কামিন্দু মেন্ডিস, এক লংকান টেস্ট বিস্ময়

কামিন্দু মেন্ডিস, নামটা ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিত হয় ২০১৬ সালে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। বিশেষত্ব ছিল দু'হাতেই ঘূর্ণি বল ছোড়ার।

কামিন্দু মেন্ডিস, নামটা ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিত হয় ২০১৬ সালে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। বিশেষত্ব ছিল দু’হাতেই ঘূর্ণি বল ছোড়ার। তবে কালক্রমে লংকা শিবিরে পরিচিতি পাচ্ছেন একজন ব্যাটার হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আলো ছড়াচ্ছেন একজন টেস্ট ব্যাটার হিসেবে।

সেই ১৬ সালের পর দু’বছর কেটে যায়। ২০১৮ সালে অক্টোবর মাসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাঁর অভিষেক ঘটে। তাতেই করেন বাজিমাত। দু’হাতেই বল ঘুরিয়ে উইকেট নেন জেসন রয় ও বেন স্টোকস এর মতো রাঘব বোয়ালের। ব্যাট হাতে করেন ১৪ বলে মূল্যবান ২৪টি রান। ক্রিকেট পাড়া ফলোতো এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে এক অভিনব তারকার আগমনী বার্তা পেয়ে যায়।

এরপর ১৯ সালের মার্চে খেলে ফেলেন প্রথম ওয়ানডে। সেখানে যদিও খুব একটা নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাননি। মাত্র পাঁচটি বল খেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। এরপরের দুই বছরে আশ্চর্যজনকভাবে এক রকম হারিয়েই যান মেন্ডিস।

এরপর ২০২২ সালে করোনা পরবর্তী সময়ে ঘটান তাঁর রাজকীয় প্রত্যাবর্তন। তবে এবার আর সাদা বলের ক্রিকেটে না, অজিদের সাথে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে। প্রথম টেস্টে তাঁরা বেশ শোচনীয় ভাবেই ১০ উইকেটে পরাজিত হন। তবে ফিরে আসেন ২য় টেস্টে। সে ম্যাচেই নির্ভরযোগ্য ধানাঞ্জায়া সিলভার বদলে অভিষেক ঘটে কামিন্দুর।

৭ নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের সাথে গড়ে তোলেন ১৩৩ রানের অপ্রতিরোধ্য জুটি। যার পিঠে চড়ে লংকানরা অজিদের করা ৩৬৪ রান থেকে লিড গ্রহন করে। অভিষেকে কামিন্স, স্টার্ক বা নাথান লায়নদের বিরুদ্ধে করা ৬১ রানের ইনিংসই ক্রিকেট বিশ্বে তাঁর ফিরে আসবার বার্তা দেয়। তবে এবার আর স্বল্প সময়ের জন্য না।

এর ঠিক পরপরই লংকা দল বাংলাদেশ সফর করে। প্রথম টেস্ট সিলেটে। ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা। সেই অবস্থায় ব্যাট করতে নামেন কামিন্দু। ধানাঞ্জায়া ডি সিলভার সাথে এক অনবদ্য ২০২ রানের জুটি গড়ে তোলেন। দেখা পান প্রথম শতকের।

১২৭ বলে ১০২ রানে তাঁর ইনিংস থামে। সেই টেস্টে পরবর্তীতে ২৮০ রানে ইনিংস শেষ করেন লংকানরা। পরের ইনিংসেও ব্যাটার কামিন্দু নিজের ঝলক দেখান। ২৩৭ বলে করেন ১৬৪ টি রান। সেই টেস্ট  শ্রীলঙ্কা ৩২৮ রানে জয়লাভ করে। যেখানে  বোলার মেন্ডিস বল করেন মাত্র ৭ ওভার।

দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি এবং ৭ ওভার বল করে একমাত্র ক্রিকেটার তিনি। পরের টেস্টটা হয় চট্টগ্রামে। যেখানে এক ইনিংস ব্যাট করে  অপরাজিত থেকেছেন ৯২ রানে। ৪ ইনিংস খেলে সর্বোচ্চ ৩৬৭ রানে সিরিজ শেষ করেন কামিন্দু। সম্প্রতি শেষ হওয়া ইংল্যান্ড সফরেও ব্যাট হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। ওল্ড ট্রাফোর্ডে করেন ১১৩। খেলে ফেলেন ক্রিকেটীয় তীর্থস্থান লর্ডসে ৭৪ এবং ওভালে ৬৪ রানের অনবদ্য সব ইনিংস।

ইতোমধ্যে কামিন্দু ৬টি আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলে ফেলেছেন। কখনোই প্রথম ৬ নম্বরে ব্যাট করেননি। তারপরেও ৭৭.২২ গড়ে তুলেছেন ৬৯৫ রান। এখনও খেলছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে কামিন্দুর প্রথম শ্রেণি গড় সবচেয়ে বেশি। ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ নাগাদ প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৬৩.৩০ গড়ে ৪৩৩১ রান রয়েছে কামিন্দুর দখলে। যা সত্যিই অভাবনীয়।

আসছে নিউজিল্যান্ড সফরে প্রথম তাঁকে ৬ নম্বরে ব্যাট করতে দেখা যাবে। তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। কামিন্দু কি কখনও ব্যাটিং এর সবচেয়ে দরকারি ৩ নম্বরে ব্যাট করতে পারবেন ? প্রশ্ন আসাটাও যুক্তিযুক্ত।

বর্তমানে শ্রীলঙ্কার টেস্ট দলে তিন নম্বর স্থান নিয়ে রয়েছে সংশয়। ২০১৯ সালের পর থেকে দীনেশ চান্দিমাল তিন নম্বরে খেলছেন না। এছাড়া ৩ নম্বরে তাঁর গড় মাত্র ১৯.৬২। অন্যদিকে, ঘরোয়া লীগে মেন্ডিস ব্যাট করেন ৪ নম্বরে। আবার শ্রীলংকা এ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলেছেন ৫ নম্বরে। সেক্ষেত্রে লংকা দল তাঁকে ৩ নম্বরের একজন যোগ্য দাবীদার হিসেবে বিবেচনা করতেই পারে।

দু’হাতে বল ঘোরানোর দক্ষতা সমেত কামিন্দু মেন্ডিস যেন এক অনন্য প্রতিভা। যা ব্যাট হাতে আরও জোড়ালো হয়ে উঠেছে। বিশেষত টেস্টে। ক্যারিয়ার তো সবেমাত্র শুরু। খেলেছেন মাত্র ৬টি টেস্ট। তবে এই ধারাবাহীকতায় খেলে গেলে নিঃসন্দেহে লংকা টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বিস্ময় হয়ে উঠবেন এই ‘ব্যাটিং দক্ষতার বোলার’ বা ‘বোলিং দক্ষতার ব্যাটার’ কোনটা বলবেন? এটা পাঠকদের উপর ছেড়ে দেই বরং।

Share via
Copy link