল যেন এই কন্ডিশনের সাথে বেশ সুপরিচিত। বাউন্সি পিচ যেন তার বন্ধু। কাটস, হুকস কিংবা ব্যাক ফুট পাঞ্চ সব যেন তার শিল্প, সূক্ষ্ম তুলির ছোঁয়া।
কোকাবোরা বলের ভেলকিও বিচলিত করতে পারেনি তাকে। যে সিরিজে রান তো দূর ক্রিজে টিকে থাকাও দুস্কর, সেখানেই নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন তিনি। দুই ইনিংসে করেছেন যথাক্রমে ৮০ ও ৬৮।
বলে রাখা ভালো, দ্য ওয়াল খ্যাত টেস্ট স্পেশালিষ্ট বা ধৈর্য্যর প্রতীক চেতেশ্বর পূজারা অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম শতকের জন্য চাতক পাখির মত চেয়েছিলেন বহুদিন। এমনকি এই যুগের অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটার জো রুটের অস্ট্রেলিয়ায় সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষাও ছিল বেশ দীর্ঘ।
রোহিত শর্মা নেই প্রথম টেস্টে। শুভমান গিল ইনজুরিতে। বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল নেই ছন্দে। তাই জুরেল যে প্রথম টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন তা নিয়ে আপাতত সন্দেহের জায়গা নেই। এভাবেই ভারত দলে জায়গা হচ্ছে জুরলের, যদিও দলের সাথে আছে অনেকদিন থেকেই। মনে হচ্ছে ভারতীয় দলের এই হযবরল অবস্থারই অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।
যেভাবে তিনি ব্যাট করেছেন মনে হচ্ছে যেন তিনি বহু বছরের অভিজ্ঞ কোন ব্যাটার। ধারাভাষ্যঘর থেকে তো নাসের হুসেইন, শচীন টেন্ডুলকার, ভি ভি এস লক্ষ্মণরা বারংবার তার ঠান্ডা মাথার বিচক্ষণতা, ফুটওর্য়াক, অটল ইচ্ছাশক্তির প্রশংসা করছিলেন। জুরেলের মাঝে নেই অতিরিক্ত উত্তেজনা বা নার্ভাসনেস। সে যেন স্থিরমানব।
তবে শুরুটা এতও সহজ ছিল না তার। মাত্র ৫ বছর বয়সেই বাসের চাকার নিচে পরে তার বাম পা-টি। পরে প্লাস্টিক সার্জারি ও করতে হয় তাকে। কড়া শাসনে বড় হওয়া আর্মির এই সন্তান লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতেন ক্রিকেট।
একদিন তার বাবা পত্রিকা পড়ছিলেন। হঠাৎ তাকে ডেকে বলেন – ‘তোমার নামেই একজন বেশ ভালো ক্রিকেট খেলে নাকি, অনেক রান করেছে জানো!’ সেদিন বেশ ভয় পেয়েছিলেন জুরেল, সেই ঘটনাই শেয়ার করেন সম্প্রতি।
এরপর তার বাবা লোন নিয়ে ২০০০ টাকার ব্যাট কিনে দেয় তাকে। মায়ের গহনা বন্দক রেখে কিনেন ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম। মাত্র ১৩ বছর থেকেই আগ্রা থেকে নয়ডাতে আসতেন ক্রিকেট একাডেমিতে। তার কোচ ফুল চান্দ জানান তাকে বল করতে করতে কাধ ও কনুই ব্যাথা হয়ে যেত তাঁর।
ইংল্যান্ড সিরিজের আগে রাজস্থান রয়্যালস একাডেমিতে দিনে ১৪০ ওভার ব্যাট করতেন তিনি। তার কৌশলটি এমনভাবে গড়ে উঠেছে যেন পরিস্থিতির প্রতিকূলতায় টিকে থাকতে পারে। একদম ক্লাসিকাল দ্রাবিড়ের মতো নয়, তবে চলনশীল। হাফ ফ্রন্ট-ফুট প্রেস এবংছোট ব্যাক-ফুট শাফল।
প্রাইম টাইমের আজিঙ্কা রাহানের কথা মনে করিয়ে দেয়। মার্ক উডের ঘন্টায় ৯১ মাইলের বলটা আপার কাটে বাউন্ডারির বাইরে পাঠানো দিয়ে তার টেস্টে চার-ছক্কার যাত্রা শুরু। এমন ব্যাটারই তো চাই অস্ট্রেলিয়ার মত জায়গায়।
বাউন্স দেখে, শুনে বুঝে মারতে বা ছাড়তে পটু তিনি। তার অবিচলিত মেজাজ তার টেকনিককে আরো টেকসই করেছে। ইংল্যান্ড সিরিজে বেশ কয়েকবার ভারত কে কলাপ্স থেকে বাচিঁয়েছেন তিনি।
সাবেক ভারতীয় কোচ রবী শাস্ত্রী আইসিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জুরেলের ঠাণ্ডা মেজাজ, চাপের সময়ে তার মানসিকতা ও দৃৎ মনোবল আমাকে মুগ্ধ করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘চাপে পরলে সব খেলোয়াড়দের স্ট্রাগল করতে দেখা যায়, স্নায়ুযুদ্ধে ভেঙে পরতে দেখা যায়। তবে এই ছেলেটা ব্যতিক্রম। সে নি:সন্দেহে ভালো ব্যাটার হতে পারবে।’
ঋষাভ পান্ত ফিরে আসলেই জায়গা হারান জুরেল। তবে দমে যান নি তিনি, আরো কঠোর পরিশ্রম করে ফিরে এসেছেন তিনি। আবারও খুলেছে জাতীয় দলের দরজা। দেখা যাক আবারও রূপকথা লিখতে পারেন কি না ধ্রুব জুরেল।