টি-টোয়েন্টির নন কেন উইলিয়ামসন!

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুসরণ করে এমন যে কারো কাছে একটি পরিচিত শব্দ ‘ইম্প্যাক্ট’। আধুনিক টি-টোয়েন্টির সাথে তাল মেলানোর লক্ষ্যে যে পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছে, সেটির অন্যতম ভিত্তি ইম্প্যাক্টফুল ক্রিকেটার খোঁজা। টাইগারদের নতুন টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরামও পারফরম্যান্সের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ইম্প্যাক্টকে। তাইতো বিশ্বকাপের স্কোয়াডে পারফর্মারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে কার্যকরী ক্রিকেটারদের।

শুধু বাংলাদেশ নয়, ইম্প্যাক্টফুল ক্রিকেটারের গুরুত্ব জানা বিশ্বের অন্য দলগুলোরও। আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত স্কোয়াড লক্ষ্য করলেই ব্যাপারটি বোঝা যায়। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের সঙ্গে মানানসই ক্রিকেটারের উপরই ভরসা রাখছে সবাই; দ্রুত রান তুলতে পারে এমন ব্যাটার কিংবা কব্জির মোচড়ে ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে পারে এমন বোলাররাই যেকোনো দলের পরিকল্পনার মূল অংশ।

কিন্তু ব্যতিক্রম এক জায়গায়, নিউজিল্যান্ডের স্কোয়াডে। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে নিয়ে বেশ দ্বিধাদ্বন্দে আছে তারা। কেননা অন্য দুই ফরম্যাটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করলেও বিশ ওভারের খেলায় অনেকটাই বিবর্ণ উইলিয়ামসন। তাঁর খেলার ধরণ, অ্যাপ্রোচ, শক্তি আর দুর্বলতা – প্রায় সবকিছুই টি-টোয়েন্টির সাথে বেমানান। খুব বেশি ব্যাখ্যায় যাওয়ার প্রয়োজন হয় না, এই ডানহাতির স্ট্রাইক রেটের দিকে তাকালেই বোঝা যায় সেটা।

৭৭ ম্যাচের ক্যারিয়ারে কেন উইলিয়ামসনের স্ট্রাইক রেট ১২৩.৮৮। বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের তুলনায় হয়তো এমন স্ট্রাইক রেট যথেষ্ট ভাল, কিন্তু উইলিয়ামসন তো একজন ব্ল্যাকক্যাপস সদস্য, তুলনাটা তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের সাথে যায় না। নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দলের টপ অর্ডারে সাধারণত ব্যাট করেন মার্টিন গাপটিল, ডেভন কনওয়ে, গ্লেন ফিলিপসরা।

এদের মধ্যে মার্টিন গাপটিল ব্যাট করেন ১৩৫.৮১ স্ট্রাইক রেটে, ডেভন কনওয়ের ক্ষেত্রে সেটি ১৩৮.২৮। এছাড়া তরুণ গ্লেন ফিলিপসের স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৪২; অন্যদিকে দীর্ঘ সময় জাতীয় দলের বাইরে থাকা কলিন মুনরোর স্ট্রাইক রেট ছাড়িয়ে গিয়েছে সবাইকে, এই বিধ্বংসী ব্যাটার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রান করেছেন ১৫৬.৪৪ স্ট্রাইক রেটে।

তুলনার মাপকাঠিতে এটা অন্তত স্পষ্ট যে, কেন উইলিয়ামসন যত বল খেলেন সেগুলো গাপটিল, কনওয়েরা খেলতে পারলে আরো বেশি রান করতে পারতো নিউজিল্যান্ড। গানিতিক হিসেব করলে, কিউই অধিনায়ক প্রতি বলে গাপটিলের চেয়ে ০.১২; কনওয়ের চেয়ে ০.১৬ এবং ফিলিপসের চেয়ে ০.১৯ রান কম করে থাকেন।

 

এমন পরিসংখ্যান তো পুরো ক্যারিয়ারের, টি-টোয়েন্টিতে কেন উইলিয়ামসনের সাম্প্রতিক ফর্ম আরো বেশি চিন্তিত করবে নিউজিল্যান্ডের টিম ম্যানেজমেন্টকে। এই যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে উইলিয়ামসন ২৭ বলে ২৪ রান করেছেন, অথচ তাঁর সাথে একই সময়ে ব্যাট করা গ্লেন ফিলিপস ২৬ বলে করেছেন ৪২ রান।

অবশ্য ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন এমনই, তিনি যতটা হার্ড হিটার তারচেয়ে বেশি ক্ল্যাসিক্যাল ঘরানার। তাই তিনি চাইলে শুরু থেকেই হিট করতে পারেন না, তাঁর সময় প্রয়োজন হয়। ক্রিজে সেট হয়ে ওঠার পর তিনি দ্রুত রান করতে পারেন, উদাহরণস্বরূপ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা প্রথম টি-টোয়েন্টির কথা বলা যায়। সে ম্যাচে প্রথম ২১ বলে মাত্র ২৩ রান করেছিলেন উইলিয়ামসন, এরপর হাত খুলে খেলেছেন। আউট হওয়ার আগে করেছেন ৩৩ বলে ৪৭। যেকোনো বিবেচনায় চমৎকার ইনিংস, কিন্তু তিনি যদি ২১-২২ বলের মাথায় আউট হয়ে যেতেন?

সমস্যাটা আসলে এখানেই, অ্যাংকরিংয়ের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে রয়ে-সয়ে শুরু করলে বিপদে পড়ে যায় দল। কেন উইলিয়ামসন ঠিক সেটাই করছেন। নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডারে রয়েছে ড্যারি মিচেল, জিমি নিশামের মত দারুণ সব টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান; তারা যত বেশি বল খেলার সুযোগ পাবেন তত বড় সংগ্রহ গড়তে পারবে কিউইরা। কিন্তু অধিনায়কের রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ের কারণে তেমনটা কমই ঘটছে।

আর তাই বিশ্বকাপে ভাল কিছু করতে চাইলে দ্রুত এমন সমস্যার সমাধান করতে হবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের নীতিনির্ধারকদের। কেন উইলিয়ামসন চাইলে নিজের সাথে বেমানান টি-টোয়েন্টি ছাড়তে পারেন কিংবা টি-টোয়েন্টির সাথে চলনসই অ্যাপ্রোচে ব্যাটিং করার চেষ্টা করতে পারেন। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটলে দলের স্বার্থে অধিনায়ককে পেছনে রেখেই হয়তো এগিয়ে যাবে নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link