হারিকেন ও বুম বুম

কপিল দেবকে নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে কয়েকজন মন্তব্য করেছিলেন যে ভারতের চিরশ্রেষ্ঠ পেসার জাসপ্রিত বুমরাহকে বলা যেতে পারে। এক তো তার গড় অনেক ভাল। তার ওপর বুমরা বেশি জোরে বল করেন বলে তার ওয়ার্ক লোড বেশি।

ভাবলাম একবার কপিল এবং বুমরাহর আপেল টু আপেল তুলনা করে দেখা যাক। অর্থাৎ যতগুলো টেস্ট বুমরা এখনও খেলেছেন, ততগুলো টেস্ট খেলে কপিল কোন জায়গায় ছিলেন?

প্রথম ৩০ টেস্টে কপিল ২৬.১ গড়ে ১২৪ উইকেট নেন। বুমরা ২১.৯৯ গড়ে ১২৮ উইকেট। উইকেট সংখ্যায় না হলেও গড়ে বুমরাহ বেশ কিছুটা এগিয়ে। আরও একটু গভীরে ঢুকলাম। দুজনের উইকেটের মান কেমন? অর্থাৎ ভাল মানের ব্যাটসম্যানদের কে কতবার আউট করেছিলেন এই সময়ে?

কপিল ৫০ বা তার বেশি গড়ের ব্যাটসম্যানদের আউট করেছিলেন মোট সাতবার (অ্যালান বোর্ডার ৪ বার, জাভেদ মিয়াঁদাদ ৩ বার)। বুমরাহর ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ৬ (এবি ডি ভিলিয়ার্স ৩, কেন উইলিয়ামসন ২, স্টিভেন স্মিথ ১)। ৪০ থেকে ৫০ গড়ের মধ্যে দুজনের আউট করা ব্যাটসম্যানের সংখ্যা কপিলের ১৫, বুমরাহর ১৩। এখানে কপিল সামান্য এগিয়ে কিন্তু সেই তফাৎ দুজনের বোলিং গড়ের তফাৎকে উপেক্ষা করার পক্ষে যথেষ্ট নয়।

এবার ওয়ার্ক লোড। কপিল দেব এই ৩০টি টেস্ট খেলেছিলেন ২ বছর ৪ মাসে। বছর প্রতি করা বলের সংখ্যা ২৮১৬। বুমরা মোট ৫ বছর সময় নিয়েছেন এই ৩০টি টেস্ট খেলতে। বছর প্রতি বলের সংখ্যা ১২৫৪।

বুমরাহর বলের গতি হয়ত বেশি কিন্তু শুরুর দিকে কপিলের বলও কিরমানিকে মাথার ওপর গ্যাদার করতে দেখা গেছে। এবং এই কটা টেস্টে বুমরার চেয়ে হাজার খানেক বেশি রান করেছিলেন কপিল। দলের সেরা ফিল্ডারও ছিলেন। এবং এইসবের মাঝখানে একবার হাঁটুতে অপারেশন হয়ে গেছে।

এই লেখার বক্তব্য এটা নয় যে বুমরাকেও কপিলকে অনুসরণ করে অতটা লোড নিতে হবে। অবশ্যই না। তাতে আমাদের দেশের এবং তার ক্যারিয়রের যে ক্ষতি হবে তা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। বরং তার রোল মডেল হওয়া উচিৎ হ্যাডলি বা এন্ডারসন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই দুজনের গড়ের ক্রমাগত উন্নতি হয়েছে। তারা দেখিয়েছেন শরীরের ঠিকমত যত্ন নিলে বহু বছর ধরে ম্যাচ জেতানো ফাস্ট বোলিং করা সম্ভব।

তবে আধুনিক ক্রিকেট প্রেমীরা সঙ্গে এটাও মনে রাখবেন যে কপিলদেব নামের ক্রিকেটারটিকে এমনি এমনি সুপারম্যানের লেবেল দেয়নি তাদের আগেকার প্রজন্ম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link